আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
হাঁটা-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ডায়াবেটিস এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা আজকাল অনেক মানুষের মধ্যে সাধারণ হয়ে উঠেছে। এই রোগটি যদি নিয়ন্ত্রিত না থাকে, তবে তা হৃৎপিণ্ড, কিডনি, চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ একটি সমাধান হলেও, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী এবং সহজলভ্য একটি পদ্ধতি হলো হাঁটা। নিয়মিত হাঁটলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
আজ আমরা জানবো কীভাবে হাঁটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, কতক্ষণ হাঁটা উচিত, এবং আরও কিছু কার্যকরী টিপস।
হাঁটার মাধ্যমে শরীরের পেশীগুলি সক্রিয় হয় এবং রক্তের গ্লুকোজ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ইনসুলিন হলো এমন একটি হরমোন যা রক্তের গ্লুকোজকে কোষে নিয়ে যায়, ফলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে আসে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমে থাকে। নিয়মিত হাঁটলে শরীর ইনসুলিন আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওজন বৃদ্ধি ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ। নিয়মিত হাঁটা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা ক্যালোরি বার্ন করে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমার সাথে সাথে রক্তে শর্করার পরিমাণও স্বাভাবিক হতে শুরু করে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রেস ও মানসিক চাপ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এর ফলে শরীরে করটিসল নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত হাঁটা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। এতে করটিসলের মাত্রা কমে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে নিয়মিত হাঁটা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কতক্ষণ হাঁটবেন, তা নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোর ওপর। তবে সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি গতিতে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট (৫ দিন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট) হাঁটার সুপারিশ করা হয়। এর পাশাপাশি, হাঁটার ধরনটিও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দ্রুতগতিতে হাঁটতে পারেন, তবে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে স্বাভাবিক এবং স্বাচ্ছন্দ্যভাবে হাঁটা উচিত।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হাঁটার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা উচিত। হাঁটার পদ্ধতি, গতি এবং সময়ের সমন্বয়ে এটি হতে পারে আরও কার্যকরী।
হাঁটা শুরুর আগে ৫-১০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং বা ওয়ার্মআপ করুন। এতে পেশীগুলি প্রস্তুত হয় এবং ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকি কমে।
আপনার হাঁটার গতি মাঝারি রাখা উচিত। এমন গতি ঠিক করুন, যাতে আপনার হার্টবিট একটু বাড়ে এবং আপনি হালকা শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন, তবে অতিরিক্ত দ্রুতগতিতে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন।
হাঁটার সময় আরামদায়ক জুতা পরা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক জুতা না পরলে পায়ের ইনজুরি বা ব্যথা হতে পারে। এছাড়া হালকা এবং আরামদায়ক পোশাক পরুন যাতে হাঁটার সময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
হাঁটতে যাওয়ার আগে এবং পরে পানি পান করা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পানিশূন্যতা ক্ষতিকর হতে পারে, তাই শরীরকে হাইড্রেট রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন- সুস্থভাবে রক্ত দিতে যা জানা জরুরি
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত হাঁটা প্রয়োজন। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে হাঁটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নয়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
হাঁটার সময় একটু দ্রুত গতিতে হাঁটা প্রয়োজন। অনেকেই খুব ধীরে হাঁটেন, যা শরীরের জন্য কার্যকরী ব্যায়াম হিসেবে কাজ করে না। আপনি যদি খুব ধীরে হাঁটেন, তবে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেমন সাহায্য করবে না। তাই মাঝারি গতিতে হাঁটা গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকেই খালি পেটে হাঁটতে পছন্দ করেন, তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। খালি পেটে হাঁটার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে নেমে যেতে পারে, যা আপনার শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই হালকা নাশতা করে হাঁটতে বের হন।
শুধু হাঁটলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, এর পাশাপাশি আরও কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলা উচিত।
সুষম খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। খাদ্যতালিকায় কম গ্লাইকেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার রাখতে হবে, যেমন- শাকসবজি, ফলমূল, পূর্ণ শস্য ইত্যাদি। এছাড়া চিনি এবং কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
ঘুমের অভাব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস শরীরে করটিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তাই নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম বা মনোযোগের অনুশীলন করতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছাড়াও নিয়মিত হাঁটার মতো সাধারণ অভ্যাস অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিটের মাঝারি গতিতে হাঁটা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও সুরক্ষিত রাখবে। এছাড়া, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
Leave a Reply