আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
হিজবুল্লাহর রকেট হামলা ইসরাইলি বিমান ঘাঁটিতে
লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ইসরাইলের রামাত ডেভিড বিমান ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানোর দাবি করেছে। এই হামলাটি চালানো হয় রোববার ভোরবেলা, যা হিজবুল্লাহর দাবি অনুযায়ী, লেবাননে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই হামলাটি ২০০৬ সালের পর থেকে হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যা ইসরাইলের হাইফার পূর্বে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়।
বৈরুত থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহ এই হামলার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারা এখন আরও শক্তিশালী এবং দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম। এই হামলা হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতার একটি বড় প্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ ২০০৬ সালের পর এই প্রথম তারা ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে এত দূরে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, হিজবুল্লাহর রকেট অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, যা রামাত ডেভিড বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে।
হিজবুল্লাহর দাবি অনুযায়ী, ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় লেবাননের বেসামরিক নাগরিকদের নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের বিস্তৃত বিমান হামলা এবং বেসামরিকদের হতাহতের ঘটনাগুলো নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা তৈরি হয়েছিল।
এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবানন থেকে মোট ১০টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে বেশিরভাগই ভূপাতিত করা হয়েছে। ইসরাইলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ কয়েকটি রকেটকে সফলভাবে আটকাতে সক্ষম হয়, তবে কিছু রকেট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ইসরাইলি বাহিনী এই হামলাকে তাদের ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
ইসরাইলি বাহিনী শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে শত শত বিমান হামলা পরিচালনা করেছে। এই হামলাগুলো হিজবুল্লাহর আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে ইসরাইল এখনো রোববারের হিজবুল্লাহর রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা হতাহতের তথ্য প্রকাশ করেনি।
এই রকেট হামলা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধ নতুন করে ঘনীভূত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা ইঙ্গিত দেয় যে হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা পূর্বের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে এবং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম।
২০০৬ সালের লেবানন-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর জন্য নানা ধরনের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছে এবং তাদের সামরিক সক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে হিজবুল্লাহর হাতে যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা ইসরাইলের জন্য বড় হুমকি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ বা হামলা নতুন কিছু নয়, তবে হিজবুল্লাহর এমন সরাসরি ও দূরপাল্লার আক্রমণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিজবুল্লাহর সামরিক ক্ষমতা ও তাদের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা আশঙ্কা করছেন, এমন আক্রমণ ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে এবং এতে উভয় পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যে বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, এবং এ ধরনের হামলা ও পাল্টা আক্রমণ নতুন সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বের বড় শক্তিগুলো এই অঞ্চলে সংঘাত বন্ধের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে লেবাননের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সময় এই সংঘর্ষ নতুন করে উত্তেজনা ও অবস্থা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একইসঙ্গে, ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘাত আরও বড় আকার ধারণ করলে এর প্রভাব শুধু লেবানন বা ইসরাইলে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হিজবুল্লাহর এই রকেট হামলা ইসরাইলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা তাদের সামরিক প্রস্তুতির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। এই হামলা ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দেশ কেমন পদক্ষেপ নেয় এবং আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে মধ্যস্থতা করতে পারে।
Leave a Reply