আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন
সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যাংক হিসাবে সব ধরনের লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এই আদেশ অনুযায়ী, হাবিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং লকারের ব্যবহারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
রবিবার বিএফআইইউ এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেশের বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে, যাতে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, তার স্ত্রী ওয়াজেদ শামসুন্নাহার এবং তাদের সন্তানদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। চিঠিতে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৩০ দিনের জন্য ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হলেও, তদন্তের প্রেক্ষিতে এই সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। বিএফআইইউর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপ সাধারণত মানি লন্ডারিং বা আর্থিক অনিয়মের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে নেওয়া হয়।
সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের এই ব্যাংক হিসাব স্থগিতের সিদ্ধান্তটি আসে তাঁর চাকরির শেষ পর্যায়ে একটি বড় ধরনের পদক্ষেপের পর। গত ৭ আগস্ট তাঁকে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এরপর ১৩ আগস্ট, হাবিবুর রহমানকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়। এমন একটি সময়ে ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পত্তি, আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং আর্থিক লেনদেনের সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার মতো কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিশেষত, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক কার্যক্রম এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি ও আয়ের উৎসে কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেলে তদন্তের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের আর্থিক খাতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। এ ইউনিটটি সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে কাজ করে এবং বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও মানি লন্ডারিং সম্পর্কিত অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা করে।
ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সাধারণত যখন কোনও ব্যক্তির আয় ও ব্যয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্য বা কোনও অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তখন নেওয়া হয়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেনের ওপর নজরদারি চালানো হয়।
আরও জানুন –শফিক রেহমানের আত্মসমর্পণ, মাহমুদুর রহমানের জামিন প্রত্যাখ্যান
এ ধরনের লেনদেন স্থগিতের পর তদন্তের প্রক্রিয়া সাধারণত চলমান থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্থগিতাদেশের সময়সীমা বাড়ানো হয়। যদি প্রাথমিক তদন্তে কোনো অনিয়ম বা অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে।
সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের ব্যাংক হিসাবের স্থগিতাদেশের পরে, এ বিষয়ে কোনো অতিরিক্ত তথ্য বা অনুসন্ধানের ফলাফল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা প্রেরণ করে যে, আইন ও নিয়মের প্রতি সবাইকে দায়িত্বশীল থাকতে হবে এবং সরকারি পদে থেকে আর্থিক অনিয়ম করলে শাস্তি অনিবার্য।
হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে তার দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন সময়ে ডিএমপি বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তাঁর হঠাৎ বদলি এবং এরপর অবসর নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনার ঝড় বইছে।
হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ বা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ব্যাংক হিসাব স্থগিতের সিদ্ধান্ত তার আর্থিক কার্যক্রমের উপর তদন্তের ইঙ্গিত দেয়।
সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। সরকারি পদে থেকে নিজেদের সম্পদ গোপন করা, অনৈতিক উপায়ে অর্থ আয় করা এবং মানি লন্ডারিংয়ে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ নতুন নয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য এই ধরনের তদন্ত ও পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিএফআইইউ ও অন্যান্য সংস্থার কার্যক্রমের লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক খাতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দেশকে মানি লন্ডারিংসহ আর্থিক অপরাধ থেকে রক্ষা করা।
সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের ঘটনাটি এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে। এ ধরনের পদক্ষেপে সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক কার্যক্রম এবং তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেনের প্রতি এমন নজরদারি এবং তদন্ত প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে শুধু আর্থিক খাতেই নয়, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারেও সহায়ক হবে, বিশেষত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে।
Leave a Reply