আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
ইনিংস ব্যবধানে হেরে লজ্জার বিশ্ব রেকর্ড গড়লো পাকিস্তান

ইনিংস ব্যবধানে হেরে লজ্জার বিশ্ব রেকর্ড গড়লো পাকিস্তান

ইনিংস ব্যবধানে হেরে লজ্জার বিশ্ব রেকর্ড গড়লো পাকিস্তান
ইনিংস ব্যবধানে হেরে লজ্জার বিশ্ব রেকর্ড গড়লো পাকিস্তান

ইনিংস ব্যবধানে হেরে লজ্জার বিশ্ব রেকর্ড গড়লো পাকিস্তান

মুলতান টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান এমন এক হারে মুখোমুখি হয়েছে, যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক লজ্জার বিশ্ব রেকর্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চম দিনে দুই সেশনেরও বেশি সময় বাকি থাকতে পাকিস্তানকে ইনিংস ও ৪৭ রানে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তবে, এ হারের চেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু বিষয় ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে এমন একটি রেকর্ড গড়া, যেখানে প্রথম ইনিংসে ৫০০ এর বেশি রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হারের সম্মুখীন হয়েছে তারা। এই হারের মাধ্যমে পাকিস্তান টানা ছয়টি টেস্টে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেলো।

পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড়

মুলতান টেস্টের শুরুতে পাকিস্তানের ব্যাটিং শক্তি প্রকাশ পায়। আব্দুল্লাহ শফিক, শান মাসুদ এবং সালমান আঘার সেঞ্চুরিতে ভর করে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলে। শফিক ১০২, মাসুদ ১৫১ এবং সালমান ১০৪ রান করেন। এত বড় সংগ্রহের পরও, পাকিস্তান দল তাদের প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে ব্যর্থ হয় এবং শেষ পর্যন্ত লজ্জার পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়।

অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের বোলারদের শুরুতেই চাপে ফেলতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতিরোধ পাকিস্তানকে বড় ধাক্কা দিতে পারেনি। গাস অ্যাটকিনসন, ব্রাইডন কার্স এবং জ্যাক লিচের মত ইংলিশ বোলাররা ধৈর্য ধরে বল করতে থাকেন, এবং পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ পেলেও সেটি নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়নি।

ইংল্যান্ডের জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের মহাকাব্যিক ইনিংস

টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের রাজত্ব

জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের মহাকাব্যিক ইনিংস

ইংল্যান্ডের জবাব যেন পাকিস্তানের বিশাল সংগ্রহকে অতি সাধারণ করে তোলে। জো রুটের ডাবল সেঞ্চুরি এবং হ্যারি ব্রুকের ট্রিপল সেঞ্চুরিতে ৮২৩ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। রুটের সংগ্রহ ছিল ২৬২ রান, এবং ব্রুক করেন ৩১৭ রান। তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফলে ইংল্যান্ড ২৬৭ রানের লিড পায় এবং পাকিস্তানকে চাপের মুখে ফেলে দেয়।

জো রুটের অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরি

জো রুটের অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরি

ইংল্যান্ডের এই ইনিংস যেন পাকিস্তানের মনোবল ভেঙে দেয়। রুট এবং ব্রুকের ধৈর্যশীল ব্যাটিং এবং রান সংগ্রহের কৌশল পাকিস্তানের বোলারদের অসহায় করে তোলে। পাকিস্তানের বোলাররা একের পর এক আক্রমণ চালিয়েও কোনো কাজ করতে পারেননি এবং ইংল্যান্ড যেন পাকিস্তানের এই বিশাল সংগ্রহকে আরও বড় করে প্রতিপন্ন করে। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে কেউই ধারাবাহিকভাবে উইকেট নিতে সক্ষম হননি, যা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও সুবিধাজনক প্রমাণিত হয়।

আরও জানুন –বিদায় জানালেন রাফায়েল নাদাল, এক কিংবদন্তির অবসান

দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের পতন

মুলতানে বাবর আজমের দুর্দশা অব্যাহত ছিল

মুলতানে বাবর আজমের দুর্দশা অব্যাহত ছিল

দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ব্যাট করতে নেমে আবারো ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। গাস অ্যাটকিনসন এবং ব্রাইডন কার্সের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মুখে পাকিস্তান দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে। চতুর্থ দিন শেষে পাকিস্তান ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান সংগ্রহ করে। দিন শেষে সালমান ৪৯ বলে ৪১ এবং আমের জামাল ৪৮ বলে ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।

পঞ্চম দিনের খেলা শুরু হতেই সালমান এবং আমের কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তাদের ফিফটি তুলে নেয়ার পর মনে হয়েছিল পাকিস্তান হয়তো একটি লড়াই করবে। কিন্তু দলীয় ১৯১ রানে সালমান আউট হওয়ার পর পাকিস্তান আর প্রতিরোধ করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান মাত্র ২২০ রানে অলআউট হয়ে যায়। আমের জামাল অপরাজিত ছিলেন ১০৪ বলে ৫৫ রান করে। ইংল্যান্ডের পক্ষে জ্যাক লিচ নেন ৪টি উইকেট, যা পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে ভেঙে দেয়।

