আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষ: জেলেদের চোখে নতুন স্বপ্ন

ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষ: জেলেদের চোখে নতুন স্বপ্ন

ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষ: জেলেদের চোখে নতুন স্বপ্ন
ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষ: জেলেদের চোখে নতুন স্বপ্ন

ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষ: জেলেদের চোখে নতুন স্বপ্ন

আজ, ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে, শেষ হচ্ছে বাংলাদেশে ২২ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশ সংরক্ষণ এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া এই পদক্ষেপে সাগর ও নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পরে আবারও মাছ ধরার অনুমতি পাওয়ায় জেলে এবং মৎস্যসংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি নতুন উদ্যম ও আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে।

ইলিশ সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

সরকার ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন এবং মজুত নিষিদ্ধ করে। ইলিশের প্রজননকাল এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় ইলিশের স্থায়ী প্রজন্ম নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী এবং দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল, যার মধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেশের প্রায় অর্ধলাখ জেলে এ সময় মাছ ধরার কাজ থেকে বিরত থাকেন।

মৎস্য অধিদপ্তর আশা করছে, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশের সংখ্যা এবং আকারে বৃদ্ধি হবে। মৎস্যবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, “এই সময়ে মা ইলিশ প্রচুর ডিম ছেড়েছে, যা ভবিষ্যতে ইলিশের প্রজন্ম বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।” ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রধান সময় অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের পূর্ণিমার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় এটি বিশেষভাবে কার্যকর হয়েছে। এখন পরবর্তী পর্যায়ে জাটকা ইলিশের প্রজনন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আরও সঠিক মূল্যায়ন করা হবে।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সরকারি প্রণোদনা ও সহায়তা

নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকার খাদ্য প্রণোদনা হিসেবে প্রতি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি চাল প্রদান করে। চাঁদপুর সদরের জেলে নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাল পেয়েছি, কিন্তু দৈনন্দিন অন্যান্য খরচের জন্য ধারদেনা করতে হয়েছে।” সাময়িক এই সহায়তা দিয়ে জেলেরা সম্পূর্ণ জীবিকা পরিচালনা করতে পারলেও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন মেটাতে তাদের ঋণ নিতে হয়েছে। চাঁদপুরের বহরিয়ার জেলে দেলোয়ার গাজী জানান, “সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছি। আশা করছি, মাছ ধরার পর সুদাসলে সেই টাকা পরিশোধ করতে পারব।”

এ প্রণোদনার উদ্যোগ জেলেদের জন্য একটি আশার আলো হলেও, বাস্তবে অনেকেই ধারকর্জ করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরার মাধ্যমে সেই ঋণ পরিশোধের প্রত্যাশা তাদের মধ্যে বিদ্যমান।

কঠোর অভিযান ও আইন প্রয়োগ

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ড ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। চাঁদপুরে কোস্ট গার্ডের টহল দল কঠোর অবস্থান নেয় এবং এই সময়ে প্রায় ৬০০ জেলেকে আটক করে। কোস্ট গার্ড কমান্ডার লে. ফজলুল হক জানান, “নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে পদ্মা ও মেঘনায় আমাদের টহল দল সক্রিয় ছিল, যাতে কেউ মাছ ধরার সুযোগ না পায়।”

 

ভোলার চরফ্যাশন, বেতুয়া, এবং চরমাদ্রাজে মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু কঠোরভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযানগুলোতে স্থানীয় জেলেরা আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই স্বেচ্ছায় মাছ ধরা বন্ধ রাখে। তাদের মতে, এই ধরনের শক্তিশালী আইন প্রয়োগ ভবিষ্যতেও মাছের প্রজননকাল রক্ষায় সহায়ক হবে।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির আশায় জেলেদের প্রস্তুতি

নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ মধ্যরাত থেকে সাগর ও নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পেয়ে জেলেরা নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। চাঁদপুর সদরের মেঘনাপারের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা নৌকা ও জাল মেরামতের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। জাল মেরামতের পাশাপাশি তাদের মাছ ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করে ফেলেছেন। জেলে নজরুল ইসলাম বলেন, “নিষেধাজ্ঞা শেষে আশা করছি যে এবার ইলিশের মৌসুমে ভালো মাছ পাবো এবং আমাদের আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।”

আরো পড়ুনপ্রতিদিনের খাবারে বিভিন্ন ধরনের বীজ

মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতামত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ইলিশের প্রজনন এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার ভূমিকা অপরিসীম বলে মনে করছেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা। ড. মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নদী এবং সাগরের পানির গুণগত মান নিশ্চিত করতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।” ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাও চলছে, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পদক্ষেপ আরও কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সরকারের পরিকল্পনা এবং স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাদের দৃষ্টি

ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারাও যথেষ্ট আশাবাদী। চরফ্যাশনের মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, “নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার ফলে এবার ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি হতে পারে।”

 

স্থানীয় পর্যায়ে এই ধরনের কার্যকর পদক্ষেপের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানায় এলাকাবাসী। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানীয় অর্থনীতিতেও একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইলিশের ভবিষ্যৎ বাজার সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য ইলিশ। নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশের উৎপাদন বাড়লে এর বাজারমূল্য কমে আসতে পারে এবং স্থানীয় বাজারেও প্রচুর ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হতে পারে। ইলিশের বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেলে দেশের ভোক্তারা কম দামে ইলিশ কিনতে পারবেন। পাশাপাশি ইলিশের বিদেশে রপ্তানি আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এতদিন ধরে মাছ না ধরার ফলে ইলিশের ঘাটতি ছিল, ফলে বাজারে ইলিশের দাম বেড়েছিল। তবে এবার মাছ ধরার মৌসুমে আশা করা হচ্ছে, জেলেদের প্রচুর ইলিশ ধরতে সক্ষম হবেন। এর ফলে ইলিশের দাম কমবে এবং সবার জন্য সহজলভ্য হয়ে উঠবে।

নিষেধাজ্ঞা এবং জেলেদের জীবিকা

নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেরা আর্থিক সংকটে পড়লেও সরকারের দেওয়া প্রণোদনা কিছুটা সাহায্য করে। এ ধরনের প্রণোদনা আরও সুসংগঠিত ও ব্যাপক পরিসরে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। যাতে ভবিষ্যতে জেলেরা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সহজে মানতে সক্ষম হয় এবং তাদের জীবিকা নিয়ে সংকটে না পড়ে।

জেলেদের মধ্যে নতুন স্বপ্ন

মাঝ নদীতে নতুন করে মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে জেলেদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা এবং আশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জেলে ধারদেনা করে এই সময় পার করেছেন এবং মাছ ধরার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তারা সেই দেনা পরিশোধের পরিকল্পনা করছেন। তাদের আশা, ইলিশ মৌসুমে এবার প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে, যা তাদের জীবিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের বিভিন্ন নদীতে ইলিশ ধরা আবারও শুরু হবে। সরকারের এই প্রজনন সংরক্ষণ ব্যবস্থা, জেলেদের সহযোগিতা, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web