আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন
ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী অর্থনীতিতে ঋণ নেওয়া বা দেওয়া অবশ্যই নির্দিষ্ট নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইসলাম ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সুদের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং ঋণগ্রহীতা ও ঋণদাতার অধিকার সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে। ইসলামী শরিয়াহ্ অনুযায়ী ঋণ সম্পর্কিত বিধান এবং এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করার আগে, ইসলামী অর্থনীতিতে ঋণ আদানপ্রদান সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেওয়া হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ হলো একটি চুক্তি বা দায়বদ্ধতা, যেখানে ঋণদাতা কোনো বস্তু, অর্থ বা সম্পদ ঋণগ্রহীতাকে প্রদান করেন, যা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত দেওয়ার শর্তে নেওয়া হয়। ঋণকে সাধারণত দুটি প্রকারে ভাগ করা যায়:
ইসলামিক অর্থনীতিতে ঋণের এই প্রকারভেদগুলি সুদের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে গড়ে উঠেছে, যা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে সুদকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এটি দারিদ্র্য সৃষ্টি করে এবং সমাজে বৈষম্য ও শোষণ বৃদ্ধি করে।
কোরআনের নির্দেশনায় সুদ: সুরা আল-বাকারা (২:২৭৫) আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যারা সুদ গ্রহণ করে তারা কেয়ামতের দিন দাঁড়াবে সেই ব্যক্তির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে।” এই আয়াত থেকে সুদের প্রতি ইসলামের কঠোর মনোভাব পরিষ্কার বোঝা যায়।
সুদের বিরুদ্ধে হাদিসের বক্তব্য: হাদিসে সুদের বিষয়ে প্রায় ৭০টিরও বেশি নিন্দামূলক বাণী পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুদ খায় এবং যে ব্যক্তি সুদ দেয় উভয়েই অভিশপ্ত।” (সহীহ মুসলিম)।
ইসলাম ঋণগ্রহীতা ও ঋণদাতার মধ্যে একটি ন্যায়সংগত এবং মানবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ঋণ প্রদানের ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ করেছে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সচ্ছলতা এবং মানবতার সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। নিচে কিছু প্রধান নীতিমালা আলোচনা করা হলো:
ইসলামি অর্থনীতিতে সুদের বিকল্প হিসেবে ঋণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যা মানবিকতা এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে কাজ করে। এ ধরনের কয়েকটি ব্যবস্থা হলো:
ইসলাম ঋণ আদানপ্রদানে কিছু সতর্কতা এবং সতর্কবার্তা দিয়েছে। এ ধরনের সতর্কতা ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতার মধ্যে সঠিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। কিছু প্রধান সতর্কতা হলো:
ইসলামে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সামাজিক দায়িত্বের গুরুত্বও বিবেচনা করা হয়েছে। ঋণদাতা যখন ঋণ দেয়, তখন সে ঋণগ্রহীতার প্রতি সহানুভূতি এবং দয়া প্রদর্শন করে। এটি সমাজে মানবতার চর্চা বাড়ায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “যারা ঋণগ্রহীতাকে সাহায্য করে, তারা আল্লাহর কাছ থেকে বড় পুরস্কার পাবে।” (সুরা আল-মায়িদা, ৫:৪২)।
এই সামাজিক দায়িত্ব পালন করলে একটি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং সম্পদের ন্যায্য বণ্টন ঘটে। ঋণ প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই কারণে দানশীলতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে এবং সুদের প্রলোভনে না পড়ে শুদ্ধ ও মানবিকভাবে ঋণ প্রদানের চেষ্টা করতে হবে।
ইসলামিক অর্থনীতিতে ঋণ আদানপ্রদান কেবল একটি অর্থনৈতিক লেনদেন নয়, বরং এটি সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিকতা এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত একটি ব্যবস্থা। সুদের নিষেধাজ্ঞা সমাজে সমতা এবং শোষণমুক্ত অর্থনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে। ইসলামের এসব বিধান আধুনিক অর্থনীতিতে ঋণপ্রদানের প্রক্রিয়ায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা একদিকে ঋণগ্রহীতার সুরক্ষা নিশ্চিত করে, অন্যদিকে ঋণদাতার নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে উৎসাহিত করে।
ঋণ আদানপ্রদানের এই বিধানগুলো শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, বরং ব্যবসায়িক, সামাজিক, এবং রাষ্ট্রিয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও প্রভাব বিস্তার করে। ইসলামি অর্থনীতি শুধুমাত্র লাভের ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং নৈতিকতা, মানবতা এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়ার কারণে এটি আধুনিক অর্থনীতির একটি দিকপাল হিসেবে বিবেচিত।
Leave a Reply