আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী ছিলেন আহসানুল হক দীপ্ত। গত শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আহসানুল হক দীপ্ত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) একজন শিক্ষার্থী। গত ৩১ আগস্ট, শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর দীপ্তর পরিবার এবং বিইউবিটির শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেলে এসে অভিযোগ করেন যে, অবহেলার কারণে দীপ্তর মৃত্যু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দীপ্তর বন্ধুরা ঢামেকের একটি অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে এবং চিকিৎসকদের ওপর আক্রমণ করে। এতে নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান, মাশরাফি ও জুবায়ের আহত হন।
এর পরদিন, ১ সেপ্টেম্বর, রোববার সকাল থেকে চিকিৎসকরা জরুরি ও বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখে কর্মবিরতিতে যান। একই দিনে আরেকটি ঘটনার খবর পাওয়া যায় যেখানে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ৫১ বছর বয়সী এনামুল হক রিটন নামের একজন কিডনি রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মারা যান। স্বজনদের অভিযোগ, দ্রুত টাকা আয়ের জন্য চিকিৎসক আবিদ হোসাইন তাড়াহুড়ো করে অপারেশন করান, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
স্বজনদের আরও অভিযোগ, ডা. আবিদ দ্রুত অপারেশনের কথা বলে ১ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে সন্ধ্যা ৬টায় অপারেশন করেন, এবং পরে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান। আইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরে এনামুলকে মৃত অবস্থায় পান।
এই দুটি ঘটনার মতো আরও অনেক ঘটনাই সারাদেশে ঘটে এবং তা নিয়মিত সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগী বা তাদের স্বজনেরা প্রায়শই ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করেন এবং কখনো কখনো চিকিৎসক বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেন।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে আস্থাহীনতার একটি বড় সংকট রয়েছে। এই সংকট নিরসনে একটি ভারসাম্যমূলক স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন অথবা স্বাস্থ্য খাতের জনবান্ধব সংস্কার জরুরি। যেখানে সেবাগ্রহীতা, সেবাদাতা এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অধিকার এবং দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকবে।
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের (বিইউএইচএস) প্রথম উপাচার্য, বলেন যে, একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন খুবই জরুরি। কিন্তু যারা আইন প্রণয়ন করবেন, তারাই প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিক, ফলে কোনো জনমুখী আইন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাতের সম্পূর্ণ সংস্কার ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে সম্পর্কের সুরক্ষার প্রশ্ন আসে কেন? চিকিৎসকের দায়িত্ব সঠিক চিকিৎসা দেওয়া, এবং রোগীর দায়িত্ব তা সঠিকভাবে গ্রহণ করা। যদি কেউ সন্তুষ্ট না হন, তবে তিনি অভিযোগ করতে পারেন এবং আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা রয়েছে; সরকারি স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বাজেট নেই, হাসপাতালগুলো অপরিষ্কার, আর প্রাইভেট সেক্টরে সেবার মূল্য অনেক বেশি। তাই রোগীদের শিক্ষিত করতে হবে, এবং ডাক্তারদেরও রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার তাড়াহুড়ো করে করা উচিত নয়। একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন, যেখানে সকল স্তরের শিক্ষা ও সেবা প্রতিষ্ঠানের কথা বিবেচনা করা হবে।
এভাবে, একটি সুষম ও সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি তৈরি করা একান্ত জরুরি, যেখানে সবার অধিকার ও দায়িত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে এবং যার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে।
Leave a Reply