আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন
তীব্র হচ্ছে ইরান -ইসরাইল যুদ্ধ। ইরানের আক্রমণ এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত কয়েক সপ্তাহে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক আক্রমণ করেছে, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের গভীর চিন্তায় ফেলেছে। ইসরায়েল বর্তমানে কৌশলগত এবং সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, তারা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালোভাবে প্রস্তুত।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে ইরানের পাল্টা আক্রমণের সক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক লড়াইয়ে ইসরায়েল এমন কৌশল অবলম্বন করেছে, যা তেহরানকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ইসরায়েলের সাফল্য এখানেই যে, তারা হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে এবং লেবাননে সরাসরি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের শক্তিকে বেশকিছুটা দুর্বল করতে পেরেছে।
লেবাননে হিজবুল্লাহ ইরানের প্রধান মিত্র শক্তি হিসেবে পরিচিত। ইরানের ওপর আক্রমণ চালালে হিজবুল্লাহ সাধারণত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে থাকে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক আক্রমণে হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ায় সংগঠনটি অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ইসরায়েল লেবাননের ভেতরে আক্রমণ চালিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যা করেছে, যার ফলে এই মিলিশিয়া সংগঠনের পুনরায় শক্তিশালী হয়ে আক্রমণ করার সামর্থ্য কমে এসেছে।
এই দুর্বলতা ইরানকে এককভাবে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করছে। ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দয়ানি সিট্রিনোইজের মতে, ইসরায়েল এখন অনেকটা স্বাধীনভাবে তাদের আক্রমণাত্মক কৌশল সাজাতে পারবে, কারণ হিজবুল্লাহর সরাসরি হুমকি আর তেমনভাবে নেই। ইসরায়েলের সামরিক নেতৃত্ব এখন আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, এবং সেই অনুযায়ী তারা পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েল অনেকদিন ধরেই ইরান-সমর্থিত হুমকি মোকাবেলায় প্রতিরক্ষামূলক কৌশল অবলম্বন করে আসছে। ইরান ও হিজবুল্লাহর ক্রমাগত হুমকির মধ্যে থেকে ইসরায়েল তাদের প্রতিরক্ষা উন্নত করেছে। ড্রোন আক্রমণ থেকে শুরু করে রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—সবকিছুতেই ইসরায়েল তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এই উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে ইসরায়েল অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, বিশেষ করে ইরানের মিসাইল আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে।
গত এপ্রিলে ইরান যখন হুমকি দেয় যে তারা আঞ্চলিকভাবে বড় ধরনের আক্রমণ চালাতে পারে, তখন ইসরায়েল বিশেষ করে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য আক্রমণ মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট সতর্ক ছিল। ইসরায়েল ভেবেছিল, ইরানের হিজবুল্লাহকে দিয়ে আঞ্চলিক আক্রমণের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে বর্তমানে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও সামরিক শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই হুমকি অনেকটাই কমে এসেছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই উত্তপ্ত ছিল। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি এই সংঘাতকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। ইরান তাদের সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ইসরায়েলকে আক্রমণ করেছে, যা প্রতিরক্ষাবিদরা বলছেন, এটি ইরানের হতাশা প্রকাশের একটি ইঙ্গিত। তেহরান তার আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে এবং এই আক্রমণ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের শক্তি প্রদর্শনের একটি চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
তবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এবার আরও কঠোর হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের জবাব ছিল অনেকটাই প্রতীকী, তবে সাম্প্রতিক আক্রমণকে ঘিরে তারা এখন আরও সক্রিয়। ইসরায়েল জানে, এই আক্রমণের পেছনে ইরানের একটি বৃহত্তর কৌশল আছে, এবং তারা সেই কৌশল মোকাবেলায় নতুন নতুন পন্থা গ্রহণ করছে।
ইসরায়েল বর্তমানে আক্রমণাত্মক কৌশলের মাধ্যমে ইরানের ক্ষমতা ও আঞ্চলিক প্রভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা বুঝতে পেরেছে, ইরানকে একা করে ফেলা এবং তাদের প্রধান মিত্র হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে তোলা ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত বিজয় হতে পারে। গত কয়েক বছরে ইসরায়েল বিভিন্ন সময় ইরানের মিসাইল স্থাপনা ও সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছে, যা তাদের সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ।
আরো পড়ুন ‘ইরানকে শীঘ্রই এর ফলাফল ভোগ করতে হবে’, নেতানিয়াহুর কড়া হুঁশিয়ারি
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আরও ব্যাপকভাবে নিজেদের প্রস্তুত করছে। ইসরায়েলি জনমতও এখন সরকারের প্রতিরক্ষা পদক্ষেপের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। অনেক ইসরায়েলি নাগরিক বিশ্বাস করেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
ইরান এখন খুবই সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। তাদের হিজবুল্লাহ মিত্র দুর্বল, এবং আঞ্চলিকভাবে তাদের প্রভাব কমে এসেছে। ইসরায়েলের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে ইরান একপ্রকার প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে চলে গেছে। তবে তেহরান এখনো পুরোপুরি হাল ছাড়েনি। ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখন কৌশলগতভাবে নতুন করে নিজেদের সংগঠিত করছে, এবং তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ইরানের মিসাইল ক্ষমতা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী, এবং তারা বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে মিসাইল ছুঁড়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে ইরান সেই আক্রমণে বড় কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ইরানকে এখন কৌশলগতভাবে খুব সতর্ক থাকতে হবে, কারণ ইসরায়েল যেকোনো সময় তাদের ওপর আরও বড় ধরনের আক্রমণ চালাতে পারে।
ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত এক জটিল আঞ্চলিক বাস্তবতা তুলে ধরছে। ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে ইরানকে এককভাবে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করেছে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি কৌশলগত বিজয়। তবে ইরান এখনো পুরোপুরি পরাজিত হয়নি, এবং তাদের সামরিক শক্তি এবং আঞ্চলিক প্রভাবের কারণে ভবিষ্যতে এই সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে।
ইসরায়েল বর্তমানে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা কৌশল অনুসরণ করছে এবং ইরানের মিসাইল আক্রমণ মোকাবেলায় তারা আরও প্রস্তুত। ইরানের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ তাদের প্রধান মিত্র হিজবুল্লাহ এখন অনেকটাই দুর্বল। ভবিষ্যতে এই সংঘাত কেমন রূপ নেয়, তা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের কৌশলগত পরিকল্পনার ওপর।
আ
Leave a Reply