আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন
সম্প্রতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এই অভিযোগটি প্রথমবারের মতো একজন ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে করা হয়, যেখানে তাকে ১০ দিন ধরে ডিবি অফিসে ধরে রেখে নির্যাতন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনা সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রকাশ্যে আসে, যখন অভিযোগকারী নিজেই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, শুধুমাত্র তার ঘটনার উপর নয়, বরং শেখ হাসিনার সরকারকালে সংঘটিত সব গুমের ঘটনার তদন্তের দাবি তোলা হয়েছে।
অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায়, সাভারের পাকিজা মোড়ে ছাত্র আসাহাবউল ইয়ামিনকে গুলি করে এপিসি ভ্যান থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে। ইয়ামিনের মামা এই অভিযোগ করেন, যেখানে ৭৮ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের অন্যতম।
৫ আগস্ট তারিখে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সরকার পতিত হয়। এর পর থেকে, ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মোট ১৮২টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১৬২টি হত্যা মামলা। এসব মামলার বেশিরভাগই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় অংশ নেওয়া বা নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে দাখিল করা অভিযোগের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৩টি অভিযোগ তদন্ত সংস্থার কাছে এবং ৯টি অভিযোগ চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা পড়েছে। এভাবে মোট ২২টি অভিযোগ গঠিত হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হাতে আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলাগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এবং বিভিন্ন পেশার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মিলিয়ে মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দিয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে কী পরিণতি হবে, তা সময়ের সাথে সাথে পরিষ্কার হবে। অভিযোগগুলো যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বাংলাদেশ সরকারের আইনগত প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই সব মামলার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এবং অন্যান্য অভিযোগের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। আইন এবং ন্যায়বিচারের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই সব মামলার একটি সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি। দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং আইনের শাসন রক্ষায় এই সব মামলার সঠিক তদন্ত এবং বিচার অপরিহার্য।
Leave a Reply