আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
সোনার দামের উর্ধ্বগতি , সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে

সোনার দামের উর্ধ্বগতি , সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে

সোনার দামের উর্ধ্বগতি , সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে
সোনার দামের উর্ধ্বগতি , সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে

সোনার দামের উর্ধ্বগতি , সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে

দেশের বাজারে সোনার দামের উর্ধ্বগতি, যা সোনার অলংকার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে  এবং পুরোনো সোনা গচ্ছিত রাখা ব্যক্তিরা এর মূল্যবৃদ্ধি থেকে লাভবান হচ্ছেন। সোনার দাম কতটা বেড়েছে, সেটি বোঝাতে গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যাক। ২০২৩ সালের শুরুতে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ছিল ৮৮,৪১৩ টাকা, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা। ২১ মাসে দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা, যার মধ্যে চলতি বছরে ভরিতে দাম বেড়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৬৬৭ টাকা। এই প্রবণতা শুধু জাতীয় নয়, বরং বৈশ্বিক বাজারেও একই অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সোনার দামে বৈশ্বিক প্রভাব

বৈশ্বিক বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক অস্থিরতা এর প্রধান কারণ। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বিশেষ করে ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষ সোনার দামে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সোনার দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং এটি এখনও থেমে নেই। বৈশ্বিক সোনার বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম প্রথমবারের মতো আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চলতি মাসে এই দাম আরও বেড়ে ২ হাজার ৭০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে সোনার দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্বব্যাপী আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি সোনার দামের বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। করোনা মহামারির পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তও সোনার বাজারকে চাঙা করেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমিয়ে দেওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সোনার বাজারে আরও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, যা সোনার দামকে উর্ধ্বমুখী করেছে।

দেশের বাজারে প্রভাব

বাংলাদেশের বাজারেও সোনার দামের উর্ধ্বগতি নিয়ে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বেশ উদ্বিগ্ন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সোনার বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে। সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, যার ফলে অলংকারের বিক্রিও কমেছে। এতে সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে ।বিশেষ করে, গত দুই মাসে জুয়েলারি বিক্রি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ছোট এবং হালকা ওজনের গয়না তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হচ্ছে, তবে মোট বিক্রির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

আরও জানুন –নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি , ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

পুরোনো সোনার মূল্য বৃদ্ধি

সোনার দাম বৃদ্ধির একটি ভালো দিক হচ্ছে পুরোনো অলংকারের মূল্য বৃদ্ধি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৭০ সালে প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল মাত্র ১৫৪ টাকা। ১৯৮০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৭৫০ টাকা এবং ১৯৯০ সালে ৬,৫০০ টাকা। ২০০০ সালের মধ্যে সোনার ভরির দাম আরও বেড়ে হয় ৬,৫০০ টাকা।বর্তমানে ২২ ক্যারেট সোনার ভরির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে লাফিয়ে বাড়ছে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে সোনার ভরি ছিল ৮৮,৪১৩ টাকা। এরপর ২১ জুলাই ২০২৩ সালে এটি ১,০০,৭৭৭ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে এই দাম আরও বৃদ্ধি পেয়ে ১,১১,০৮১ টাকা হয়।তবে দাম বাড়ার এই ধারা এখানেই থেমে থাকেনি। ২০২৪ সালের ২১ আগস্টে সোনার দাম দাঁড়ায় ১,২৪,৫০২ টাকা, যা ক্রমশ বেড়ে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে এসে ১,৩৮,৭০৮ টাকা হয়ে গেছে।

এতে করে পুরোনো সোনা বিক্রি করে লাভের অঙ্ক বেড়ে গেছে। সাধারণত, পুরোনো সোনা বিক্রি করতে গেলে জুয়েলারি দোকানে ওজনের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ওজনের সঙ্গে সোনার ক্যারেটও নির্ধারণ করা হয়, এরপর ১৭ শতাংশ বাদ দিয়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়। আগে এই হার ছিল ২০ শতাংশ, যা এখন ৩ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে পুরোনো সোনা বিক্রি করে লাভের পরিমাণ আরও বেড়েছে।

যেমন, ২০২০ সালে ৬৯,৮৬৭ টাকায় কেনা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা বিক্রি করলে বর্তমানে পাওয়া যাবে ১ লাখ ১৫ হাজার ১২৭ টাকা, যেখানে লাভ হবে ৪৫ হাজার টাকারও বেশি। ২১ এবং ১৮ ক্যারেট সোনার জন্য লাভের পরিমাণ ভিন্ন হলেও মোটের ওপর পুরোনো সোনার দাম এখন খুবই আকর্ষণীয়।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ

সোনার দামের উর্ধ্বগতি তে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন অলংকার তৈরি এবং ক্রয় আদেশ কমে গেছে। ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যাও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। গত দুই দশকে স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। মূলত বিয়েশাদির মতো বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া এখন আর কেউ সোনা কেনার দিকে আগ্রহী নয়।

সোনার দামের ভবিষ্যৎ প্রবণতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার দামের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যদি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তবে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয় এবং ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সংঘাত বাড়ে, তবে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সোনার বাজারও আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈশ্বিক সোনার বাজারের অস্থিরতা দেশের বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সোনার দাম কমার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও করণীয়

ক্রমাগত সোনার দামের উর্ধ্বগতি তে জুয়েলারি শিল্পে টিকে থাকতে হলে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। প্রথমত, সোনার দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ছোট ও হালকা ওজনের গয়না তৈরির প্রবণতা বাড়ানো যেতে পারে। এতে ক্রেতারা সহজেই গয়না কিনতে পারবে এবং বিক্রিও বৃদ্ধি পাবে।

দ্বিতীয়ত, সোনার বিকল্প হিসেবে অন্যান্য মূল্যবান ধাতু যেমন প্লাটিনাম বা রূপার গয়নাও বাজারজাত করা যেতে পারে। এতে ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাবে এবং বিক্রয়ের সুযোগও বাড়বে।

তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে সোনার সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সোনা আমদানির প্রক্রিয়া সহজতর করতে হবে এবং অবৈধ সোনা আমদানি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

সোনার দাম বৃদ্ধি দেশের বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। সাধারণ মানুষের কাছে সোনা কেনা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে , কারণ সাধারণ মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে, এবং অনেক ব্যবসায়ী ও স্বর্ণশিল্পী সংকটে পড়েছেন। তবে পুরোনো সোনা বিক্রি করে লাভবান হওয়া সম্ভব। বৈশ্বিক বাজারের পরিস্থিতি যদি স্থিতিশীল না হয়, তবে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web