আজ মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশন করতে যাচ্ছে সরকার : ঘোষণা আসছে শিগগিরই।
বাংলাদেশ সরকার গণমাধ্যম খাতে সংস্কার আনার জন্য একটি নতুন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
আজ সোমবার ঢাকার সার্কিট হাউস রোডে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন। সভায় সংবাদপত্রের প্রকাশক, সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদকসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পায়।
মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরলেই এ ঘোষণাটি দেওয়া হবে বলে আমাদের ধারণা।” তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে সরকারের গণমাধ্যম খাতে একটি নতুন দিকনির্দেশনা আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
তথ্য উপদেষ্টা তার বক্তব্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা ও এর সীমা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। তবে আমি আপনাদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই—গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সীমা ঠিক কতটুকু হওয়া উচিত? স্বাধীনতা মানে কি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীনতা? গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কী এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত, যেখানে ফ্যাসিস্টদের উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব হয়?”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা আমাদের দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে চাই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকতে হবে, তবে তা যেন দেশের স্বার্থ এবং মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।” তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি গণমাধ্যমের কার্যক্রমে দায়িত্বশীলতা ও দেশের কল্যাণের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভাটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভায় ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের সংবাদমাধ্যমগুলোর সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরে সরকারের গণমাধ্যম সংস্কারের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা গণমাধ্যম খাতের চ্যালেঞ্জগুলো এবং স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যকার ভারসাম্যের বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। তারা গণমাধ্যমের ভূমিকা, স্বাধীনতা, এবং সরকারের প্রতি তাদের দায়িত্ব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
সভায় সাংবাদিকদের আলোচনা থেকে জানা যায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা ইতিবাচক হলেও সতর্কভাবে পরিচালনা করা জরুরি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এমন একটি বিষয়, যা দেশের গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। তবে, একইসাথে ফেক নিউজ, ভুয়া তথ্য এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কতাও প্রয়োজন।
নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে তা হলো, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়ে কোথায় নিয়ন্ত্রণের সীমা টানা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন যে, স্বাধীনতা মানেই যা খুশি তা করা নয়। গণমাধ্যমকে দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে যেন কোনো অপপ্রচার বা ফ্যাসিস্টদের স্বার্থসিদ্ধি না হয়। এই ধরনের নীতিগত আলোচনা সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
গণমাধ্যম খাতের বিভিন্ন জটিলতা দূর করতে এবং স্বাধীন ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর কমিশনের প্রয়োজন রয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষা এবং এর অপব্যবহার রোধ করতে কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং শিগগিরই গণমাধ্যম সংস্কারের নতুন দিকনির্দেশনা প্রকাশিত হবে।
গণমাধ্যম সংস্কারে সরকারের এই নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে সাংবাদিকতা খাতে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার মাধ্যমে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারবে সাংবাদিকরা। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ঘোষণা এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
Leave a Reply