আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংক এবং আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে পাঁচ বছরের জন্য আয়করমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। গত বৃহস্পতিবার (তারিখ উল্লেখিত) এনবিআর থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত আয়করমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়েছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর শুধু আয়কর রিটার্ন দাখিল করবে। এছাড়াও আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের দান করা অর্থের ওপরও ২০২৯ সাল পর্যন্ত কোনো আয়কর আরোপ করা হবে না।
এই ঘোষণা দুই প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সুবিধা ও করমুক্তি প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই করমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছিল। ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যার মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সালে এই অধ্যাদেশ বাতিল করে সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করলেও গ্রামীণ ব্যাংকের করমুক্ত সুবিধা বহাল ছিল। তবে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করে এই সুবিধা বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
গ্রামীণ ব্যাংক বর্তমানে ১ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার সদস্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৭১ লাখ ৬০ হাজার ঋণগ্রহীতা সদস্য ঋণ নিয়েছেন প্রায় ২৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটির সদস্যদের ঋণের স্থিতি ১৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, আর সঞ্চয় স্থিতি ২২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। এই বিপুল সংখ্যক সদস্যের জন্য আয়করমুক্তির সিদ্ধান্ত তাদের আর্থিক সুবিধা এবং ব্যাংকটির ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “নামে ব্যাংক হলেও গ্রামীণ ব্যাংক বাস্তবে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে নিবন্ধন নেওয়া সব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানই আয়করমুক্ত। বিশেষ আইনে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককেও এমআরএ থেকে নিবন্ধন নিতে হয় না। ফলে আয়কর অব্যাহতি পাওয়াটা গ্রামীণ ব্যাংকের ন্যায্য অধিকার।”
এনবিআর এর প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংককে প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে, কিন্তু তাদের আয়কর দিতে হবে না। এটি ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে নতুন গতি যোগ করবে এবং তাদের আর্থিক শক্তি আরও বৃদ্ধি করবে।
আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান যা ২০১৭ সালে শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই দাতব্য কার্যক্রমে যুক্ত ছিল, এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও করোনাকালে তাদের কার্যক্রমের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। ফাউন্ডেশনটি ২০২০ সালের করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় দাতব্য কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা এবং ২০২৩ সালের আগস্টের বন্যার সময় আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ব্যাপক মাত্রায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্পের সময় ফাউন্ডেশনটি তুরস্কে শীতবস্ত্র পাঠিয়ে মানবিক সহায়তা করেছে।
আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে পাঁচ বছরের জন্য আয়করমুক্ত সুবিধা দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তারা কোনও ধরনের সরকারি অনুদান পাবেন না। এটি তাদের দাতব্য কার্যক্রমে আরও উৎসাহ যোগাবে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সাহায্য করতে সক্ষম করবে। ২০২৩ সালে তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্পের সময়ে সংগঠনটির শীতবস্ত্র পাঠানোর উদ্যোগ এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য ১০০ কোটি টাকার সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য নিঃসন্দেহে তাদের কার্যক্রমের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আরও জানুন –টাটা ট্রাস্টে নতুন চেয়ারম্যান নোয়েল নাভাল টাটা,
গ্রামীণ ব্যাংক এবং আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে করমুক্ত সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সরকার তাদের আর্থিক এবং দাতব্য কার্যক্রমকে উত্সাহিত করছে। এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতি এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই আয়করমুক্ত সুবিধা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে এবং সদস্যদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গ্রামীণ ব্যাংককে আয়করমুক্ত সুবিধা পুনর্বহাল করার মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে পুনরায় উজ্জীবিত করার সুযোগ দিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটি নতুন বিনিয়োগ এবং ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যদিকে, আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের দাতব্য কার্যক্রমে সরকারের এই করমুক্ত সুবিধা তাদের আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ দেবে, যা দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
গ্রামীণ ব্যাংক এবং আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে পাঁচ বছরের জন্য আয়করমুক্ত সুবিধা প্রদান সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত। এটি আর্থিক এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এই করমুক্ত সুবিধা দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
Leave a Reply