আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে ইসরায়েলি চিকিৎসকের ময়নাতদন্তে নতুন তথ্য

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে ইসরায়েলি চিকিৎসকের ময়নাতদন্তে নতুন তথ্য

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু
ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে ইসরায়েলি চিকিৎসকের ময়নাতদন্তে নতুন তথ্য

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে। ইসরায়েলের চিকিৎসক ড. চেন কুগেল তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, সিনওয়ারের মৃত্যু মূলত হয়েছে মাথায় গুলির আঘাতে। এই তথ্যটি নতুন এবং এর সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে হামাসের শাসক গোষ্ঠীর দাবির।

হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সিনওয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, সিনওয়ার ট্যাংকের গোলার আঘাতে মারা গেছেন। তবে ময়নাতদন্তের ফলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তার মৃত্যুতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে মাথায় গুলির আঘাত।

 

সিনওয়ারের মৃত্যুর ময়নাতদন্ত

ইসরায়েলের চিকিৎসক ড. চেন কুগেল সিনওয়ারের মরদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিএনএনকে জানিয়েছেন, তার মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো মাথায় গুলির আঘাত। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, “তার মাথায় একটি গুলি পাওয়া গেছে, যা তার মস্তিষ্কে আঘাত করে ক্ষত সৃষ্টি করেছে।” এই আঘাতই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর আগের

হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর আগের ছবি

ড. কুগেল আরও বলেন, “তার দেহে আরও অনেক আঘাত ছিল। বিশেষত ডান বাহুতে মিসাইলের আঘাত ছিল এবং বাম পা বা উরুতে ভবন ধসে পড়ার কারণে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে মিসাইলের শার্পনেলও প্রবেশ করেছিল। এই শার্পনেলগুলো তার বুকে ছিল এবং তা তার শরীরে ব্যাপক ক্ষতি করে।”

তবে ড. কুগেল উল্লেখ করেছেন যে, যদিও শরীরে মিসাইলের আঘাতের ক্ষতি ছিল, মূলত মাথায় গুলির আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ।

 

ইসরায়েলি এবং হামাসের বক্তব্যের মিল-অমিল

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল যে, সিনওয়ার ট্যাংকের গোলার আঘাতে মারা গেছেন। যদিও তার দেহে ট্যাংকের গোলার আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তবু তার মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে গুলির আঘাতকেই চিহ্নিত করেছেন ড. চেন কুগেল।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে বাড়িতে সিনওয়ার ছিলেন, সেখানে ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়ার আগে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। এই তথ্য ময়নাতদন্তের ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, সিনওয়ারের দেহে গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রের গোলাগুলির সময় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, হামাসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, ইয়াহিয়া সিনওয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইরত অবস্থায় মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের ফলাফল এবং হামাসের দাবির মধ্যে একটি মিল পাওয়া গেছে, কারণ উভয় পক্ষই গুলির আঘাতের বিষয়টি উল্লেখ করেছে।

সিনওয়ারের মরদেহ এবং তার মৃত্যুর সময়

সিনওয়ারের মৃত্যু কবে হয়েছিল, তা নিয়ে ড. চেন কুগেলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “আমার ধারণা বুধবার বিকালের দিকে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর ২৪ ঘণ্টা পর তার মরদেহ ইসরায়েলের তেলআবিবে নিয়ে যাওয়া হয়।”

ময়নাতদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মরদেহটি ছিল ইয়াহিয়া সিনওয়ারের। এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর ইসরায়েলি এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।

হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের প্রোফাইল

ইয়াহিয়া সিনওয়ার ছিলেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জ আদ-দিন আল-কাসাম ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান নেতা। গাজার শাসক গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। হামাসের এই নেতা গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

সিনওয়ারের নেতৃত্বে হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। তার রাজনৈতিক ও সামরিক দক্ষতা তাকে হামাসের অন্যতম শক্তিশালী নেতায় পরিণত করেছিল।

ইসরায়েলের কাছে তিনি একজন শীর্ষ শত্রু হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। এর আগে তিনি ইসরায়েলি কারাগারে দীর্ঘদিন আটক ছিলেন এবং ২০১১ সালে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান। মুক্তির পর তিনি হামাসের নেতৃত্বে ফিরে আসেন এবং গাজার প্রতিরোধ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সিনওয়ারের মৃত্যু: রাজনৈতিক ও সামরিক প্রেক্ষাপট

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। তার নেতৃত্বে হামাস গাজার প্রতিরোধ যুদ্ধে সফলতা অর্জন করেছিল এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছিল। তার মৃত্যুতে হামাসের সামরিক শাখা এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে একটি শূন্যতা তৈরি হতে পারে।

সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের জন্য কেবল সামরিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবে একটি বড় আঘাত। কারণ, তিনি ছিলেন হামাসের রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে হামাস গাজার শাসনকাজ পরিচালনা করত এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিত।

আরো পড়ুন- সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে ৪২ দিন পর নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম শুরু

হামাসের প্রতিক্রিয়া

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুতে হামাসের শাসক গোষ্ঠী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা ঘোষণা করেছে যে, তাদের নেতা যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হয়েছেন এবং তারা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। হামাসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, সিনওয়ারের মৃত্যু তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধকে দুর্বল করতে পারবে না, বরং এটি আরও শক্তিশালী করবে।

হামাসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সিনওয়ার ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার মৃত্যুর ফলে গাজার রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিস্থিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের বিশ্লেষণ করছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে এই ঘটনা একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধানের জন্য আলোচনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলে এই ঘটনার পর পরই সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনা ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে আরও বেশি বিদ্রোহের সৃষ্টি করতে পারে এবং গাজা উপত্যকায় সহিংসতা বাড়তে পারে।

ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুতে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ রয়েছে।

হামাসের নেতৃত্বে এখন নতুন নেতৃত্বের উত্থান ঘটবে এবং তারা কীভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনা করবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিনওয়ারের মৃত্যুর পর হামাসের সামরিক এবং রাজনৈতিক শাখা নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন এখন একটি নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে, যেখানে সিনওয়ারের মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানা ধরনের মতভেদ রয়েছে।

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য থাকলেও ময়নাতদন্তের ফলাফল প্রমাণ করেছে যে, তিনি মাথায় গুলির আঘাতে নিহত হয়েছেন।

সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের প্রতিরোধ যুদ্ধে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে। তার নেতৃত্বে হামাস ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। এখন দেখার বিষয়, তার মৃত্যুর পর হামাসের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কেমন হবে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের গতিপথ কীভাবে পরিবর্তিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web