আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
অবশেষে আলাদা করা হয়েছে যমজ দুই বোন শিফা ও রিফাকে

অবশেষে আলাদা করা হয়েছে যমজ দুই বোন শিফা ও রিফাকে

অবশেষে আলাদা করা হয়েছে যমজ দুই বোন শিফা ও রিফাকে
যমজ দুই বোন শিফা ও রিফা

অবশেষে আলাদা করা হয়েছে যমজ দুই বোন শিফা ও রিফাকে ।

অবশেষে আলাদা করা হয়েছে যমজ দুই বোন শিফা ও রিফাকে । ৮০ জন চিকিৎসকের ১০ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে পেটে ও বুকে জোড়া লাগানো যমজ দুই বোন শিফা ও রিফাকে। এই জটিল অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয় গত ৭ সেপ্টেম্বর। আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিশু দুটিকে সফলভাবে আলাদা করার ঘোষণা দেয়।

ঢামেক হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম এই ব্যাপারে জানান, রিফা ও শিফাকে আলাদা করার জন্য প্রায় ৮০ জন চিকিৎসক, নার্স এবং মেডিক্যাল স্টাফ একসঙ্গে কাজ করেছেন। এই জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লাগে।

রিফা ও শিফা বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাদশা ও মাহমুদা দম্পতির ১৫ মাস বয়সী দুই কন্যা সন্তান। তাদের আরও একটি মেয়ে আছে, যার বয়স ছয় বছর। বাদশা ঢাকার বড়বাগ এলাকার একটি মেসে থেকে গার্মেন্টসে কাজ করেন। সন্তানদের চিকিৎসার জন্য তিনি ও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছিলেন। অবশেষে ঢামেকে এই বড় অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

অধ্যাপক সাহনুর জানান, গত ১৪ জুন মাহমুদা বুক ও পেট জোড়া লাগানো শিফা ও রিফাকে নিয়ে প্রথম ঢামেকে যোগাযোগ করেন। ১ জুন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মেডিক্যাল বোর্ড তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং পরে সিদ্ধান্ত নেয় যে, কিছু প্রস্তুতি গ্রহণের পরই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব।

অস্ত্রোপচারটি অত্যন্ত জটিল ছিল কারণ শিফা ও রিফার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো একসঙ্গে জোড়া লাগানো ছিল। আলাদা করার জন্য বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বড় দল গঠন করা হয়। এতে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, এনেস্থেসিয়া, কার্ডিওলজি, এবং অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরা অংশ নেন।

অস্ত্রোপচারের পর, রিফা ও শিফাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয় এবং ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ভেন্টিলেটর থেকে মুক্ত করা হয় এবং সে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে শিফার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয় এবং তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে বিশেষ চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শিফার পিত্তনালির সংযোগ খুলে যাওয়ায় তাকে আবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঠিক করা হয়।

বর্তমানে, শিফা এখনও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং তার অবস্থা উন্নতির পথে। রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে।

শিফা ও রিফার চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমাজসেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেম ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার মা-বাবা। এই সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিশু দুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম বলেন, “জোড়া লাগানো যমজদের অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। অনেক সময়ই উভয় শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। কখনো কখনো একজনকে রক্ষা করা গেলেও, দুজনকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। তবে এবারের এই সফল অস্ত্রোপচার আমাদের চিকিৎসক দলের জন্য একটি বড় অর্জন।”

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এটা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু আমাদের চিকিৎসক দল এই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে।”

রিফা ও শিফার বাবা বাদশা তাদের সন্তানের সুস্থ হয়ে ওঠার ব্যাপারে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বলেন, “ওরা যখন মায়ের গর্ভে ছিল, তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন যে আমাদের যমজ সন্তান হবে। কিন্তু জন্মের সময় আমরা জানতে পারি যে, তারা একে অপরের সঙ্গে জোড়া লাগানো। আমরা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার জন্য লড়াই করেছি, এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ তারা আলাদা এবং সুস্থ।”

এই সফল অস্ত্রোপচারটি বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শিফা ও রিফার সুস্থ হয়ে ওঠার অপেক্ষায় আছে তাদের পরিবার এবং দেশবাসী।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web