আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আগামী ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতোমধ্যেই প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন, যা এবারের নির্বাচনে আগ্রহ ও উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। ভোটগ্রহণ মঙ্গলবার হলেও সবার মনে প্রশ্ন, কবে জানা যাবে চূড়ান্ত ফলাফল? বেশিরভাগ রাজ্য ও কাউন্টির ওপর নির্ভর করে ভোটকেন্দ্রগুলো স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ভিন্ন ভিন্ন সময় অঞ্চলে বিভক্ত হওয়ায় পূর্বাঞ্চলীয় কিছু রাজ্যে ভোট গণনা শুরু হয়ে যেতে পারে, কিন্তু পশ্চিমাঞ্চলের আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতে তখনো ভোটগ্রহণ চলতে থাকবে। এই বৈচিত্র্যের কারণে প্রায়ই মনে হয়, পশ্চিমাঞ্চলের চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে।
সাধারণত, পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর ফলাফল দ্রুত প্রকাশ পায়, ফলে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী সম্পর্কে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে ভোটগ্রহণের পরদিন হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে সাড়া দেন। তবে অনেক সময় পুরো নির্বাচনের ফলাফল জানা কয়েকদিন বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। যেমন, ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৩ নভেম্বর, কিন্তু চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে জো বাইডেনকে ঘোষণা করতে চার দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
কিছু বিশেষ কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল জানতে দীর্ঘ সময় লাগে। প্রথমত, প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং এতে বিভিন্ন পর্যায়ের ধাপ রয়েছে। বিশেষ করে, করোনা মহামারির পর ভোটের পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে এবং প্রচুর ভোট ডাকযোগে জমা পড়েছে। এই ডাকযোগে আসা ব্যালটগুলো গণনা করতে বেশি সময় লাগে, যা চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটায়।
এছাড়া, ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য বা নির্ধারণী কিছু রাজ্যের ফলাফলও নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালের নির্বাচনে অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনের চূড়ান্ত ফলাফল আসতে বেশ সময় লেগেছিল। করোনার সময় ওই বছর নির্বাচনে আগাম ও ডাকযোগে অনেক ভোট জমা পড়ায় সেগুলো যাচাই-বাছাই ও গণনার জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হয়েছিল।
আরো পড়ুন- যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কী ?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইলেকটোরাল কলেজ। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। ভোটের পর প্রথমে ইলেকটরদের যাচাই করা হয় এবং চূড়ান্তভাবে ইলেকটোরাল ভোটের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ইলেকটোরাল ভোট গণনা এবং এই প্রক্রিয়ায় সঠিক ব্যক্তিদের মনোনীত করা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
বিশেষত, ইলেকটোরাল কলেজের প্রক্রিয়ায় কিছু রাজ্য “উইনার-টেকস-অল” নীতি মেনে চলে, যা আরো জটিলতা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ, যে প্রার্থী রাজ্যে অধিকাংশ ভোট পায়, সেই প্রার্থী সেই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট লাভ করেন। ফলে, নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ধাপও কিছুটা সময় নেয়।
ভোটগ্রহণের পর, ইলেকটোরাল ভোটাররা ডিসেম্বরে বসেন এবং তাদের চূড়ান্ত ভোট দেন, যা নির্বাচন পরবর্তী কংগ্রেসের অধিবেশনে জানুয়ারির ৬ তারিখে গণনা করা হয়। এই অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচুর সংখ্যক মানুষ আগাম ভোট ও ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ভোটগুলো চূড়ান্ত ফলাফলের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, গত নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল যে, আগাম ও ডাকযোগে ভোটে বাইডেন সমর্থকরা বেশি অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা চূড়ান্ত ফলাফলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাই এবারের নির্বাচনেও একই ধারা অনুসরণ করা হতে পারে।
এই নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্ধারণী রাজ্য বা ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ভোটের অস্থিরতা ও পরিবর্তনশীলতা থাকায় প্রার্থীদের প্রচারণা এখানে বেশি জোরালো হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর ফলাফল থেকেই নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, ওহাইও, এবং মিশিগানের মতো রাজ্যগুলোতে উভয় প্রার্থীর জন্য প্রচুর প্রচারণা চালানো হয়েছে। তাই এই রাজ্যগুলোর ভোটগণনা দ্রুত শুরু হয়ে যেতে পারে এবং এখান থেকেই চূড়ান্ত ফলাফলের ইঙ্গিত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভোটের পরে ফলাফল প্রকাশে যদি কোনো বিলম্ব ঘটে তবে তা নিয়ে রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে প্রশাসন বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে।
অতীতে দেখা গেছে, ফলাফল নিয়ে বিরোধী পক্ষের মধ্যেও নানা বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে, ২০০০ সালের নির্বাচনে এই বিতর্ক বেশ গভীর হয় এবং আদালতে গড়ায়। তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন নিয়মকানুন ও আইন সংযোজন করা হয়েছে, যা ফলাফল সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেবল দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় বরং, এর প্রভাব গোটা বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন নীতিতে পড়ে। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভাবিত হতে পারে। তাই বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ও জনগণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর জন্যও নির্বাচনের ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলেছে এবং এসব সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে নতুন প্রশাসনের ভূমিকাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে কখন, তা নির্ভর করে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ভোটগ্রহণ, ইলেকটোরাল ভোট এবং ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর ফলাফলের ওপর। পূর্ববর্তী নির্বাচনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, যদিও কিছু রাজ্যের ফলাফল দ্রুত জানা যায়, তবে ডাকযোগে ভোট এবং ইলেকটোরাল প্রক্রিয়ার কারণে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
Leave a Reply