আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
আমরা কি অপরাধকে সংস্কার করতে পারি না?

আমরা কি অপরাধকে সংস্কার করতে পারি না?

আমরা কি অপরাধকে সংস্কার করতে পারি না?
আমরা কি অপরাধকে সংস্কার করতে পারি না?

আমরা কি অপরাধকে সংস্কার করতে পারি না?

অপরাধ বলতে সাধারণত সমাজ ও আইন নিষিদ্ধ দণ্ডনীয় কাজকে বুঝায়। অপরাধ প্রবণতা মানুষের জন্মগত কোনো বিষয় নয়, সমাজ ও পারিপার্শ্বিক কারনে মানুষ অপরাধী হয়ে উঠে। ধনী- দরিদ্র উভয় রাস্ট্রেই সরকারকে কতিপয় অপরাধ মোকাবেলা করতে হয়। অপরাধ প্রবণতা সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে। কিন্তু অপরাধ বিজ্ঞানে অপরাধকে ব্যধি হিসেবে গণ্য করা হয়। ওষুধ সেবন করলে যেমন ব্যধি দূর হয়, তেমনি অপরাধের চিকিৎসা করলে অপরাধ দূরীভূত হয়। সরকার অপরাধীদের মনোভাব কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্যে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে পারে। তাছাড়া অপরাধকে অপরাধ মনে না করে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করে নিরাময়ের ব্যবস্থা নিলে অপরাধ হ্রাস পায়।

আমি এসএসসি শেষ করি মগবাজার মধুবাগ অন্তর্গত শের ই বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবং এইচএসসি শেষ করি ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইইআর অন্তর্ভুক্ত ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে।আমরা স্কুলের তিন বন্ধু একসাথে কলেজে যেতাম,তাদের একজন পড়তো উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ , আরেকজন পড়তো ঢাকা কলেজে।একসাথে ওয়্যারলেস দিয়ে পরিবাগের রাস্তা দিয়ে রমনা পার্কে ঢুকতাম, শিশু পার্কের গেট দিয়ে বের হয়ে একসাথে শাহবাগ পর্যন্ত যেতাম। এরপর যে যার মত কলেজে যেতাম।তো রমনা পার্কে যেয়ে দেখতাম ৫-৬ বছরের পথশিশু রাস্তায় বোতল টোকায়, ভিক্ষা চায় এবং ওরা পলিথিন মুখে দিয়ে এক প্রকার নেশা করে, যা সমাজে ডেন্ডি নামে পরিচিত,অনেকে জুতার আঠাও বলে। এদের দেখে অনেক মায়া হতো,ভাবতাম ওদের দেখার জন্য কেউ নেই,ওদের জন্য যদি কিছু করা যেত! সামান্যতম নৈতিক শিক্ষা দেবার মত লোকও নেই।আর ক্ষুধার যন্ত্রণা, কষ্ট, অভাব-অনটন কিংবা পারিপার্শ্বিকতার চাপ কোনো শিক্ষাই তাদের মাথায় ঢুকতে দিবে না। এই দৃশ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও দেখা যায়, দেখা যায় দেশের প্রতিটি ঘনবসতি অঞ্চলে।

ডেন্ডি

ডেন্ডি

আমার স্বল্পজ্ঞানে যা মনে হয়, ওরাই দেশের সর্বনিম্ন স্তর এবং এরাই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রমোশন পেয়ে হয় চোর, তারপর ছিনতাইকার,এরপর গ্রুপ মিলে কিশোর গ্যাং কিংবা হয়ে যায় ডাকাত। তারপর ডাকাতিতে তাদের অভিজ্ঞতা যখন বেড়ে যায়,তখন প্রমোশন পেয়ে হয়ে যায় সন্ত্রাসী।আর সেই সময় নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা লাগে এই সন্ত্রাসীকে কে কার দলে নিবে, রাজনৈতিক কাজে লাগানোর জন্য। কারণ ওদের শেখানো হয় রাজনীতিতে ধান্দা আছে। আর সেই ধান্দার জন্য মানুষ হত্যাসহ সকল অপকর্মের মধ্যেই নিজেকে জড়িয়ে ফেলে, তখন তারা বের হতে চাইলেও পারে না।কারণ বের হয়ে যদি নেতার তথ্য ফাঁস করে দেয়,তখন নেতা তো ঝামেলায় পড়বে।আর তখনই সেই নেতা অন্য সন্ত্রাসী দিয়ে আগের সন্ত্রাসী মেরে ফেলে।

