আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনার উদ্যোগ

শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনার উদ্যোগ

শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন ,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনার উদ্যোগ
শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন ,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনার উদ্যোগ

শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন ,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগ

বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন আসছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনার উদ্যোগ । পরিকল্পনা কমিশন শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পিছনের কয়েক বছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বিশাল বাজেট বরাদ্দ করা হলেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। শিক্ষা খাতে দুর্নীতি এবং অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলমান। একাধিক সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব সমস্যা শিক্ষার মান নিচে নামিয়ে এনেছে। এ ধরনের অনিয়ম রোধ করতে এবং শিক্ষার মান উন্নত করতে নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণের দিকে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

শিক্ষা খাতের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির হার অত্যন্ত বেশি। মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নথিপত্র নিষ্পত্তিতে বিলম্ব করেন, যা দুর্নীতির পথ তৈরি করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও রয়েছে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং কোচিং, অবৈধ বই ও গাইড বাণিজ্যের মতো অসংখ্য সমস্যা। এছাড়া শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে সার্টিফিকেট জালিয়াতির প্রবণতা, যা শিক্ষার মান আরও নিচে নামিয়ে এনেছে। এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা দপ্তর নেই যেখানে দুর্নীতি অনুপস্থিত।

বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে অনিয়মের হার আরও বেশি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো উপাচার্য বা ট্রেজারার। এই ধরনের নেতৃত্বহীনতা শিক্ষার মান নিচে নামিয়ে আনার একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকির দায়িত্ব পালন করে, কিন্তু তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। বর্তমানে ৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নেই, এবং ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার নিয়োগ নেই। ফলে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে পরিকল্পনা

পরিকল্পনা কমিশন ইতোমধ্যে শিক্ষার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে এবং সেগুলো নিরসনে একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো অবকাঠামো নেই। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২-৩টি কক্ষ ব্যবহার করেই এই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যদিও প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ, তবুও ঝরে পড়ার হার এখনো ১৩.৯৫ শতাংশ। দেশে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৬৫ হাজার ৫৫৬টি সরকারি বিদ্যালয়। শিক্ষক সংকট এবং শিক্ষকের মানের অভাব শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে অপেক্ষাকৃত কম ভর্তি এবং ধনী-গরিবের মধ্যে শিক্ষার ফারাক একটি বড় সমস্যা। একই সঙ্গে সরকারি কলেজে শিক্ষকের সংকট এবং শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে বিজ্ঞানের শিক্ষকের অভাব বিদ্যমান।

এছাড়া, উচ্চশিক্ষায় সরকারি কলেজগুলোতে একই শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রদান করা হয়, যা শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই, এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেও নারীদের অংশগ্রহণ কম এবং দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে।

আরও জানুন –শেখ হাসিনার জন্মদিন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ‘গণ জুতা নিক্ষেপ’ কর্মসূচি পালন

শিক্ষাবিদদের মতামত

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখেন, “এত বছর ধরে শিক্ষকতা পেশাকে অনাকর্ষণীয় করে, নিয়োগ বিধিমালা ও দুষ্ট লোক দিয়ে নিয়োগ কমিটি ভরে মানহীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সমাজে ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে আমাদের শিক্ষকরা ভালো না।” তিনি আরও লেখেন, “শিক্ষকদের একাংশ প্রাইভেট পড়ানোর দিকে ঝুঁকেছেন, আবার অনেকে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র স্থাপন করে গ্রুপিং ও তদবিরে ব্যস্ত। এসবই পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।”

দুর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটানোর পরিকল্পনা

শিক্ষা খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটানো এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তদারকি শক্তিশালী করা এবং শিক্ষকদের মান উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা খাতের সংস্কারে দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের অযাচিত কর্মকাণ্ড বন্ধে নিয়মিত তদারকি এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অসদাচরণ বন্ধ করার জন্য শাস্তির বিধান এবং শিক্ষার্থীদের জন্য স্বচ্ছ ও মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা হবে।

প্রতিবেশী দেশের অগ্রগতি এবং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, এবং শ্রীলঙ্কা তাদের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ভারত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ প্রণয়ন করে শিক্ষার মানোন্নয়নে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানও তাদের শিক্ষার মান উন্নত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও একটি কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট শিক্ষানীতি তৈরি করে শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

ভবিষ্যত পদক্ষেপ

শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের একটি মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি সুশৃঙ্খল পথে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশন ইতোমধ্যেই একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে, যা শিগগিরই চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে।

শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে নতুন শিক্ষাক্রম এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা প্রদানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার মানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের জন্য বর্তমান সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং শিক্ষার নিম্নমানকে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। নতুন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার মান উন্নত হবে এবং শিক্ষার্থীরা একটি সুশৃঙ্খল ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ পাবে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web