আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ পূর্বাহ্ন
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা: বিচার বিভাগের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সাম্প্রতিককালে পাঁচটি মানহানির মামলায় খালাস পেয়েছেন। এই মামলাগুলোতে প্রধান অভিযোগ ছিল ‘ভুয়া’ জন্মদিন পালন এবং মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার। তবে, দেশের আদালত যথাযথ তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে এই মামলাগুলো থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
মানহানির মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকীর করা অভিযোগ। এতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া ‘ভুয়া’
জন্মদিন পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মহান অর্জনকে কলঙ্কিত করেছেন। এই মামলাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগে করা মামলাগুলোতে বলা হয়, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন।
এই সময়ে তিনি রাজাকার-আলবদর নেতাদের মন্ত্রী ও এমপি পদে আসীন করেন। তাদের বাড়ি-গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
অন্যদিকে, ‘ভুয়া’ জন্মদিন পালনের অভিযোগটি আরও বিতর্কিত ছিল। খালেদা জিয়ার জীবনে একাধিক জন্মদিন নিয়ে নানা বিতর্ক ও তথ্য রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,
খালেদা জিয়ার পাঁচটি ভিন্ন জন্মদিনের তথ্য পাওয়া যায়। তবে, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী তথা জাতীয় শোক দিবসের দিনে জন্মদিন পালন করে আসছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খালেদা জিয়াকে মানহানির মামলাগুলো থেকে খালাস দেন। আদালতের রায়ে বলা হয় যে,
মামলার বাদীরা যথাসময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় এবং প্রমাণের অভাবে খালেদা জিয়াকে এসব মামলায় খালাস প্রদান করা হয়।
মামলাগুলোর শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারিত ছিল, কিন্তু বাদী এবি সিদ্দিকী মারা যাওয়ার কারণে এবং মামলার তদন্তে অপর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তাকে খালাস দেন। এর ফলে, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা খালাসের আবেদন করেন, যা আদালত মঞ্জুর করেন।
এই রায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, দেশের বিচার বিভাগ রাজনৈতিক চাপে নতি স্বীকার না করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঠিক রায় প্রদান করতে সক্ষম।
এছাড়া, এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করেছে যে, আইনের শাসন বজায় রাখতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষিত রাখতে বিচার বিভাগের ভূমিকা অপরিহার্য।
বেগম খালেদা জিয়ার মানহানির মামলায় খালাস পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই রায় প্রমাণ করে যে,
দেশের বিচার বিভাগ যথাযথভাবে কাজ করছে এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে সঠিক বিচার প্রদান করতে সক্ষম। এটি দেশের জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হবে।
Leave a Reply