আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
১-০ গোলে ফিলিপাইনকে হারিয়ে সাফল্যের পথে বাংলাদেশের তরুণরা।বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে আজকের দিনটি উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। কাঠমান্ডুতে চলমান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলে সেমিফাইনালে পৌঁছানোর সুখবর পাওয়া মাত্রই, আরেকটি সাফল্যের আলো দেখা গেল কম্বোডিয়ার নমপেন থেকে। সেখানে, এএফসি অনূর্ধ্ব–১৭ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচে ফিলিপাইনকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ দল উৎসবমুখর একটি দিন উপহার দিল ফুটবলপ্রেমীদের।
এই জয় শুধু ফিলিপাইনের বিপক্ষে নয়, বরং দেশের ফুটবলের উন্নয়ন, নতুন প্রতিভা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই জয়ের সঙ্গে রয়েছে কিছু আক্ষেপও। সাইফুল বারীর শিষ্যরা প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে হারিয়ে যে হতাশায় ছিল, তা এই জয়ে কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩-১ গোলের জয়টি ছিল দেশবাসীর জন্য আনন্দের। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ নারী দল দেখিয়েছে তাদের শক্তি ও দক্ষতা। আর ঠিক সেই সময়ে নমপেন থেকেও এসেছে আরেকটি সুখবর। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচে ফিলিপাইনের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় অর্জন করেছে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ দল।
এই জয়ের নায়ক শফিক রহমান, যিনি ১৮ মিনিটের মাথায় একটি দারুণ ফ্রি কিকে গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। তবে এই গোলের পিছনে মূল অবদান ছিল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আরহাম ইসলামের। আরহাম তার অসাধারণ স্কিল প্রদর্শন করে ফিলিপাইনের চার ডিফেন্ডারকে ছিটকে বেরিয়ে আসেন এবং বক্সের ঠিক বাইরে ফাউলের শিকার হন। এরপর শফিক সেই ফ্রি কিক থেকে দর্শনীয় এক গোল করেন।
যদিও ফিলিপাইনের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশ দলের জন্য দারুণ প্রাপ্তি, তবে প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ের হতাশা তাদের পিছু ছাড়েনি। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ১০ জনের কম্বোডিয়ার বিপক্ষে একাধিপত্য সত্ত্বেও গোল করতে না পারা ছিল দলের বড় ব্যর্থতা। প্রায় পুরো ম্যাচজুড়ে বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের, কিন্তু স্কোরলাইন সমান রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা। এই ব্যর্থতা আজকের জয়ে কিছুটা ভুলে গেলেও, আক্ষেপ থেকে যাবে।
ফিলিপাইনের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দল ভালো খেলেছে। পুরো ম্যাচ জুড়েই তারা বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে স্কোরিংয়ের দুর্বলতা আজও স্পষ্ট ছিল। বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ, যা তাদের জন্য বড় একটি সমস্যা। তবে ফিলিপাইনের বিপক্ষে জয়ের ফলে দলের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়েছে।
ম্যাচের শুরুর দিক থেকেই বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। আরহাম ইসলাম এবং শফিক রহমানের মধ্যে দারুণ সমন্বয় দেখা যায়। শফিকের গোলটি ম্যাচের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত করে। ফিলিপাইনের ডিফেন্ডাররা বক্সের সামনে জমাট থাকলেও বাংলাদেশের আক্রমণ তাদের জন্য কঠিন মুহূর্ত তৈরি করে।
বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ দল বর্তমানে বেশ ভালো ফর্মে রয়েছে। দলের মধ্যে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা দারুণ নৈপুণ্য দেখাচ্ছে। বিশেষ করে আরহাম ইসলাম এবং শফিক রহমানের মতো খেলোয়াড়রা দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতিভা, দক্ষতা এবং আক্রমণাত্মক ফুটবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
এই দলটির পারফরম্যান্স শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের জন্যও ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এভাবে ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্স করতে পারলে বাংলাদেশের ফুটবল মানচিত্রে নিজেদের জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ দলের কোচ সাইফুল বারী খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে খুশি, তবে প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতায় এখনো আক্ষেপ রয়েছে। তিনি মনে করেন, দলের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা আছে, কিন্তু স্কোরিংয়ে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বড় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আরহাম ইসলাম এবং শফিক রহমানের মতো খেলোয়াড়দের আরো উন্নতি করতে হবে এবং তাদের ফিনিশিং ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়াও, পুরো দলের ডিফেন্সিভ স্কিল উন্নত করা জরুরি। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিরোধে আরো সুশৃঙ্খল হতে হবে।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দল তাদের জয়ে আশাবাদী হলেও সামনের চ্যালেঞ্জগুলো সহজ হবে না। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে, এবং সেই ক্ষেত্রে দলকে স্কোরিংয়ের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে।
আরো জানুন …...দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং এ ধরনের প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফল আনতে দলের প্রশিক্ষণ এবং পরিকল্পনায় আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার। ভবিষ্যতে তরুণ খেলোয়াড়দের গাইড করার জন্য একটি শক্তিশালী কোচিং স্টাফের প্রয়োজন হবে, যারা কৌশলগতভাবে দলকে আরো উচ্চমানের ফুটবল খেলতে সক্ষম করবে।
বাংলাদেশের ফুটবল দলের ফিলিপাইনের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। যদিও প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে পরাজয় তাদের জন্য আক্ষেপের, ফিলিপাইনের বিপক্ষে জয় দলকে নতুন আশা ও আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। শফিক রহমানের ফ্রি কিক থেকে গোল এবং আরহাম ইসলামের স্কিলফুল পারফরম্যান্স দলকে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করছে।
এই জয় বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং তাদেরকে একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করছে। তবে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, যা মোকাবিলার জন্য দলকে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং দক্ষ হতে হবে।
Leave a Reply