আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা কী?

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা কী?

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা কী?

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা হল এমন একটি নির্বাচন পদ্ধতি যেখানে একটি দলের প্রাপ্ত ভোটের হার অনুযায়ী তারা আসন পায়। অর্থাৎ, যদি একটি দল মোট ভোটের ২৫% পায়, তাহলে সেই দলকে সংসদে ২৫% আসন দেওয়া হবে। এই ব্যবস্থায় কোন একক প্রার্থীকে নির্বাচিত করার পরিবর্তে দলগুলিকে ভোট দেওয়া হয় এবং দলগুলো সংসদে প্রতিনিধিত্ব পায় তাদের প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরণ

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার কয়েকটি প্রধান ধরণ রয়েছে। নিচে তাদের কিছু বিস্তারিত দেওয়া হলো:

১. পার্টি-লিস্ট নির্বাচন ব্যবস্থা

এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়, যা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুযায়ী সাজানো থাকে। ভোটাররা তালিকা অনুযায়ী দল বা প্রার্থীকে ভোট দেন, এবং দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী সংসদে আসন বরাদ্দ করা হয়।

উদাহরণ:

যদি কোনো নির্বাচন ক্ষেত্রে ১০০টি আসন থাকে এবং একটি দল মোট ভোটের ৩০% পায়, তাহলে সেই দল ৩০টি আসন পাবে। তালিকায় শীর্ষে থাকা প্রার্থীরা সেই আসনগুলোতে বসবেন।

২. মিশ্র সদস্য পদ্ধতি (Mixed-Member Proportional Representation – MMP)

এটি একটি মিশ্র পদ্ধতি, যেখানে কিছু আসন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে এবং কিছু আসন একক সদস্য নির্বাচনী এলাকা (Single-Member Districts) থেকে নির্ধারণ করা হয়। এতে ভোটারদের দুটি ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকে—একটি নির্দিষ্ট প্রার্থীর জন্য এবং আরেকটি দলের জন্য।

উদাহরণ:

জার্মানিতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেখানে ভোটাররা একটি আসনের জন্য প্রার্থীকে এবং অন্য একটি আসনের জন্য দলকে ভোট দেন। এতে প্রতিটি ভোটারকে দুটি আলাদা নির্বাচনী পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করা হয়।

৩. একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট (Single Transferable Vote – STV)

এই পদ্ধতিতে ভোটাররা প্রার্থীদের একটি ক্রম নির্ধারণ করে ভোট দেন। প্রথমে প্রথম পছন্দের প্রার্থীদের গণনা করা হয়। যদি কোনো প্রার্থী প্রয়োজনীয় ভোট পেয়ে যায়, তাহলে তিনি নির্বাচিত হন। যদি প্রয়োজনীয় ভোট না পান, তবে সেই প্রার্থীর দ্বিতীয় পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি জটিল, কিন্তু এটি ভোটারদের পছন্দের আরও নিখুঁত প্রতিফলন ঘটায়।

আরও জানুন –বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা মনে করে না

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার সুবিধা

১. ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার মূল সুবিধা হলো এটি ভোটারদের প্রকৃত প্রতিফলন দেয়। প্রত্যেক দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন দেওয়া হয়, ফলে ছোট দলগুলোও ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব পায়। এটি গণতান্ত্রিক মূলনীতি অনুযায়ী ন্যায্য ভোটাধিকার নিশ্চিত করে।

২. ছোট দলগুলোর সুযোগ বৃদ্ধি

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় বড় দলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ পায় ছোট দলগুলো। একক সদস্য নির্বাচনী এলাকায় ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্তু সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায় তারা ভোটের আনুপাতিক ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব পায়।

৩. কোয়ালিশন সরকার গঠন

এই ব্যবস্থায় প্রায়ই কোনও একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। ফলে একাধিক দলের মধ্যে কোয়ালিশন সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।

৪. ভোটের অপচয় কমানো

এই পদ্ধতিতে ভোটের অপচয় কমে যায়, কারণ প্রত্যেক ভোট একটি দল বা প্রার্থীকে সংসদে আসন পেতে সাহায্য করে। এটি ভোটারদের মধ্যে ভোটদানে উৎসাহ বাড়ায়।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

১. কোয়ালিশন সরকারের অস্থায়িত্ব

যেহেতু সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রায়ই একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, ফলে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হয়। এই ধরনের সরকারগুলো অনেক সময় স্থিতিশীল হয় না, কারণ বিভিন্ন দলের নীতিগত মতপার্থক্য সরকারের কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

২. ছোট দলগুলোর অতিরিক্ত ক্ষমতা

কখনও কখনও ছোট দলগুলো কোয়ালিশন সরকারের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এর ফলে তারা বড় দলগুলোর নীতিনির্ধারণে অসমভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

৩. ভোটারদের জন্য জটিলতা

কিছু সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি যেমন STV বেশ জটিল, যা সাধারণ ভোটারদের জন্য বোঝা কঠিন হতে পারে। ভোটদানের সময় প্রার্থীদের ক্রম নির্ধারণ করা, পুনঃবন্টন প্রক্রিয়া ইত্যাদি ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পারে।

৪. আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের অভাব

সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায় আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব কম হতে পারে, কারণ ভোটগুলো পুরো দেশের ভিত্তিতে গণনা করা হয় এবং আঞ্চলিক প্রার্থীদের বিশেষ প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার সুযোগ কমে যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা

বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা একক সদস্য নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক (First-Past-The-Post) পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী নির্বাচিত হন। তবে, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবী উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশে কেন সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রয়োজন?

১. বড় দলের আধিপত্য: বাংলাদেশের রাজনীতিতে কয়েকটি বড় দলের আধিপত্য রয়েছে, যা ছোট দলগুলোর জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন করে তুলেছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ছোট দলগুলো ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব পাবে এবং তাদের মতামত সংসদে গুরুত্ব পাবে।

২. নির্বাচনী সহিংসতা কমানো: বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনী সহিংসতা ও বিতর্কের পরিমাণ অনেক বেশি। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় এই সমস্যাগুলো কমানো সম্ভব হতে পারে, কারণ একক প্রার্থীর বিজয়ের ওপর চাপ কম থাকে।

সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে চ্যালেঞ্জ

১. আইনি ও সাংবিধানিক পরিবর্তন: সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন, যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

২. রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব: বড় দলগুলো নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চায়, ফলে তারা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনের বিরোধিতা করতে পারে।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এটি ভোটারদের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটাতে সাহায্য করে এবং ছোট দলগুলোর জন্য প্রতিনিধিত্বের সুযোগ বৃদ্ধি করে। যদিও এটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও এটি অনেক দেশের জন্য একটি ন্যায়বিচারমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web