আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ এ শীর্ষ ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়

‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ এ শীর্ষ ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়

'টাইমস হায়ার এডুকেশন' এ শীর্ষ ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়

‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ এ শীর্ষ ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়

সম্প্রতি ২০২৫ সালের জন্য টাইমস হায়ার এডুকেশন (THE) তাদের নতুন র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে, যা বিশ্বের শীর্ষ ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা। এই র‌্যাঙ্কিং শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা, শিক্ষা মান, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ এবং স্নাতকপদ গ্রহণকারীদের কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে করা হয়। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো, বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই সেরা ৮০০-র তালিকায় স্থান পায়নি।

র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান

এবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাকিস্তানের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। ভারতের প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc), বিভিন্ন আইআইটি (Indian Institutes of Technology) এবং কিছু অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট সফলভাবে সেরা ৮০০-র মধ্যে স্থান ধরে রেখেছে। পাকিস্তানেরও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যেমন কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয় এবং লাহোর ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস (LUMS) সেরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই অবস্থানগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষার অবকাঠামো ও গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা

বাংলাদেশের মোট ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ৮০০-এর পরে তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ৮০১ থেকে ১০০০ এর মধ্যে অবস্থান করছে:
১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
২. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৩. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪. যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৫. নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

অন্যদিকে ১০০১ থেকে ১২০০ এর মধ্যে রয়েছে:
– বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
– বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
– ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
– চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
– খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
– রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
– আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
– খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
– রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
– চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৫০০ এর পরে।

এত বড় একটি তালিকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুপস্থিতি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের অভাব, পর্যাপ্ত বিনিয়োগের ঘাটতি, এবং আন্তর্জাতিক স্তরে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা এর মূল কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রায়ই দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে এদের প্রতিযোগিতা করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, গবেষণার সুযোগ এবং বৈশ্বিক সংযোগের ঘাটতি রয়েছে।

আরও জানুন –বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা

টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিং কীভাবে কাজ করে?

টাইমস হায়ার এডুকেশন বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিংয়ে বিভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহার করে। এর মধ্যে প্রধান মানদণ্ডগুলো হলো:

  1. গবেষণা মান ও প্রভাব: বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের গুণগত মান এবং সেই গবেষণার বিশ্বব্যাপী প্রভাব কীভাবে পড়ছে।
  2. শিক্ষার মান: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান, স্নাতকদের দক্ষতা এবং শিক্ষকদের মানের ওপর ভিত্তি করে এই মানদণ্ড নির্ধারিত হয়।
  3. আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ: বিদেশি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সংখ্যা, এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা।
  4. বিনিয়োগ ও সুযোগ: বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও অবকাঠামোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা।
  5. কর্মসংস্থান ও স্নাতকদের সফলতা: স্নাতক হওয়ার পর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের অবদান।

কেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সেরা তালিকায় স্থান পেল না?

১. গবেষণার নিম্নমান

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণার মানে পিছিয়ে থাকা একটি বড় কারণ। অনেক প্রতিষ্ঠানেই গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব রয়েছে এবং গবেষকরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সহায়তা পান না। গবেষণা মূলত বৈশ্বিক মানদণ্ডে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

২. শিক্ষার মানের ঘাটতি

বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।

৩. আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অভাব

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক সংযোগের অভাবও উল্লেখযোগ্য। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম এবং আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের হারও কম। এটি র‌্যাঙ্কিংয়ে একটি বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৪. বিনিয়োগের অভাব

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত অর্থায়নের ঘাটতি রয়েছে। গবেষণা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করা হচ্ছে না। ফলে বৈশ্বিক মঞ্চে প্রতিযোগিতা করার মতো উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।

ভারত ও পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাফল্যের কারণ

ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিংয়ে নিয়মিতভাবে স্থান পাচ্ছে। এর পেছনের কয়েকটি কারণ হলো:

  1. প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন: ভারতের বিভিন্ন আইআইটি এবং পাকিস্তানের কিছু উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গবেষণা ও উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের গবেষণাগুলোর প্রভাব আন্তর্জাতিকভাবে অনুভূত হয়।
  2. আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা: শিক্ষাক্রম উন্নয়নের পাশাপাশি, শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্যও এই দেশগুলো উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে।
  3. বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক সংযোগ: এই দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং গবেষণা সহযোগিতার হারও তুলনামূলকভাবে বেশি।

কীভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নতি করতে পারে?

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেরা ৮০০-র মধ্যে প্রবেশ করতে হলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে।

  1. গবেষণার মান বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করার জন্য গবেষণাকারীদের পর্যাপ্ত তহবিল ও সুযোগ প্রদান করা প্রয়োজন। গবেষণা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে, বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি সামাজিক গবেষণার উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
  2. শিক্ষার মান উন্নয়ন: শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষাপদ্ধতির সাথে পরিচয় করাতে হবে। শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, এবং প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি।
  3. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো: বিদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আকর্ষণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক সংযোগ বাড়াতে হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যৌথ গবেষণা এবং বিনিময় কর্মসূচির সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার।
  4. উন্নত অবকাঠামো ও বিনিয়োগ: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নত অবকাঠামো তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। গবেষণা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো উচিত।

টাইমস হায়ার এডুকেশনের ২০২৫ সালের র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান না পাওয়া হতাশাজনক হলেও এটি একটি সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য এটি একটি জাগরণ। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, তবে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানের তালিকায় তাদের স্থান পাওয়া সম্ভব।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web