আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
টেস্ট ম্যাচে ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটিং।দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট সিরিজে পারফরম্যান্স নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ব্যাটিং বিপর্যয়ে লড়াই করতে থাকা বাংলাদেশ দলে মাঠে যেন আত্মবিশ্বাসের সংকট ছিল, যা প্রতিটি ওভারে যেন আরও প্রকট হয়ে ওঠে। প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা বাংলাদেশ দলের জন্য যেন একটি অব্যর্থ ত্রাসে পরিণত হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে তিনি একাই শিকার করেছেন ১০টি উইকেট, যা তাকে ম্যাচের নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশ দল টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৮ রান করে। সকালে যখন খেলাটি আবার শুরু হয়, তখন তারা চূড়ান্ত বিপর্যয়ে পড়ে যায়। প্রথম ঘণ্টার মধ্যে চারটি উইকেট হারিয়ে স্কোর পৌঁছে মাত্র ১৩৭ রানে। এই মুহূর্তে, ফলো-অন এড়ানোর আশাও যেন শেষ হয়ে যায়। প্রেসবক্সে বিসিবি সভাপতি হতাশা প্রকাশ করেন, বলেন, “ওপেনারদের কাজ বলের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে দেওয়া। কিন্তু তার আগেই আমরা ৭–৮ উইকেট হারিয়ে বসেছি!”তা
প্রথম ইনিংসে কাগিসো রাবাদা একাই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের বিপর্যয়ে ফেলে দিয়েছেন। আগের দিনই তিনি শিকার করেছিলেন দুটি উইকেট, এবং এদিন সকালে দুর্দান্ত এক স্পেলে আরও তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে তার মোট উইকেটসংখ্যা পাঁচে পৌঁছায়। রাবাদার বলের গতি, সুইং এবং নিয়ন্ত্রণ ছিল এক কথায় অপ্রতিরোধ্য। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন তার প্রতিটি বলেই বিপর্যস্ত হচ্ছিলেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের এ বিপর্যয় আসলে কিছুটা তাদের নিজস্ব ভুলে ত্বরান্বিত হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা বল ছাড়ার সময় অস্বস্তিতে ছিলেন। যে বলটি ছাড়া যেত সেটি খেলতে গিয়ে উইকেট খুইয়েছেন অনেকেই, আবার যেটি ঝুঁকিপূর্ণ সেটি ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ভুল করে। পুরো ইনিংসেই আত্মবিশ্বাসের সংকট প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বল সামলাতে ব্যর্থ হয়ে যেন তাসের ঘরের মতো একের পর এক ভেঙে পড়েছে ইনিংস।
বাংলাদেশ দলের এই ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে কিছুটা আশার আলো ছড়িয়েছে মুমিনুল হক এবং তাইজুল ইসলামের নবম উইকেটে দারুণ জুটি। ১১১ রানের এই জুটি প্রোটিয়াদের অপেক্ষা বাড়িয়েছিল, যা বাংলাদেশি সমর্থকদের কাছে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা এনে দেয়। মুমিনুল হক ১১২ বলে ৮২ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন, যা তাকে সেঞ্চুরির সম্ভাবনায় নিয়ে গিয়েছিল। তার পার্টনার তাইজুলও ভালোই লড়াই করেছিলেন, ৯৫ বলে ৩০ রান করে শেষ পর্যন্ত আউট হন।
আরো জানুন ….. দেশের ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪১৬ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায়। এবারও বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের অবস্থা তথৈবচ। প্রথম ইনিংসের ভুলগুলো যেন দ্বিতীয় ইনিংসেও পুনরাবৃত্তি ঘটে। ব্যাটসম্যানদের খেলা যেন তাড়াহুড়ো আর অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ ছিল। সব মিলিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা যেন আরও দ্রুত ম্যাচটি শেষ করতে চায়।
দিন শেষে দেখা যায়, প্রথম ইনিংসে যারা শেষ বিকেলে আউট হয়েছিলেন, সেই সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান ও হাসান মাহমুদ ছাড়া সবাই দ্বিতীয় দিনে দুবার করে আউট হন। মুমিনুল হকও দ্বিতীয় সেশনে দুবার আউট হন, দ্বিতীয়বার তার ব্যাট থেকে কোনো রানই আসেনি। প্রথম ইনিংসে দুর্দশাগ্রস্ত মুমিনুল এই ইনিংসেও ভালো শুরু করতে পারেননি।
দলের বিপর্যয়ের মাঝেও, তাইজুল ইসলাম এবং হাসান মাহমুদ চেষ্টা করেছেন কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে। প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৮ রান করেন হাসান মাহমুদ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৪ রানে ৮ উইকেট পড়ার পর মাহিদুলের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটি গড়ে সামান্য হলেও বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা আশার আলো জাগিয়ে রাখেন হাসান।
বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্স থেকে স্পষ্ট যে ব্যাটসম্যানদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি ছিল না। অন্যদিকে, প্রোটিয়াদের বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্য এবং দক্ষতার কারণে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একেবারেই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। কাগিসো রাবাদার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা এক কথায় বাংলাদেশকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ দলের এই পরাজয়ের পর দলের পুনর্গঠন প্রয়োজন। বিসিবি সভাপতি এবং কোচিং স্টাফদের উচিত এই ব্যাটিং ব্যর্থতার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা এবং এর সমাধান খুঁজে বের করা। তদুপরি, ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং কৌশল আয়ত্ত করা দরকার, যেন ভবিষ্যতে তারা দক্ষতার সঙ্গে খেলতে পারে।
Leave a Reply