বিশ্ব রেকর্ডের লজ্জা

এ হারের ফলে পাকিস্তান শুধু ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়নি, বরং তারা এক লজ্জাজনক বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দল ৫০০ এর বেশি রান করে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। পাকিস্তান এই রেকর্ড গড়ে এক নতুন নজির স্থাপন করেছে, যা দলের মানসিকতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

টানা ছয় টেস্টে পরাজয়ের পর পাকিস্তান দলের উপর চাপ আরও বেড়ে গেছে। দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা দলের এমন পারফরম্যান্সে হতাশা প্রকাশ করছেন এবং প্রশ্ন তুলছেন দলের কৌশল এবং খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই ধরণের রেকর্ড কোনো দলের জন্যই স্বস্তিদায়ক নয় এবং পাকিস্তানকে এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে দ্রুতই পদক্ষেপ নিতে হবে।

হ্যারি ব্রুকের ক্যারিয়ার-বেস্ট ইনিংস

ট্রিপল সেঞ্চুরির পর ব্রুক

ট্রিপল সেঞ্চুরির পর ব্রুক

হ্যারি ব্রুকের ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি ছিল ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। তার অসাধারণ ব্যাটিং দক্ষতা এবং শট নির্বাচন ইংলিশ দলের জন্য বড় ভূমিকা পালন করেছে। মাত্র ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।

ব্রুকের ইনিংসটি ছিল ধৈর্যশীল এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী। পাকিস্তানি বোলারদের উপর তার প্রতিটি আক্রমণ ছিল কৌশলগত এবং তিনি তাদের বলের প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দুর্দান্ত শট খেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই পারফরম্যান্স ইংল্যান্ড দলের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে এবং তাকে ভবিষ্যতের টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ

জয়ের জন্য শেষ তিনটি উইকেট তুলে নেন জ্যাক লিচ

জয়ের জন্য শেষ তিনটি উইকেট তুলে নেন জ্যাক লিচ

ইংল্যান্ডের বোলাররা বিশেষ করে গাস অ্যাটকিনসন এবং জ্যাক লিচ তাদের অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্সের মাধ্যমে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করতে সক্ষম হন। প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহের পর পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে বোলারদের মুখোমুখি হতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। অ্যাটকিনসন ও লিচের বোলিং তোপে পাকিস্তান আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি এবং সহজেই তাদের উইকেটগুলো হারিয়ে ফেলে।

বিশেষ করে জ্যাক লিচের স্পিন আক্রমণ ছিল পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের জন্য বিষময়। তিনি তার বোলিংয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে বারবার বিপদে ফেলে দেন। লিচের চার উইকেট শিকার ইংল্যান্ডের জয়ের পথে বড় অবদান রেখেছে।

পাকিস্তান দলের ভবিষ্যৎ

টানা ছয় টেস্টে পরাজয় এবং লজ্জাজনক রেকর্ডের পর পাকিস্তান দলের সামনে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। দলের ব্যাটিং এবং বোলিং ইউনিটে সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনা এবং মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। পাকিস্তান দলের নতুন পরিকল্পনা ও নতুন নেতৃত্ব হয়তো এই হতাশাজনক সময়কে কাটিয়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিশেষ করে, দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও নেতৃত্ব এবং দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করছেন সমর্থকরা। এছাড়া, কোচিং স্টাফের দিক থেকেও ব্যর্থতার কারণগুলো খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী পরিবর্তন আনাটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাকিস্তানের এই ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচকরা এখন বিভিন্ন বিশ্লেষণ করছেন। দলের ব্যাটিং অর্ডার থেকে শুরু করে বোলিং আক্রমণ পর্যন্ত সবকিছুতেই সমস্যার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ধৈর্যের অভাব এবং বোলারদের মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট হয়েছে। প্রথম ইনিংসে বড় রান করেও দলকে বাঁচাতে না পারার কারণ হিসেবে মানসিক প্রস্তুতির অভাব এবং টিম কৌশলে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করছেন অনেক বিশ্লেষক।

এর পাশাপাশি দলগত নেতৃত্ব ও সিনিয়র খেলোয়াড়দের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন অনেকেই। দলের তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিভা থাকলেও, অভিজ্ঞতার অভাবে তারা প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভেঙে পড়ছেন।

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে এখন দলের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ব্যর্থতা আর না ঘটে।

মুলতান টেস্টে পাকিস্তানের এই পরাজয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে থেকে যাবে। তবে, এর সাথে পাকিস্তানের দলের মনোবল ও সামর্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এই পরাজয়। দলকে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে হলে অনেকটাই পুনর্গঠন এবং কৌশলগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web