কিশোর গ্যাং

কিশোর গ্যাং

অনেক নেতারা পথশিশুদেরকে নিজেদের ক্রীতদাস বানিয়ে তাদের দিয়ে ভিক্ষা করায়, মাদক পর্যন্ত বিক্রি করায়, স্রেফ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য।তাহলে এসব পথশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়বেন কিভাবে? তাদেরকে চোর ডাকাত ছিনতাইকার কিংবা সন্ত্রাসী হওয়া থেকে কিভাবে ঠেকাবেন? এসব পথশিশুদের যদি পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় তাহলে তো সেই সন্ত্রাসী হবার রাস্তায় আরও একধাপ এগিয়ে দিলেন।সবসময় শাস্তি কিংবা নির্যাতন কখনোই সন্ত্রাসীকে মানুষ বানাতে পারে না। ওদের জন্মই তো অবহেলা আর নির্যাতনের মধ্যে।


প্রায় প্রতিদিনই নিউজ হয় এই জায়গার থেকে এই মাদক পাওয়া গেছে, আটক এতজন।আটকদের পাঠানো হয় কারাগারে। কিন্তু কারাগারে গিয়ে তারা কি শিখে? তাদেরকে তো নির্যাতনেই রাখা হয়,কিংবা জেলেই বন্দী রাখা হয়। জেলে রেখে কিংবা নির্যাতন করেই কি অপরাধীদেরকে মানুষ বানানো সম্ভব? উল্টো কি হয় জেলে অন্য অপরাধীর সাথে সাক্ষাৎ এর সুযোগ হয়, বলতে পারেন সেটা একরকম অভিজ্ঞতা। যে যত বেশি জেল খাটে তার অভিজ্ঞতা ততো বেশি।তখন জুনিয়ররা সিনিয়রদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয় কিভাবে অপরাধ করলে পুলিশের কাছে ধরা খাবে না, কিংবা পুলিশকে কত টাকা দিলে তারা তাদের অপরাধ চালিয়ে যেতে পারবে। তো অপরাধীরা জেলে থেকেই বা কি শিখছে? অপরাধ করার উচ্চতর ডিগ্রি। শিক্ষা হয় না বলেই জেল থেকে বের হয়েই তারা আবার মাদক কিংবা অন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কিংবা বড় কোনো অপরাধ করার ধান্দা খুঁজে নেতাদের ভিড়ে।আর তখন তা দেখে আমরা বলি চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। কিন্তু আমরা এইটা ভুলে যাই যে, তুর্কি মতবাদে আছে, যদি আপনি শিয়ালের কাছ থেকে ধর্ম শিখেন, তাহলে মুরগি চুরি করাকে আপনি মহান কাজ ভাবতে শুরু করবেন।

