আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়া সহ তিনজনের অব্যাহতি

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়া সহ তিনজনের অব্যাহতি

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়া সহ তিনজনের অব্যাহতি
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়া সহ তিনজনের অব্যাহতি

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়া সহ তিনজনের অব্যাহতি, ১২ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরু

গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড (গ্যাটকো) দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তিনজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একই সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আলীসহ অপর ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ঢাকার বিশেষ আদালত-৩ এর বিচারক আবু তাহের বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখন চলমান থাকবে এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরো শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

মামলার প্রেক্ষাপট ও অভিযোগ

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাটি ২০০৭ সালে দায়ের করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর এ মামলাটি দায়ের করেন। চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এই মামলার এজাহার করা হয়।

এরপর ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। তবে মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

মামলার অভিযুক্ত ও অব্যাহতি প্রাপ্তরা

এই মামলায় অব্যাহতি পাওয়া তিনজন হলেন:

  1. বেগম খালেদা জিয়া – বিএনপির চেয়ারপারসন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।
  2. ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন – সাবেক মন্ত্রী।
  3. আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী – বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।

অন্যদিকে, মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আলীসহ আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন:

  • প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আনছার এবং তার দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন ও এ কে এম মুসা কাজল।
  • সাবেক নৌসচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী
  • চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ
  • গ্যাটকো পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব
  • চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম শাহাদত হোসেন
  • বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন

বিচারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি

এই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি উপলক্ষে আসামিপক্ষে থাকা আইনজীবীরা আদালতে অব্যাহতি চেয়ে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে হাজিরা দাখিল করা হয় এবং তার আইনজীবীরা অব্যাহতির পক্ষে যুক্তি দেন। আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জিয়া উদ্দিন জিয়া, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ এবং জাকির হোসেন ভূইয়া আদালতে আসামিপক্ষের শুনানি পরিচালনা করেন। তারা উল্লেখ করেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রভাবিত এবং এতে কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। আসামিরা কোনো অপরাধ করেননি এবং মামলাটি থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া উচিত।

অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি দেন। তিনি আদালতে দাবি করেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং এই মামলাটি বিচারাধীন থাকা উচিত। বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মামলার বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১২ জনের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আদেশ দেন।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাটি বাংলাদেশে অন্যতম আলোচিত ও রাজনৈতিক প্রভাবিত মামলাগুলোর মধ্যে একটি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার প্রধান অভিযুক্ত খালেদা জিয়া, যিনি তখনকার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এবং তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। মামলাটি রাষ্ট্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি ছিল। অভিযোগে বলা হয়, গ্যাটকোকে অবৈধভাবে ঠিকাদারি কাজ প্রদান করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করা হয়।

আরো পড়ুনঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা, প্রস্তুত থাকার পরামর্শ

প্রথমদিকে মামলায় মোট ২৪ জন আসামি ছিলেন, তবে এর মধ্যে আটজন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানসহ কয়েকজনের মৃত্যু হওয়ায় তারা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতি পেয়েছেন। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় তাকেও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মামলার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ

মামলার অভিযোগ গঠন এবং বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বিচারে এখনও অনেক শুনানি বাকি। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, খালেদা জিয়া এবং আরও দুইজন আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও বাকি ১২ জন আসামির বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। মামলার ভবিষ্যৎ কিভাবে নির্ধারিত হবে, তা দেশের রাজনৈতিক ও বিচার ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গ্যাটকো মামলার প্রভাব ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার প্রভাব রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ও এর প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাটি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং জনগণের মধ্যে তাদের ভাবমূর্তি সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। মামলার ফলে বিএনপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু।

এই মামলাটি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে। বিএনপি এবং এর সমর্থকরা দাবি করেন, মামলাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং তাদের নেত্রীকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার একটি প্রচেষ্টা। অপরপক্ষে, ক্ষমতাসীন দল এবং দুর্নীতি বিরোধী কর্মীরা এই মামলাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ তিনজনের অব্যাহতি পাওয়ার পরও মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছে এবং অপর ১২ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হচ্ছে। মামলাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচার ব্যবস্থায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই মামলার চূড়ান্ত ফলাফল কেবল আসামিদের ভাগ্যই নির্ধারণ করবে না, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চিত্রেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web