আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম – বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আসছে, যেখানে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের বিভিন্ন দাবি এবং প্রস্তাব উঠে এসেছে। মূলত বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষার মতো বিষয়গুলো এই সভাগুলোর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এসব মতবিনিময় সভার মাধ্যমে উঠে আসা মতামত ও প্রস্তাবগুলো এখন একত্রিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়করা গত ৮ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ আয়োজন করা। প্রতিটি সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাদের প্রত্যাশা ও সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। সভাগুলোতে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে এবং কীভাবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিসরে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা সম্ভব।
আরও জানুন –ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতা , নিহত এক হাজার ৫৮১ জন, আহত ৩১ হাজারেরও বেশি
জেলা পর্যায়ের মতবিনিময় সভাগুলোতে অন্যতম যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রস্তাব। বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই সভাগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন যে, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে গিয়ে নতুন কিছু তৈরি হোক। বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা মনে করেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে, দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির চাহিদা দেখা দিয়েছে, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরোধিতা করবে এবং দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে।
মতবিনিময় সভাগুলোর বিভিন্ন আলোচনায় রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রস্তাব উঠে এসেছে। সংবিধান সংশোধন, সরকারি কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, টেন্ডারবাজির রাজনীতি বন্ধ করা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার আনার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সভাগুলোতে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা এখন জেলা পর্যায়ের মতামতগুলো একত্রিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছেন। প্রতিবেদনটি তৈরি হলে সমন্বয়করা বসে আলোচনা করবেন কীভাবে আন্দোলন আরও সুসংগঠিত করা যায় এবং কীভাবে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের দিকে যাওয়া সম্ভব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সফর বেশিরভাগ স্থানে সফল হলেও কিছু জায়গায় সংঘাতও দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, বরগুনা, নাটোর, ঝিনাইদহ এবং চাঁদপুরে মতবিনিময় সভার সময় হাতাহাতি এবং হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘাতের মূল কারণ ছিল স্থানীয় সমন্বয়কদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের বাধা। নরসিংদীতে সমন্বয়কদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে সভা স্থগিত করতে হয়। এছাড়া, হবিগঞ্জ এবং বগুড়ায় রাজনৈতিক দলের বাধার কারণে সভা পণ্ড হয়ে যায়।
জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা জানিয়েছেন, সভাগুলোতে বিশেষভাবে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার উঠে এসেছে। খুলনা বিভাগের সভায় উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেছেন, ‘সবাই চাইছে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নতুন কিছু তৈরি হোক।’ এছাড়া, সিলেট বিভাগের সভায় অংশ নেওয়া সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম জানান, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠার প্রত্যাশা বহু মানুষের মধ্যেই আছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব এখন জেলা পর্যায় থেকে উঠে আসা সকল মতামত একত্রিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে। এই প্রতিবেদনটি আন্দোলনের ভবিষ্যত কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে কাজ করবে। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মত, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং তারা একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি চায়, যা দেশের সমৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নের পথে কাজ করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির চাহিদা দেখা দিয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণ একটি পরিবর্তন চায়, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পারে। নেতারা বিশ্বাস করেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হবেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়া মঞ্চ, যা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে স্বচ্ছতা আনার দাবি জানাচ্ছে এবং বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির জন্ম দিতে চেষ্টা করছে। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন আরও ব্যাপকভাবে সংগঠিত হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন পথচলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
Leave a Reply