আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
হাইফা ও তাইবেরিয়াস শহরগুলোতে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর রকেট

হাইফা ও তাইবেরিয়াস শহরগুলোতে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর রকেট

হাইফা ও তাইবেরিয়াস শহরগুলোতে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর রকেট , মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন মাত্রা
হাইফা ও তাইবেরিয়াস শহরগুলোতে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর রকেট , মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন মাত্রা

হাইফা ও তাইবেরিয়াস শহরে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর রকেট, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন মাত্রা

আজ ৭ অক্টোবর, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় হাইফা ও তাইবেরিয়াস শহরগুলোতে ভয়াবহ রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এই হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে বিবিসি ও সিএনএনের লাইভ প্রতিবেদনে।

হিজবুল্লাহর দাবি ও হামলার প্রতিক্রিয়া

হিজবুল্লাহ তাদের বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলের কারমেল সামরিক ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, হাইফার দক্ষিণে একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘ফাদি ১’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। হামলার ফলে হাইফার র‍্যামবন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছয়জনের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর থেকে মাঝারি এবং বাকি চারজন হালকাভাবে আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, মেগান ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ), জানায় যে ঘটনাস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে আরও দুইজনকে। এর মধ্যে একজন ১৩ বছর বয়সী কিশোর, যিনি শার্পনেলের আঘাতে মাথায় আঘাত পেয়েছে, এবং একজন ২২ বছর বয়সী যুবক যিনি বিস্ফোরণের ফলে আহত হয়েছেন।

ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের এক বছর পূর্তি

এই হামলার ঘটনা ঘটে ঠিক ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হামাসের সঙ্গে সংঘাতের এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর ইসরায়েল পাল্টা প্রতিরোধ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়, যা আজও চলছে। ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক সামরিক পদক্ষেপে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এক বছর ধরে চলা এই সংঘাতে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল একের পর এক হামলা চালিয়েছে লেবানন ও সিরিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরও। গাজায় চলমান এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি লেবাননেও সংঘাতের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানার ঘোষণা দেয়, যার ফলে ইসরায়েলও লেবাননে আক্রমণ চালানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে।

লেবাননে ইসরায়েলি হামলা: যুদ্ধের সম্ভাব্য বিস্তার

ইসরায়েল সম্প্রতি লেবাননজুড়ে একাধিক আক্রমণ পরিচালনা করেছে। হিজবুল্লাহর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়, যেমন ওয়াকিটকি ও পেজার স্টেশনগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এছাড়া লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও ইসরায়েলি বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়েছে, যেখানে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল নাসরুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি কাশেমকে হত্যা করা, যদিও কাশেমের মৃত্যু নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েলের এই ধরনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা

ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননে স্থল অভিযানও শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে, এবং এর ফলে সংঘাতের মাত্রা পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সিরিয়া, ইরাক, লেবাননসহ পুরো অঞ্চলে এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এসব দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক।

আরও জানুন –তীব্র হচ্ছে ইরান -ইসরাইল যুদ্ধ

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব

যদি মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে এর প্রভাব শুধু সামরিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং অর্থনৈতিক, মানবিক এবং সামাজিক স্তরেও বিশাল পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। বিশ্বজুড়ে তেলের বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে, যার ফলে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

এছাড়া, বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও শঙ্কা দেখা দেবে, কারণ মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহের অন্যতম কেন্দ্র। যুদ্ধের কারণে এই সরবরাহ ব্যাহত হলে তার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

মানবিক দিক থেকেও এই যুদ্ধ আরও সংকট সৃষ্টি করতে পারে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে, সীমান্তে শরণার্থী সংকট সৃষ্টি হবে এবং খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের সঙ্কট তীব্র হবে। বিশ্বের বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে সহায়তার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাদের সহায়তা পর্যাপ্ত হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও শান্তি প্রক্রিয়া

যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তবে এই অঞ্চলের জটিল পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা যে কোনো সময়ে সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করছে।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো এই সংঘাত নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এ ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে, কারণ প্রায় প্রতিটি পক্ষই নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব বজায় রাখতে আগ্রহী।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের এই পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। লেবাননে ইসরায়েলি আক্রমণের প্রতিক্রিয়া এবং হিজবুল্লাহর জবাবী হামলার ফলে যুদ্ধের উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে এই যুদ্ধের প্রভাব কী হতে পারে তা স্পষ্ট নয়, তবে এটি নিশ্চিত যে এই সংঘাত শুধু ইসরায়েল ও লেবানন বা হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় সিরিয়া, ইরান, এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিও এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web