আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন
বাজারে ক্রমবর্ধমান সবজির দাম সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা জানিয়েছে, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ এলাকা থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়, যা ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ এলাকায় শের-ই-বাংলা স্কুলের পাশে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির কার্যক্রম। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন Face of Bangladesh এর উদ্যোগে ১০-১৫ জনের একটি দল শাকসবজি বিক্রি করতে থাকে। স্থানীয় বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে এসব শাকসবজি বিক্রি হওয়ায় সাধারণ মানুষ দীর্ঘ লাইন ধরে এসব পণ্য ক্রয় করছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে এ কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি হওয়ায় গৃহিণীসহ অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। মধুবাগের এক গৃহিণী হোসনে আরা বলেন, “বাজার করতে গিয়ে আমি জানতে পারলাম এখানে স্বল্পমূল্যে সবজি বিক্রি হচ্ছে। আমি যা কিনেছি, তাতে আমার কমপক্ষে ৩০০-৪০০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে।”
অন্যান্য ক্রেতারাও জানান, বর্তমান বাজার দামের তুলনায় এখানে সবজির দাম অনেক কম। অনেকের জন্যই এ ধরনের সাশ্রয়ী মূল্যে বাজার করার সুযোগ বিশেষভাবে সহায়তা করছে। তারা আশা করেন, এ ধরনের কার্যক্রম চালু থাকলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ কিছুটা হলেও কমবে।
Face of Bangladesh এর সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ জানান, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবজির দাম। এজন্য তারা সাতটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়ে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির এ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, “বাজারে বর্তমানে কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণে নেই। গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবজির বাজার। তাই আমরা সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি শুরু করেছি। এই কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে, যা আমাদের উৎসাহিত করছে। আমাদের লক্ষ্য সবজি সিন্ডিকেট ভাঙা এবং আমরা ইনশাআল্লাহ সফল হবো।”
Face of Bangladesh এর সহ আইটি সেক্রেটারি মেহেদি হাসান বলেন, “আমরা এই উদ্যোগের মাধ্যমে সবজির ক্রয়কৃত মূল্যে বিনা লাভে বিক্রি করছি। আমরা সবজি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি এবং বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম চলবে।”
বাজার সিন্ডিকেটের কারণে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ন্যায্যমূল্যে সবজি পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা মনে করে, যদি এভাবে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাজারের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসবে।
আরো পড়ুন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত ঘোষণা করেছে
শুধু মগবাজার নয়, ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও যেমন, ForumSDA, খোঁজ ফাউন্ডেশন, অদম্য ,শব্দশূন্য ও ডেমরা গ্রুপ একই ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। এসব সংগঠন নিজেদের প্রচেষ্টা দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে চায়।
বর্তমান সময়ে বাজারে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
এই পরিস্থিতিতে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো জানায়, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাদের লক্ষ্য হলো, সাধারণ মানুষের জন্য সবজি সহজলভ্য করা এবং বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করা। তারা আশা করে, তাদের প্রচেষ্টায় বাজার পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে এবং সাধারণ মানুষ আবারও ন্যায্যমূল্যে সবজি কিনতে পারবে।
এই কার্যক্রমকে আরও সফল করতে সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে পরিচালিত এ উদ্যোগে যদি সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে আরও বেশি মানুষ এই সেবা গ্রহণ করতে পারবে। সরকার যদি বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর এ কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছে। অনেকে তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।
গৃহিণী থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মজীবী মানুষ, সবার জন্যই এ উদ্যোগ বিশেষভাবে সহায়ক হচ্ছে। মানুষ মনে করছে, এ ধরনের উদ্যোগ সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
বাজার সিন্ডিকেটের কারণে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া সবজির দাম সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির এ কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর এ ধরনের উদ্যোগ শুধু বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নয়, এটি সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের সহানুভূতিরও একটি নিদর্শন।
এ কার্যক্রম সফল করতে হলে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। যদি সকলের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, তাহলে বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ মানুষের জন্য একটি ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
Leave a Reply