আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ের বৈঠকে মানবাধিকার সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ঢাকা সফরের সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের আইনি উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং এ সময় মানবাধিকার, আইনের শাসন, এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন।
ভলকার তুর্ক জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসে ঘটিত এক গণহত্যার ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘ একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছে এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর এই বিষয়ে সম্পূর্ণ নজর রাখছে বলে জানান তিনি। ভলকার তুর্ক বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি এবং আমাদের হেড অফিস পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।”
এই গণহত্যার ঘটনাটি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি ইতিমধ্যেই প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে, এবং আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই তারা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
ভলকার তুর্ক ও ড. আসিফ নজরুলের বৈঠকে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রশ্নটি কেন্দ্রীয়ভাবে উঠে আসে। তুর্ক বলেন, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন একে অপরের পরিপূরক। তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোতে মানবাধিকার যেন নিশ্চিত থাকে, সে বিষয়ে জোর দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।”
এ প্রসঙ্গে, তুর্ক সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানালেও কিছু ক্ষেত্রে আরও উন্নতির প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ভলকার তুর্ক বলেন, এটি দেশব্যাপী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি সার্চ কমিটি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ব্যক্ত করেছেন ভলকার তুর্ক।”
এছাড়া, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেন তুর্ক। তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করতে সরকারের প্রতি সহযোগিতার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
এ বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং মৃত্যুদণ্ডের বিধান। হাইকমিশনার তুর্ক বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখলেও তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেন। তুর্ক মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে অন্যান্য বিকল্প শাস্তির ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “ফ্যাসিস্টদের বিচারের আগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান পরিবর্তনের প্রশ্নই উঠে না।” এই বিষয়ে জাতিসংঘের সুপারিশ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।
ভলকার তুর্কের বাংলাদেশ সফর এবং সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক আলোচনার ফলে বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন আরো জোরদার করার বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন- দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মইনউদ্দীন আব্দুল্লাহসহ দুই কমিশনারের পদত্যাগ
Leave a Reply