আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন
পাকিস্তানের রাজনীতি গত তিন বছর ধরে একটি কঠিন সংকটে রয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং দেশটির সামরিক বাহিনী। এই দুই শক্তির মধ্যে বিরোধ এতটাই তীব্র যে, দেশের বিভিন্ন বেসামরিক প্রতিষ্ঠান ও বিচার বিভাগের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইমরান খান এবং তাঁর রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বর্তমানে যে চরম রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছেন, তার মূল কারণ বিচার বিভাগের একটি বিশেষ অংশের ইমরানবিরোধী কার্যক্রম।
ইমরান খানের রাজনৈতিক উত্থান ও তাঁর জনমোহিনী ক্যারিশমা পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে তিনি একের পর এক রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন
সামরিক বাহিনীর মদদপুষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী ইমরানকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য একজোট হয়ে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশ ইমরানের প্রতিকূলতা বাড়িয়ে তুলেছে।
বিচার বিভাগের কিছু অংশ ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে নস্যাৎ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার নেতৃত্বাধীন একটি নির্দিষ্ট শাখা পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ইমরানের দলের ওপর চরম আঘাত হেনেছে।
উদাহরণস্বরূপ, সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় পিটিআইকে নির্বাচনে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দিয়েছে, যা দলের রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
এ ছাড়া নিম্ন আদালতগুলো ইমরানের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ এনে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এটি ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে এবং জনসাধারণের সাথে তাঁর যোগাযোগকে সীমিত করেছে।
ফলে, পিটিআইয়ের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং ইমরানের নেতৃত্বের শক্তি দুর্বল হয়ে গেছে।
বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ইমরান খানের রাজনৈতিক প্রতিকূলতা কাটাতে সহায়ক হতে পারে। সাম্প্রতিক কিছু রায়ে দেখা গেছে, বিচার বিভাগের মধ্যে ইমরানপন্থী একটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পক্ষে মত দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের ১৩ সদস্যের বেঞ্চে পিটিআইকে সংসদীয় দল হিসেবে ফেরানোর পক্ষে আট জন বিচারক ভোট দিয়েছেন, যা ইমরানের রাজনৈতিক পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
এ ধরনের রায় বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের প্রকাশ করে এবং ইমরানবিরোধী গোষ্ঠীর ক্ষমতার উপর আঘাত হানে। এটি ইমরানের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে এবং তাঁকে রাজনৈতিক পুনরুজ্জীবনের সুযোগ দিতে পারে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিচার বিভাগ সামরিক গোষ্ঠীকে আইনি সুরক্ষা দিয়েছে এবং তাঁদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করেছে।
এর ফলে ইমরান খান এবং তাঁর দলের ওপর চাপ বাড়ছে। তবে, বিচার বিভাগের প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা অবসরে গেলে, এই প্রভাব কমে আসতে পারে এবং ইমরান খানের জন্য নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে।
ইমরান খান যদি বিচার বিভাগের সমর্থন পান, তবে তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারেন। প্রধান বিচারপতির অবসরে যাওয়ার পর বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ইমরানের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
এটি তাঁকে কারাবন্দী জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং তাঁকে আবারও রাজনৈতিক ময়দানে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে পারে।
ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করছে। বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং সম্ভাব্য পরিবর্তন ইমরানের জন্য একটি নতুন আশা জাগাতে পারে।
যদি ইমরান বিচার বিভাগের সমর্থন পান, তবে তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারেন। বিচার বিভাগ যদি তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা বজায় রাখে এবং সামরিক গোষ্ঠীর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, তবে ইমরান খানের ত্রাতা হয়ে উঠতে পারে বিচার বিভাগ।
Leave a Reply