আরও জানুন –অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ

আমার স্কুলের এক বান্ধবীর পরিবার নিম্নমধ্যবিত্ত । বান্ধবীর বাবামা আলাদা থাকে । মেয়ে তার ছোট ভাইকে নিয়ে থাকতো তার মায়ের কাছে । হঠাৎ বান্ধবীর প্রেম হয়, বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের পর জানতে পারে ছেলে ডিভোর্সী। এতে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হলো দ্বন্দ্ব, পরে আবার মেয়ে সব মেনে নিয়েছিল। পরে তাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়।এখন মেয়ে সন্তান কেন হলো, ছেলে কেন হলো না, সেটার জন্য তার স্বামী তার সাথে যোগাযোগ রাখে না। দ্বায়িত্ব নিতেই অস্বীকার করে,দরকার হলে ডিভোর্স দিবে ।শেষে মেয়ে তার মায়ের কাছেই ফিরে আসে সন্তান নিয়ে। বান্ধবীর কিউট ছোট ভাইটি স্কুলে ক্লাস ফাইভের পরই সঙ্গ দোষে নেশায় জড়িয়ে পড়ে।নেশার টাকার জন্য বাসা থেকে চুরি করা শুরু, তারপর বাসার জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রি, শেষে নেশার টাকার জন্য মায়ের গায়ে হাত তুলতো। বোন বিরক্ত হয়ে ছোট ভাইকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এডিক্টেট হয়ে ছেলেটা রাস্তায় ঘুমায়। ছেলেটি মাদক মামলা আটক হয় কয়েকবার। এখনো ছেলেটা সাইকো রোগী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভবঘুরে। কিন্তু মা তো মা-ই।
ছেলের জন্য মা কষ্ট পায়।তাকে নিজের কাছে রাখতে পারে না গায়ের হাত তুলে,উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য, এর উপর বাসার বাড়িওয়ালারও অবজেকশন আছে,মামলা খাওয়া ছেলেকে কোনো বাড়িওয়ালাই রাখতে চাইবে না।

জেলখানায় রেখেও তো মাদকাসক্ত মানুষকে আপনারা ঠিক করতে পারলেন না। তাহলে জেলে রেখেই বা কি লাভ?

পুলিশ অপরাধীদেরকে চিনিয়ে দিচ্ছে সমাজের কাছে, সমাজের কাছে তারা কলঙ্কিত, ধিক্কার জানাচ্ছে আমাদের এই সমাজবাসী। এতে করে অনেক অপরাধীই মনে করে, আমি তো সমাজের কাছে খারাপ হয়েই গেছি, এখন আর ভালো থেকেই বা লাভ কি?এতে করে তার আর ভালো হবার ইচ্ছা জাগে না, ভালোও হয় না,উল্টো খারাপের দিকে প্রমোশন হয়। জেলে ঢুকে তারা সন্ত্রাসীর ডিগ্রি অর্জন করে। অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেছি, কিন্তু অপরাধীর অপরাধ করার প্রবণতাকে এখনো আমরা সিনড্রোম হিসেবে দেখতে পারি নাই,তাদেরকে মানসিক চিকিৎসা দিতে পারি নাই। এতে করে একজন অপরাধীকে অপরাধ করার হাত থেকে আমরা বাঁচাতে পারছি না, তাদের জন্য ন্যায়ের রাস্তা খুলতে পারছি না। অপরাধী যদি ভুল স্বীকার করে, তারা যদি ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে রাস্ট্রীয়ভাবে তাদের দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে ভালো কাজের সুযোগ দিতে হবে,তা না হলে তারা ভালো কাজ কি তা শিখতেও পারবে না, জানতেও পারবে না, আর করতে তো পারবেই না।

দেশে এত এত মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র, অথচ সেখানে কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ভর্তি করাতে গেলেই অনেক টাকা দিতে হয়, যা বহন করার সক্ষমতা এসব পরিবারের নেই। তাছাড়া না আছে সেসব কেন্দ্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা, যা একজন মাদকাসক্ত মানুষকে স্বাভাবিক মানুষে রুপান্তর করতে পারবে।

গত ৩১ মার্চ,২০২৪ এ ডয়চে ভেলে কর্তৃক প্রকাশিত ‘অপরাধ কেন কমে না‘ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-

