আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
বর্তমান বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বিশাল পরিমাণ ডাটা ব্যবস্থাপনার চাহিদার মধ্যে, ডাটা সেন্টারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে, দেশের ডাটা সেন্টারগুলোর উন্নয়ন না হলে ডিজিটাল খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে ডাটা সেন্টারের গুরুত্ব
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ই-গভর্নমেন্ট, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, এবং বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত খাতে বিশাল পরিমাণে ডাটা উৎপন্ন হয় এবং সংরক্ষণ প্রয়োজন।
তবে, দেশের বিদ্যমান ডাটা সেন্টারগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সাথে যথেষ্ট পরিমাণে খাপ খাওয়াতে পারছে না।
উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ করা জরুরি। তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের ডাটা সেন্টারগুলো যে পরিমাণ ডাটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে, তা ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে না যদি আমরা এখনই উদ্যোগ না নিই।”
তিনি আরও যোগ করেন যে, দেশের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ ডাটা স্টোরেজের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে চলেছে।
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা
ডিজিটাল সেবার ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে ডাটা সেন্টারের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। দেশের বিভিন্ন খাতে তথ্যপ্রযুক্তির চাহিদা ও ব্যবহার দ্রুত বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন ব্যাংক, টেলিকম, ই-কমার্স এবং অন্যান্য খাতগুলো ডাটা সংগ্রহ এবং ব্যবস্থাপনা করে থাকে, যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে ডাটা সেন্টারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল ব্যবসা ও সেবার পরিধি বাড়ার কারণে ডাটা সেন্টারের উন্নততর কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। নিরাপদ, স্থায়ী এবং কার্যকর ডাটা ম্যানেজমেন্ট দেশের আর্থিক খাত থেকে শুরু করে সামগ্রিক ডিজিটাল অর্থনীতি পর্যন্ত প্রসারিত করতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডাটা সেন্টারের আধুনিকীকরণ কেবল ডাটা ব্যবস্থাপনা নয়, বরং দেশের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তুলবে।
চ্যালেঞ্জ এবং সমাধানের উপায়
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, বিদ্যমান অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ, এবং উচ্চমানের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের অভাব। উপদেষ্টা মনে করেন, ডাটা সেন্টারগুলোতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যেমন ক্লাউড কম্পিউটিং এবং আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস)।
এছাড়াও, ডাটা সেন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং উচ্চ দক্ষতার প্রযুক্তি ব্যবহার করে শক্তি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
ডাটা সেন্টারের জন্য নিরাপত্তাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাইবার হামলা এবং ডাটা লিকের মতো ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ডাটা সেন্টারগুলোতে উন্নত সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এক্ষেত্রে উপদেষ্টা জানান, “নিরাপদ ডাটা ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করতে আমাদের ডাটা সেন্টারগুলোতে অত্যাধুনিক সুরক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন।”
উন্নয়নের সম্ভাবনা
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (PPP) মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
এছাড়া, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেও ডাটা সেন্টারগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি আনা যেতে পারে।
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এর মাধ্যমে দেশের ই-গভর্নমেন্ট, ই-কমার্স এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবা খাতের দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর এখনই সঠিক সময়। ডাটা সেন্টারের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের ডিজিটাল খাতের অগ্রগতি আরও সুসংহত হবে।”
সর্বশেষে তিনি ডাটা সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দেশকে আরও উন্নততর ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
Leave a Reply