আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১ অপরাহ্ন
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৫৭ জন বাংলাদেশি কর্মীকে ক্ষমা করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এই সিদ্ধান্তটি মানবিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বাংলাদেশের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করার কারণে ৫৭ জন বাংলাদেশি সংযুক্ত আরব আমিরাতে দণ্ডিত হন। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর, এবং একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী, বিদেশি কর্মীরা এমন কোনো কার্যকলাপে অংশ নিতে পারবেন না যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে। এই আইন লঙ্ঘনের জন্যই তারা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হন।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের ক্ষমার এই সিদ্ধান্তটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশি কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের ফিরে পাবে,
যা সামাজিক এবং মানসিক দিক থেকেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
এই মুক্তির পেছনে বাংলাদেশের সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন স্তরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে। এর ফলে একটি মানবিক ও কূটনৈতিক সমাধান বেরিয়ে এসেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি কর্মী তাদের সমর্থন প্রকাশ করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এই সমর্থন প্রকাশিত হয়েছিল,
যা স্থানীয় সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এই বিক্ষোভের কারণে বাংলাদেশিদের ওপর যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত কঠোর। তবে, বর্তমান ক্ষমার সিদ্ধান্ত সেই কঠোরতার একটি মানবিক সমাধান।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত। এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে,
সে জন্য বাংলাদেশের সরকার এবং প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সরকারকে বিদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও স্বার্থ সংরক্ষণে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের এই ক্ষমার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এই ঘটনা উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং ভবিষ্যতে যে কোনো সমস্যার সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
Leave a Reply