পুলিশে জনবল বাড়ে, আধুনিক প্রযুক্তি যোগ হয়। কিন্তু অপরাধ কমেনা। উল্টো বাড়ে । তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অপরাধের নতুন ধরন। আর এই সময়ে পুলিশের মাথা ব্যথা হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং।প্রচলিত অপরাধ যেমন ডাকাতি, চোরাচালান ও অপহরণ বাড়ছে। কমছেনা হত্যা , ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ। অনলাইন প্রতারণা, ই-কমার্সের নামে প্রতারণা, অনলাইন জুয়ার মত অপরাধ নতুনভাবে ভাবাচ্ছে পুলিশকে। আবার পুলিশের এক শ্রেণির সদস্য নিজেরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

গত বছর সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধে মোট মামলা হয়েছে এক লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৬টি। আগের বছর মামলা হয়েছিল দুই লাখের বেশি। আর ২০২১ সালে এক লাখ ৯৭ হাজারের বেশি।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশে তিন হাজার ২৮টি হত্যা ও পাঁচ হাজার ২০২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে আটটির বেশি হত্যা এবং ১৪টির বেশি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর ওই বছর নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১১ হাজার ৩৭টি। প্রতিদিন ৩০টির বেশি নারী নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে পুলিশের কাছে।

২০২১ সালে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৯৭১টি। সেখানে ২০২২ সালে এক হাজার ১২৮টি এবং ২০২৩ সালে এক হাজার ৩৮৪ টি ডাকাতির ঘটনা পুলিশ রেকর্ড করেছে।

২০২২ সালে অপহরণের মামলা হয়েছে ৪৬৩টি আর ২০২৩ সালে ৪৬৬টি।

২০২৩ সালে চোরাচালানের মামলা হয়েছে দুই হাজার ৫০০টি আর ২০২২ সালে মামলা ২১৪ টি কম ছিলো। মোট মামলার সংখ্যা ছিলো দুই হাজার ২৪৬টি।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালে চুরি, দ্রুত বিচার, ডাকাতি, অ্যাসিড নিক্ষেপ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেদেশে মোট মামলা হয় ৮৯ হাজার ৮০৯টি। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৬২২।

২০২৩ সালে এককভাবে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। এ বছর সারা দেশে মাদকসংক্রান্ত মামলা করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪১৮টি। আগের বছর এ আইনে মামলা হয় ৮২ হাজার ৬৭২টি।

দেশের রাজধানী ঢাকায় অপরাধ সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় ২৫ হাজার ৪৯টি মামলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন,” অপরাধ নিয়ে যখন বাণিজ্য হয় তখন আপনি পুলিশে জনবল বাড়িয়েও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বা কমাতে পারবেন না। এখানে বিভিন্ন অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে পুলিশের এক শ্রেণির অসাধু সদস্যের যোগাযোগের অভিযোগ আছে। আবার পুলিশ নিজেও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”

সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক

সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক

তার কথায়,” পুলিশ আবার আইন শৃঙ্খলা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রাজনীতি, ব্যক্তি এসব বিষয়কেও প্রাধান্য দেয়। যেখানে অর্থের যোগাযোগ আছে সেখানে এখন অপরাধ বেশি। আর এই অর্থের দ্বারাও কোনো কোনো পুলিশ সদস্য নিয়ন্ত্রিত হয়।”

পুলিশের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ বজলুল করিম বলেন,” পুলিশের দক্ষতার চেয়েও বড় সমস্যা হলো এখন মনিটরিং-এর অভাব। এখানে অধস্তনরা কী করেন উপরের কর্মকর্তরা তার খোঁজ রাখেন না। এসপি সাহেবরা তো এখন বাইরে বের হতে যেন লজ্জা পান। হাইওয়েতে ডাকাতি হয় পুলিশ তার ডিউটিতে থাকেনা। এখন পুলিশের সম্পর্ক হয়ে গেছে বিত্তের সঙ্গে।”

তিনি জানান,” আমাদের লোকজনও তো নানা সহায়তা নিতে থানায় যান। পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় আমাদের কাছে আসলে আমরাও থানায় পাঠাই। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। ডিবি(গোয়েন্দা বিভাগ) তো এখন পুরাই দোকান হয়ে গেছে।”

