আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়
বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

বুধবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বায়ুদূষণের মান পরিমাপকারী আইকিউএয়ারের সূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৭৩, যা “অস্বাস্থ্যকর” হিসেবে বিবেচিত হয়। বায়ুদূষণের এই অবস্থা ঢাকার জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে এবং নাগরিকদের সুরক্ষায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

আইকিউএয়ারের বায়ু মান সূচক: ঢাকার দূষণ পরিস্থিতি

বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

আইকিউএয়ার, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি সংস্থা, নিয়মিত বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণ পরিমাপ করে এবং তাৎক্ষণিক বায়ুর মান সূচক প্রকাশ করে। এই সূচক শহরের বায়ুর মান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বুধবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে, ঢাকার স্কোর ১৭৩ ছিল, যা “অস্বাস্থ্যকর” বায়ু হিসেবে গণ্য করা হয়। বায়ুমানে এই অবস্থান নাগরিকদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

বায়ুদূষণের শীর্ষে বাগদাদ ও দিল্লি

একই সময়ে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষিত শহরগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল ইরাকের বাগদাদ, যার স্কোর ছিল ২১৫। ভারতের দিল্লি দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল, স্কোর ১৮১। এই দুই শহরের বায়ুর মানকেও “অস্বাস্থ্যকর” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ঢাকার বর্তমান বায়ুদূষণের অবস্থা সামান্য ভালো হলেও তা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

বায়ুদূষণ সূচকের স্তর ব্যাখ্যা

আইকিউএয়ারের বায়ু মান সূচক অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে “মাঝারি” বা গ্রহণযোগ্য বায়ু হিসেবে ধরা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য “অস্বাস্থ্যকর” হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাদের মধ্যে শিশু, বয়স্ক, অসুস্থ এবং অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা অন্তর্ভুক্ত। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে “অস্বাস্থ্যকর” বলে গণ্য করা হয়, যা কোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর।

আরও জানুন –পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জন হোপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টন

ঢাকার বায়ুদূষণ: প্রধান উপাদান ও কারণ

বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

ঢাকার বায়ুদূষণের মূল উপাদান হলো পিএম ২.৫ নামে পরিচিত ক্ষুদ্র বস্তুকণা, যা বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে মিশে আছে। এই বস্তুকণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে, যা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুযায়ী, পিএম ২.৫-এর বর্তমান উপস্থিতি ঢাকার বায়ুতে ১৬ শতাংশ বেশি। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো:

  1. যানবাহনের কালো ধোঁয়া: ঢাকার প্রধান সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে, যা প্রচুর ধোঁয়া নির্গত করে বায়ুদূষণের সৃষ্টি করছে।
  2. বাণিজ্যিক ও শিল্পকর্মের বর্জ্য: বিভিন্ন কলকারখানা ও নির্মাণকাজের ধুলা এবং ধোঁয়া বায়ুমানকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।
  3. ইটভাটা: ঢাকার আশেপাশে থাকা বহু ইটভাটা থেকে প্রতিনিয়ত কার্বন নির্গত হচ্ছে, যা বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
  4. নির্মাণকাজ ও রাস্তার ধুলো: ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত নির্মাণকাজ এবং রাস্তার ধুলোও দূষণের অন্যতম উৎস।

ঢাকার কিছু অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দূষণ

বুধবার সকালে ঢাকার কিছু অঞ্চলে বায়ুদূষণের অবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ ছিল। বিশেষ করে আইসিডিডিআরবি, মার্কিন দূতাবাস, এবং গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আশপাশের এলাকাগুলোর স্কোর যথাক্রমে ২৪১, ২০৪ ও ১৮৪ ছিল। এই স্থানগুলোর দূষণ অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি

বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

ঢাকার বায়ুদূষণের এই মারাত্মক অবস্থা বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। বায়ুতে পিএম ২.৫-এর উচ্চমাত্রার উপস্থিতি শ্বাসযন্ত্রের অসুখ, অ্যাজমা, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ অন্যান্য মারাত্মক অসুখ সৃষ্টি করতে পারে। ঢাকার এই দূষিত বায়ু প্রতিদিনের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে এবং মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বায়ুদূষণ প্রতিরোধে করণীয়

ঢাকার বায়ুদূষণের এই অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য নাগরিকদের কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আইকিউএয়ার থেকে বিভিন্ন সুরক্ষা পদক্ষেপের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে:

  1. বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন: বায়ুদূষণ থেকে সুরক্ষা পেতে বাইরে বের হলে উচ্চমানের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
  2. ব্যায়াম সীমিত করুন: দূষিত বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া ক্ষতিকর হতে পারে, তাই বাইরে খোলা জায়গায় ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
  3. জানালা বন্ধ রাখুন: বাড়িতে থাকার সময় জানালা বন্ধ রাখার মাধ্যমে বাইরের দূষিত বায়ু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
  4. বাতাস পরিশোধক ব্যবহার করুন: বাড়িতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ বায়ুর মান উন্নত করা যেতে পারে।

বায়ুদূষণ কমাতে সরকারের করণীয়

সরকারকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  1. পরিবেশবান্ধব যানবাহন: কালো ধোঁয়া নির্গত করা যানবাহনের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব যানবাহনের প্রচলন বাড়ানো।
  2. ইটভাটার আধুনিকীকরণ: পুরনো প্রযুক্তির ইটভাটার পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
  3. শিল্পকারখানা নিয়ন্ত্রণ: কলকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি অবলম্বন করা।

ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা

বায়ুদূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও ঢাকার পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। ভবিষ্যতের জন্য এই সমস্যার সমাধান করতে সরকার এবং সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে না আনলে ভবিষ্যতে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী হবে।

ঢাকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ঢাকার বায়ুদূষণের সমস্যা সমাধানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য ঢাকায় আরও সবুজায়ন প্রয়োজন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নতুন গাছপালা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করবে।

বায়ুদূষণ ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এবং এর প্রভাব এখনই স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকার, নাগরিক এবং পরিবেশবিদদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকার বাতাসকে নির্মল করা সম্ভব। বায়ুদূষণ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web