আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন
ষাটের বেশি বয়সে হাঁটার ক্ষেত্রে মেনে চলার বিষয়গুলো , সকালে হাঁটা একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, বিশেষ করে ষাট বছরের বেশি বয়স হলে। তবে, এই বয়সে শরীরের অবস্থা এবং সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে হাঁটার সময় কিছু বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি এই বিষয়গুলো মেনে না চলেন, তবে শারীরিক অসুস্থতা, আঘাত বা অন্য সমস্যা হতে পারে।
এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো, ষাটের বেশি বয়সে হাঁটার সময় কোন কোন বিষয় মেনে চলা উচিত এবং কোন বিষয়গুলো না মানলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
কেন হাঁটা গুরুত্বপূর্ণ?
ষাট বছরের বেশি বয়সে নিয়মিত হাঁটার উপকারিতা অনেক। এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত হাঁটার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়, এবং পেশী শক্তিশালী হয়। এছাড়াও, মানসিক অবসাদ এবং উদ্বেগ কমাতে এটি সাহায্য করে।
তবে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে, যা মাথায় রেখে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়।
ষাটের বেশি বয়সে হাঁটার ক্ষেত্রে মেনে চলার বিষয়গুলো
১. সঠিক জুতা পরিধান করুন
এই বয়সে হাঁটার সময় সঠিক ধরনের জুতা বেছে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পায়ের জন্য আরামদায়ক, হালকা এবং ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা ব্যবহার করা উচিত। পায়ের আঙ্গুলের অংশে যথেষ্ট জায়গা থাকা উচিত, যাতে আপনার পায়ের আঙ্গুল চাপে না থাকে। এতে পায়ের জোড়ার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং হাঁটার সময় ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হয়।
২. শরীরের সীমাবদ্ধতা মেনে চলুন
ষাটের বেশি বয়সে শরীরের ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। যদি হাঁটার সময় আপনি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অথবা অন্য কোনো অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে সাথে সাথে বিশ্রাম নিন। আপনার শরীর যদি কোনো অস্বাভাবিক সংকেত দেয়, তাহলে এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী হাঁটার রুটিন ঠিক করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. গরম আবহাওয়ায় হাঁটায় সাবধানতা
ষাটের বেশি বয়সে শরীর তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে যায়। তাই গরম আবহাওয়ায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে। সূর্য ওঠার আগেই হাঁটা শেষ করার চেষ্টা করুন অথবা বিকেলের দিকে সূর্যাস্তের পর হাঁটুন। এ সময় হালকা ও শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সুবিধাজনক পোশাক পরিধান করুন, এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় গ্রহণ করা জরুরি।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
হাঁটার পর বিশ্রাম নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যখন বয়স ষাটের উপরে। শরীরের পেশীগুলোকে বিশ্রাম নিতে দিতে হবে যাতে হাঁটার ফলে সৃষ্টি হওয়া চাপ এবং ক্লান্তি দূর হয়। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামের মাধ্যমে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।
৫. ভারসাম্য বজায় রাখার অনুশীলন
ষাটের পরে ভারসাম্য ধরে রাখা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যখন আপনি হাঁটতে যান, কারণ ভারসাম্যহীনতা আপনার পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ভারসাম্য উন্নত করার জন্য কিছু অনুশীলন করা যায়, যেমন যোগব্যায়াম, তায় চি, এবং হালকা স্ট্রেচিং।
৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান
আপনার নিয়মিত হাঁটার রুটিন শুরু করার আগে, আপনার শরীরের সামগ্রিক অবস্থা জানার জন্য একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। হৃদযন্ত্র, হাড় এবং ফুসফুসের অবস্থা কেমন, তা জেনে নেয়া জরুরি। বিশেষ করে যদি আপনাকে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন আর্থ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অথবা ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
