আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত ঘোষণা করেছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত ঘোষণা করেছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত ঘোষণা করেছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত ঘোষণা করেছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত ঘোষণা করেছে: এক ঐতিহাসিক অর্জন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য এবং “ঐতিহাসিক” পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের জনস্বাস্থ্য সংস্থা। এই ঘোষণা মিশরের জন্য একটি গৌরবময় মুহূর্ত এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এক বিশাল সাফল্য।

WHO-এর প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, “ম্যালেরিয়া মিশরীয় সভ্যতার মতোই পুরনো। প্রাচীন ফারাওদের সময়েও যে রোগ তাদের জর্জরিত করেছিল, সেই ম্যালেরিয়া এখন ইতিহাসের অন্তর্গত।”

মিশরের ম্যালেরিয়া-বিরোধী সংগ্রাম: এক শতাব্দীর প্রচেষ্টা

মিশরীয় সরকার প্রায় ১০০ বছর আগে প্রাণঘাতী মশাবাহিত সংক্রামক রোগ ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য প্রথম প্রচেষ্টা শুরু করেছিল। সেই সময় থেকে শুরু হওয়া প্রচেষ্টা আজ সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছে।

ম্যালেরিয়া এমন একটি রোগ যা প্রতিবছর কমপক্ষে ৬ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, যার বেশিরভাগই আফ্রিকার বাসিন্দা। মিশর এই প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সফল হয়েছে, যা শুধু দেশটির নয়, পুরো পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জন্য এক বড় অর্জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশরের এই সাফল্যকে “প্রাচীনকাল থেকে দেশে বিদ্যমান একটি রোগের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টার জন্য” মিশরীয় সরকার এবং জনগণের প্রশংসা করেছে। রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে WHO বলেছে, মিশর সরকার এবং জনগণের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তৃতীয় দেশ হিসেবে সাফল্য

মিশর এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মরক্কো-এর পরে WHO-স্বীকৃত পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ম্যালেরিয়া-মুক্ত দেশ হিসেবে তৃতীয় দেশ। এই অঞ্চলে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা খুবই কঠিন ছিল, কিন্তু মিশরের সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ ও জনস্বাস্থ্যের অগ্রগতির কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া-মুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মিশর

মিশরের এই সাফল্য বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া-মুক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৪৪টি দেশ এবং একটি অঞ্চল এই মাইলফলক স্পর্শ করেছে। মিশর এই তালিকায় স্থান করে নিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আরও দৃঢ় করেছে।

আরো পড়ুনশিশুর ঘন ঘন পেটে ব্যথা, খেতে চাইছে না, কেন হচ্ছে?

ম্যালেরিয়া নির্মূলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

মিশরকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করার প্রচেষ্টা আজকের নয়। ১৯২৯-এর দশকে প্রথমবারের মতো মিশরে ম্যালেরিয়া নির্মূলের প্রচেষ্টা শুরু হয়। সেসময় দেশটি ধানসহ অন্যান্য জলাশয়সম্পর্কিত ফসলের উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছিল, যার ফলে মশার বংশবিস্তার সীমিত হয়।

এছাড়াও, মিশর সরকারের নির্দেশনায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মশার কামড় এড়ানো, স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা এবং রোগ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই প্রচেষ্টাগুলো ধীরে ধীরে মিশরকে ম্যালেরিয়া থেকে মুক্ত করেছে।

ম্যালেরিয়া: রোগের প্রভাব এবং প্রতিরোধের উপায়

ম্যালেরিয়া একটি জটিল পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রোগ যা মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি প্রাথমিকভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং সাব-সাহারান অঞ্চলে প্রচলিত। যদিও বর্তমানে কিছু অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মশার কামড় এড়ানো এবং রোগ পর্যবেক্ষণ করা।

মিশরের ম্যালেরিয়া-মুক্ত অবস্থানের গুরুত্ব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মিশরের ম্যালেরিয়া-মুক্ত অবস্থান একটি “নতুন পর্যায়ের সূচনা”। মিশরকে এই অবস্থান ধরে রাখার জন্য আরও সতর্ক থাকতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কোনো নতুন আক্রমণের শিকার না হয়। ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সহজ কাজ নয়, তবে এই সাফল্য ধরে রাখার দায়িত্ব আরও বড়।

ভবিষ্যতে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মিশরের ভূমিকা

মিশরের ম্যালেরিয়া-মুক্ত ঘোষণা অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে, যারা এখনো ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মিশরের এই সফলতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে, যেখানে ম্যালেরিয়ার বিস্তার এখনো বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সংকট।

মিশরকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে, জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মিশরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। মিশরের জনগণ ও সরকার প্রায় শতাব্দী ধরে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং আজ সেই লড়াই সফল হয়েছে।

মিশরের এই সাফল্য শুধু দেশটির জন্য নয়, বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্যও একটি গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা, প্রচেষ্টা এবং জনগণের সহযোগিতার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগকে নির্মূল করা সম্ভব।

 

সূত্র: বিবিসি

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web