তার কথায়,” পুলিশ সম্পর্কে মানুষ ভালো কথা বলেনা। আমরা নিজেরাই বিব্রত।”

আর আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক , মানবাধিকার কর্মী ফারুক ফয়সাল বলেন,” পুলিশ তো আর পুলিশের কাজে নাই। সে তো এখন অন্য কাজে ব্যস্ত। ফলে অপরাধ কমছেনা।”

তার মতে,” সমাজে রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের অস্থিরতা বাড়ছে। ফলে অপরাধও বাড়ছে। আর বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা আরো উৎসাহিত হচ্ছে।”

এখন দু:খ নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর একটি প্রবন্ধ বলতে চাই, যা বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৭ সংখ্যায় যে তিনটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল তাদেরই একটি। প্রবন্ধটির নাম জীবনবিজ্ঞান। নজরুল এই পত্রিকার জন্য ‘ইংলিশম্যান; পত্রিকার ম্যাগাজিন সেকশান থেকে এই নিবন্ধনটি অনুবাদ করেছিলেন।

“আগুন যেমন ধাতুকে খাঁটি করে; দুঃখ তেমনি আত্মাকে একেবারে আয়নার মতো সাফ করে দেয়। কিন্তু তাই বলে মনের সব কষ্টই দুঃখ নামে অভিহিত হতে পারে না। মোটামুটি দেখতে গেলে দুঃখ দু’রকমের। একটি হচ্ছে নিজের কষ্টের জন্য দুঃখ পাওয়া, অন্যটি হচ্ছে, অন্যের কষ্টে দুঃখ অনুভব করা। এই দুই দুঃখই কষ্ট দেয়; কিন্তু তারা একরকমের নয়।
আমি হয়তো আমার প্রিয়তম জিনিসটাকে হারিয়েছি, কিংবা আমি যা চাই তা পাই না, এইরকম সবের জন্যে যে কষ্ট পাওয়া, সেই হচ্ছে নিজের জন্যে দুঃখ। এর ফল, আত্মাভিমান এবং আত্মসুখের বৃদ্ধি। অন্যের দুঃখ দেখে নিজের দুঃখ মনে পড়া আর তার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়া, ক্রমে নিজের কষ্টকে তুচ্ছ করে এই পরের কষ্টটাকে বড় করে দেখা, এইসব মহৎ অনুভবের ফল হচ্ছে আত্মার, প্রাণের প্রসারতা লাভ। একদিন এক বিধবা তার মরা ছেলেকে বুকে নিয়ে গৌতম বুদ্ধের কাছে কেঁদে পড়ল যে তার ঐ একমাত্র মৃত পুত্রকে বাঁচিয়ে দিতে হবে। বুদ্ধদেব বললেন,-দুঃখ নেই শোক নেই- এমন কোনো ঘর হতে কয়েকটি বিল্বপত্র যদি এনে দিতে পারো তাহলে তোমার ছেলেকে, বাঁচিয়ে দেবো। ‘বিধবা অনেক, খুঁজেও দুঃখ-শোকের ছোঁয়া লাগেনি এমন কোনো,.ঘর দেখতে পেল না। তাই তিন-দিন পরে যখন এই পুত্রহারা জননী ফিরে এল, তখন সে বিশ্বের দুঃখ-কষ্টের মাঝে নিজের দুঃখের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে, আর তার ঐ সসীম বুকেই অসীমের বীণের গুমরে-ওঠা বেদনার নিবিড় শান্তি নেমে এসেছে! সে তখন আর নিজের সন্তানের জন্য দুঃখ করছে না; তার মাতৃস্নেহ সারা বিশ্বে তখন ছড়িয়ে পড়েছে।

