আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ অপরাহ্ন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার ভলগা তীরবর্তী কাজান শহরে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন এ বিষয়টি জোর দিয়ে তুলে ধরেন। এ সময় ফিলিস্তিনের নেতা মাহমুদ আব্বাসও উপস্থিত ছিলেন। পুতিন স্পষ্ট করে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বন্ধ হবে না।”
পুতিনের এই বক্তব্যটি এমন সময়ে আসে যখন মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে, গত এক বছর ধরে গাজায় চলমান সামরিক অভিযান ইসরায়েল ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলেছে। পুতিন আরও বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য বর্তমানে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।” বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রভাব যে এখন লেবাননে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটিও তিনি উল্লেখ করেন। এ প্রক্রিয়ায় এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পুতিন তাঁর ভাষণে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে এই সংঘাত শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বড় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। পুতিনের মতে, এই সংঘাত আরও প্রসারিত হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।
ভলগা তীরবর্তী কাজান শহরে অনুষ্ঠিত ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) শীর্ষ সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বৈঠকে পুতিনের এই বক্তব্য শুধু রাশিয়ার নয়, বরং সমগ্র ব্রিকস গোষ্ঠীর মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত অবস্থানকেও ইঙ্গিত করে। এই বৈঠকে বিশ্বের অন্যান্য প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংকট সমাধানে তাদের ভূমিকা কী হতে পারে, সেটি নিয়েও আলোচনা হয়।
পুতিন আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।” তাঁর মতে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া জোরদার করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে ব্রিকস দেশগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত সমাধান না হলে, আঞ্চলিক সহিংসতা কমবে না, এবং এর প্রভাব পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতিতে পড়বে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ইরান এবং সৌদি আরবের মতো তেল উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের কারণে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। পুতিনের মতে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে এবং তা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পুতিনের এই বক্তব্যের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কিছু দেশ পুতিনের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু মুসলিম দেশ, যারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলসহ কিছু দেশ পুতিনের এই বক্তব্যকে সমালোচনা করেছে এবং তাদের মতে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূলে আরও গভীর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা রয়েছে, যা এত সহজে সমাধান হবে না।
রাশিয়া সবসময় মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে এবং পুতিনের এই বক্তব্য সেটিকেই পুনরায় নিশ্চিত করে। রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাতে মধ্যস্থতা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তাদের এই ভূমিকা বজায় রাখতে আগ্রহী। পুতিনের মতে, রাশিয়া একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে প্রস্তুত, এবং এই প্রক্রিয়ায় রাশিয়া আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চায়।
ব্রিকস সম্মেলনে পুতিনের বক্তব্যের পাশাপাশি অন্যান্য নেতারাও মধ্যপ্রাচ্যের সংকট এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে, চীন এবং ভারতের মতো দেশগুলোও এই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ব্রিকস দেশগুলোর সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পুতিনের মতে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি আসবে না। তিনি বিশ্বাস করেন, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিতে পারে। তবে তার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকেও আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সমগ্র অঞ্চলে একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা যেন বাস্তব পদক্ষেপ নেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ এবং পুতিনের এই বক্তব্য সেই দীর্ঘ সংগ্রামের ওপর আলোকপাত করে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করে আসছে। এ সংঘাতের মূল কারণ ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, যা ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি থেকে তাদের বিতাড়িত করেছে। পুতিনের মতে, এই অন্যায়ের সমাধান না হলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
আরো জানুন …….‘দানা’র প্রভাবে ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াকে নতুন করে গুরুত্ব দিয়ে পুতিন দেখিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একতাবদ্ধ উদ্যোগই মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি। ব্রিকস সম্মেলনে তাঁর বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে রাশিয়ার অবস্থান পরিস্কার হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, পুতিনের এই বার্তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
Leave a Reply