আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলন, পুলিশের বাধা ও জলকামান ব্যবহারে ছত্রভঙ্গ

সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলন, পুলিশের বাধা ও জলকামান ব্যবহারে ছত্রভঙ্গ

সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলন, পুলিশের বাধা ও জলকামান ব্যবহারে ছত্রভঙ্গ
সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলন, পুলিশের বাধা ও জলকামান ব্যবহারে ছত্রভঙ্গ

লাঠিপেটা ও জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করল পুলিশ

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বুধবার সকাল থেকে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষাজীবনের পর দীর্ঘ প্রস্তুতি ও উচ্চশিক্ষার পথে সময় পার করা এ তরুণদের দাবি, সরকারি চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক। সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে তাঁরা অপ্রতুল বলে দাবি করছেন, যা তাঁদের জন্য যথাযথ সমাধান আনতে ব্যর্থ। এদিকে, পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয় এবং জলকামান ও লাঠিচার্জ করে আন্দোলনটি ছত্রভঙ্গ করে।


কেন বয়সসীমা বৃদ্ধি জরুরি?

বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে আসছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের মতে, করোনাভাইরাস মহামারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ বন্ধ এবং কর্মসংস্থানের সংকট তাদের শিক্ষাজীবনের অগ্রগতি ও চাকরিতে প্রবেশকে বিলম্বিত করেছে। দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের একটি বিশাল অংশ এখনও চাকরি পেতে সক্ষম হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলেন, “যদি বয়সসীমা ৩৫ বছরে বৃদ্ধি করা হয়, তবে আরও অনেক তরুণের জন্য চাকরির দুয়ার উন্মুক্ত হবে।”

সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩২ বছর করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, এই পদক্ষেপ অপর্যাপ্ত। আন্দোলনকারীদের স্লোগানে উচ্চারিত হয়েছে, “তিন দশক নয়, সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ চাই,” এবং “বেকারত্ব দূরীকরণে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।”


সরকারি সিদ্ধান্তের পটভূমি এবং প্রেক্ষাপট

সরকারের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত আসে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিসিএসের আওতাধীন নয় এমন সরকারি ক্যাডারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করা হবে। এছাড়া, বিসিএসে আবেদনকারীরা সর্বাধিক তিনবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে এই সিদ্ধান্ত স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রযোজ্য হবে বলে জানা গেছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে ইতিবাচক মনে করলেও আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটি যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দাবি করছেন, উচ্চশিক্ষা এবং বিভিন্ন পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ৩২ বছরে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ হারান। ফলে তাঁদের জন্য ৩৫ বছর বয়সসীমা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


শাহবাগ থেকে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা

সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শাহবাগে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা সকাল থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন এবং সেখানে বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পদযাত্রা শুরু করেন এবং সচিবালয়ের দিকে যাত্রা করতে থাকেন। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর, যখন আন্দোলনকারীরা শিক্ষা ভবনের কাছাকাছি পৌঁছে যান, তখন পুলিশ তাঁদের বাধা দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং কেউ কেউ আহত হন।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার শিক্ষা ভবনের কাছে

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার শিক্ষা ভবনের কাছে

এক আন্দোলনকারী জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করছিলাম এবং আমাদের দাবি জানাতে সচিবালয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের উপর জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়েছে এবং লাঠিপেটা করেছে। এটা অমানবিক।”


পুলিশের বক্তব্য: জনদুর্ভোগ এড়াতেই বাধা

পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীরা অনুমতি ছাড়া পদযাত্রার আয়োজন করেছিল এবং এটি জনদুর্ভোগের কারণ হতে পারত। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, “শাহবাগ একটি ব্যস্ত এলাকা এবং পদযাত্রার কারণে অন্যান্য সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। সেজন্য আমরা তাদের বাধা দিয়েছি এবং ছত্রভঙ্গ করেছি।”

তবে আন্দোলনকারীরা পুলিশের এই পদক্ষেপকে অন্যায় এবং দমনমূলক বলে দাবি করেন। তাঁদের মতে, “আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানানো ও পদযাত্রা করার অধিকার রয়েছে। পুলিশ আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে।”


কেন ৩৫ বছরের দাবি?

আন্দোলনকারীদের মতে, বেকারত্বের হার এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ৩০ বছরের বয়সসীমা বর্তমান পরিস্থিতিতে যথেষ্ট নয়। দেশে চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা প্রচণ্ড, বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থীর জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে।

আরো পড়ুনসাকিব আল হাসানের টেস্ট থেকে বিদায় না নেওয়ার ব্যর্থতা: বিসিবি নাকি নিরাপত্তা ইস্যু?

শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা আরও বলেন, “আমাদের শিক্ষাজীবন শেষ হতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া, সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া, শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষাজীবন ও চাকরির প্রস্তুতি নিতে আমাদের বয়স বেড়ে যায়। সুতরাং, ৩৫ বছর বয়সসীমা অত্যন্ত জরুরি।”


মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া

পুলিশের বাধার ঘটনায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করে, সরকার যদি তরুণদের যথাযথ সমর্থন না দেয় এবং তাদের আন্দোলন দমন করে, তবে দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকারের উচিত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দাবি মনোযোগ সহকারে বিবেচনা করা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা।”


শিক্ষাবিদদের মতামত: বয়সসীমা বৃদ্ধি জরুরি কি না

দেশের বেশ কিছু শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুধুমাত্র বয়সসীমা বাড়ানো যথেষ্ট নয়, বরং নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং চাকরির বাজারে আরও সুযোগ তৈরি করাও জরুরি।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল করিম বলেন, “সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া যত দ্রুতগতিতে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে, তত বেশি শিক্ষার্থীর জন্য সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে বয়সসীমা বাড়ানো হলে অনেক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীর জন্য এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।”


বিরোধী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

বিরোধী দলগুলো এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাঁরা মনে করে, সরকার চাকরির বাজারে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না করে শিক্ষিত তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সংকীর্ণ করেছে।

বিরোধী দলের নেতা জানান, “সরকার তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। বয়সসীমা বাড়ানো সরকারের জন্য যথাযথ সিদ্ধান্ত হতে পারত, যা তরুণদের আরও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।”


শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন যে, পুলিশের বাধার পরও তাঁরা হাল ছাড়ছেন না। তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে তাঁরা আরও বৃহৎ পরিসরে আন্দোলন করবেন। তাঁরা বলেন, “আমরা নিজেদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছি। বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত না হলে আমরা আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব।”


সার্বিক বিশ্লেষণ: কেন বয়সসীমা বৃদ্ধি সময়োপযোগী?

বিশ্লেষকরা মনে করেন, চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা, উচ্চশিক্ষার দীর্ঘসূত্রতা, এবং দীর্ঘ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তরুণদের কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ বাড়ানো এবং বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি পূরণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া।

শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান

সরকারের উচিত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দাবি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা এবং তাঁদের জন্য চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করা। বয়সসীমা বৃদ্ধি ন্যায়সঙ্গত এবং দেশের তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার যদি এই দাবির প্রতি মনোযোগ দেয়, তবে দেশের যুবসমাজে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসবে এবং দেশের উন্নয়নে তাঁদের অবদান রাখার সুযোগ পাবে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web