অন্যের দুঃখ-বেদনা অনুভব করাই হচ্ছে মহত্তর ব্যথার অনুভব। কেননা ব্যথার ব্যথীর এ ব্যথায় কোনো উদ্দেশ্য বা স্বার্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। তার কারণ, এ হচ্ছে সেই ব্যথা, যার অনুভব হয় নিজের বুকের বেদনা মনে পড়ে আত্মার, ধর্ম এমনি বিস্ময়কর যে, এই পরের ব্যথায় ব্যথিত হওয়াতেও সে এমন একটি নিবিড় আনন্দের আভাস পায়, যেন রক্তমর্মর বুকে ঝর্নাধারার একটি স্নিগ্ধ দীঘল রেখা।
এ সেই দুঃখ যা পয়গম্বরগণ বিশ্বমানবের অন্তরে অন্তর মিশিয়ে অনুভব করেছিলেন। এর বেদনা -এর আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই। এ-ই হচ্ছে সেই সাধনা, যা মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে। এই বেদনার গভীর আন্তরিকতাতেই ত্যাগের নির্বিকার প্রশান্তি, এই চির-ব্যথার বনেই আনন্দ-স্পর্শমণি খুঁজে পাওয়া যায়।
সকলেই এ অমৃতময় দুঃখ অনুভব করতে পারে না। মহত্তর আত্মা যাঁদের, ভুক্তভোগী যাঁরা, শুধু তাঁরাই এ হেয়ালির মর্ম বোঝেন। এ চায় কল্পনা আর মানব-মনের বিস্ময়কর বোধশক্তি। তাই এ পথের ভাগ্যবান পথিক তাঁরাই যাদের হাতে গভীর জ্ঞান আর উঁচু প্রাণের পাথেয় আছে।
অনেক রকমের দুঃখ-কষ্ট আমাদের ঘিরে রয়েছে এবং তার অনেকগুলিরই প্রতিকার অসম্ভব। যখন আমরা আপন বুকের বেদনা দিয়ে সারা বিশ্বের ব্যথা নিজের করে নিতে পারি, কেবল তখনই আমাদের আত্মা উন্নত প্রসারিত হয়। তখনই আমরা সত্যকে চিনি, সুন্দরকে উপলব্ধি করি -আর তাই তখন আমাদের আনন্দ ত্যাগে, পরের জন্যে কেঁদে, বিশ্বের ব্যথিতের জন্য জান কোরবান করে।”

বিশ্ব মানবাধিকার সনদ বলছে,

‘প্রতি মানুষেরই তার ও নিজের পরিবারের সকলকে নিয়ে একটি নূন্যতম নির্দিষ্ট মানে সুস্থ সবল থাকার অধিকার আছে। এর অন্তর্গত হল খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক পরিষেবার সুযোগ। বেকারক্ত, অসুখ, প্রতিবন্ধকতা,বৈধব্য, বার্ধক্য, জীবিকার অনিশ্চয়তা ও অপ্রতুলতা – ইত্যাদি যেসব অবস্থার ওপর তার নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই,সেসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পাবার অধিকার তার আছে।’

Human Rights

Human Rights

তাই আমি মনে করি,আমাদের সকলকে একতাবদ্ধ হয়ে সরকারের পাশে থাকতে হবে । কোনো ভাবেই এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। আর সরকারের একার পক্ষে এতগুলো সেক্টরের দায়িত্ব নেওয়াও নিতান্তই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই আমাদের এই বৃহৎ ছাত্রসমাজকে এই সংস্কারের কাজে নিজের মনে করে দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধাও প্রয়োজন যেন সংস্করণে আমরা ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে পারি।

ইনশাআল্লাহ এতেই আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, মানবতার বাংলাদেশ, আপোসহীন বাংলাদেশ এবং বিশ্বশান্তির বাংলাদেশ।

 


 

লিখেছেন,

মোহাম্মদ জায়েদুর রহমান নিলয়
কমিউনিকেশন সেক্রেটারি,
ফেস অফ বাংলাদেশ ।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web