৭. হাইড্রেশন মেনে চলুন
ষাটের পরে শরীর সহজে ডিহাইড্রেট হতে পারে। তাই হাঁটার সময় আপনার সঙ্গে পানি বা অন্য কোনো তরল রাখুন। পানি না খেলে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, এবং তাতে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অথবা অন্য কোনো জটিলতা দেখা দিতে পারে। গরমের দিনে এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরো জানুন- আজ বিশ্ব কফি দিবস, কফির প্রতি উদযাপন ও গুরুত্ব
যে ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
১. অতিরিক্ত হাঁটা
ষাটের পরে শরীরের শক্তি কমে আসে। তাই অতিরিক্ত হাঁটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। হাঁটার সময় যদি আপনি বেশি ক্লান্ত বোধ করেন বা পায়ে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে সাথে সাথে হাঁটা বন্ধ করুন এবং বিশ্রাম নিন। হাঁটা উপভোগ্য হওয়া উচিত, ক্লান্তিকর নয়।
২. হঠাৎ করে হাঁটা শুরু করা
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে হাঁটতে না যান, তবে হঠাৎ করেই বেশি দূরত্ব হাঁটা শুরু করবেন না। ধীরে ধীরে হাঁটার দূরত্ব এবং সময় বাড়ানো উচিত। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করে, পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বাড়ানোই ভালো। এতে আপনার শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।
৩. পাথুরে বা অসমান পথে হাঁটা
অসমান এবং পাথুরে পথ হাঁটার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। হাঁটার জন্য সমতল এবং নিরাপদ পথ বেছে নিন। পার্কের পাথ বা ভালোভাবে তৈরি করা ফুটপাত হাঁটার জন্য ভালো হতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত পানি না পান করা
ডিহাইড্রেশন অনেক গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যদি বয়স ষাটের বেশি হয়। তাই হাঁটার সময় শরীরে পর্যাপ্ত পানি আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবার হাঁটার সময় এক বোতল পানি সঙ্গে রাখা উচিত।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ না নেয়া
অনেকেই বয়সের সীমাবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেন না এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই হাঁটার রুটিন শুরু করেন। এটি বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে, আপনাকে বিশেষ নির্দেশনা মেনে চলতে হতে পারে। তাই, কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হাঁটার পরিকল্পনা করুন।
সঠিক রুটিন তৈরি করুন
একটি সুস্থ হাঁটার রুটিন গড়ে তোলা জরুরি, যাতে আপনি শরীরের ক্ষমতার মধ্যে থেকে ব্যায়াম করতে পারেন। প্রথমে ধীরে ধীরে শুরু করুন, প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট হাঁটা চেষ্টা করুন এবং প্রতিবার সামান্য সময় বাড়াতে থাকুন। সপ্তাহে পাঁচ দিন হাঁটতে পারেন, এবং মাঝে মাঝে বিশ্রাম দিন।
সঠিক সময়ে হাঁটা
সকালের তাজা বাতাস শরীর ও মনের জন্য উপকারী। তবে যদি সকালে হাঁটতে না পারেন, তাহলে বিকেলে বা সন্ধ্যায় হাঁটার সময় বেছে নিতে পারেন। মূল বিষয় হলো, আপনার শরীরের জন্য কোন সময়টি সুবিধাজনক তা নির্ধারণ করা।
মনোযোগ দিয়ে হাঁটা
হাঁটার সময় চারপাশের পরিবেশের প্রতি মনোযোগ দিন। শুধু হাঁটার জন্য হাঁটবেন না, বরং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন। এটি মনকে প্রশান্তি দেবে এবং মানসিকভাবে চাঙ্গা করবে।
ষাটের বেশি বয়সে নিয়মিত হাঁটা স্বাস্থ্যকর একটি অভ্যাস। তবে এটি উপকারী হতে হলে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। শরীরের সীমাবদ্ধতা মেনে চলা, সঠিক জুতা পরিধান, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া সহ বিভিন্ন বিষয় মেনে চললে হাঁটা আপনার জন্য সুখকর এবং উপকারী হবে। তবে ভুল করলে, তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এই অভ্যাসটি শুরু করার আগে সবদিক বিবেচনা করে পরিকল্পনা করুন, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Leave a Reply