আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
লেবাননে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা চরম ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছেন। যুদ্ধাবস্থার এই নাজুক পরিস্থিতিতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাত ২টা ৪০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ৩০ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাদের অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, লেবাননের পরিস্থিতির অবনতির কারণে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য সরকারের তরফ থেকে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।
লেবাননের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিস্থিতি বেশ সংকটপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা স্থানীয় ও প্রবাসী উভয় জনগণের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটির সংঘাতময় পরিবেশে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে লেবাননের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপদে দেশে প্রত্যাবর্তনে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আইওএম থেকে প্রত্যেক প্রবাসীকে দেশে ফেরার পথে পাঁচ হাজার টাকা পকেটমানি প্রদান করা হয়। তাদের প্রাথমিক মেডিকেল সহায়তা ও কিছু খাদ্য সামগ্রীও প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে প্রত্যাবর্তনকারীদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মোস্তফা জামিল খান তাদের সঙ্গে যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এখন পর্যন্ত কোনও বাংলাদেশি প্রবাসী লেবাননে হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত চার দফায় প্রায় ১৮০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন। লেবাননের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে প্রত্যাবর্তনকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছে, যতজন প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক তাদের সকলকেই দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। লেবানন থেকে ফিরে আসতে ইচ্ছুকদের বাংলাদেশ দূতাবাস বৈরুত থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে এবং যারা লেবাননে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাদের জন্যও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন– ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে কমলা হ্যারিস, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ট্রাম্প
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে সরকারের দায়িত্বশীল উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। এই যুদ্ধাবস্থায় যেসব প্রবাসী দেশে ফিরতে চান, তাদের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দেশে ফিরে আসার ইচ্ছুক প্রবাসীদের দ্রুত এবং নিরাপদে ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের লেবানন দূতাবাস প্রবাসীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি সমন্বয় করছে।
লেবাননে চলমান যুদ্ধাবস্থা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারের প্রচেষ্টা শুধু প্রত্যাবর্তনই নয়, প্রবাসীদের জন্য একটি সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা। বাংলাদেশের লেবানন দূতাবাস প্রবাসীদের সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রবাসীদের তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে তাদের সাহস ও মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখছে।
যারা দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক তাদের জন্য বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে প্রবাসীরা লেবানন থেকে নিরাপদে দেশে ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। আইওএম-এর সহায়তায় ফেরত আসা প্রবাসীদের খাদ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তা দেওয়া হয়, যা তাদের দেশে ফেরার পথকে আরও সহজ করে তোলে। বাংলাদেশ সরকার এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য সুনির্দিষ্ট আর্থিক বরাদ্দের মাধ্যমে নিশ্চিত করছে যাতে দেশের কোন প্রবাসী যুদ্ধে বিপদের মুখে না পড়েন।
যুদ্ধ পরিস্থিতি অবনতির কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের অব্যাহত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। লেবাননে অবস্থানরত যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে আসতে চান, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনই সরকারের মূল লক্ষ্য। দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণে কাজ করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। লেবাননের পরিস্থিতি যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ দূতাবাস বৈরুত প্রবাসী বাংলাদেশিদের লেবাননের যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করছে এবং নিরাপত্তার প্রতি সচেতন থাকতে পরামর্শ দিচ্ছে। যেসব প্রবাসী এই পরিস্থিতির কারণে দেশে ফিরতে চান তাদের জন্য যথাসম্ভব সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। যারা দেশত্যাগ করতে ইচ্ছুক কিন্তু কোনও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে অসুবিধায় রয়েছেন, তাদের জন্য দূতাবাস একটি সহযোগিতা প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এছাড়াও, দূতাবাস লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসীদের কাছে তথ্য প্রেরণ ও সাহায্য প্রদান করছে।
লেবানন থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করা প্রবাসীদের সংখ্যা বাড়তে পারে এবং প্রয়োজন হলে তাদের জন্য আরও ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে। যারা এখনও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে লেবাননে রয়ে গেছেন এবং দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক, তাদের সকলকেই বাংলাদেশ সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের মানসিক সুরক্ষা ও সহযোগিতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিয়ত সচেষ্ট।
এই যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের লেবানন দূতাবাস তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের জীবনযাত্রাকে আরও উন্নত এবং নিরাপদ করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সামাজিক এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply