আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
অনেকেই মনে করেন, যখন খুশি ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যায়, এবং এটি শরীরের জন্য উপকারী হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট, গ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পরিমাপ , যা চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া অনুসরণ করা উচিত নয়। প্রতিটি ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্টের রয়েছে নির্দিষ্ট মাত্রা ও গ্রহণের সঠিক সময়, যা শরীরের জন্য কার্যকর এবং স্বাস্থ্যকর হতে পারে। ভুল সময়ে বা অতিরিক্ত পরিমাণে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে।
ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কেন প্রয়োজন?
আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল প্রয়োজন। সাধারণত আমরা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করি। তবে, কখনও কখনও আমাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছু পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হতে পারে, যা পূরণ করতে সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন প্রয়োজন হয়।
বিভিন্ন শারীরিক অবস্থা, যেমন গর্ভাবস্থা, বয়স বৃদ্ধির কারণে শরীরের অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হতে পারে। এসময় সঠিকভাবে ভিটামিন গ্রহণ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক সময়ে এই ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করছেন।
আরো পড়ুন- সসেজ, বেকন, হটডগের মতো খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে
কোন ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট কখন এবং কীভাবে নিতে হবে?
ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। নিচে উল্লেখ করা হলো বিভিন্ন ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট এর সঠিক গ্রহণের নিয়ম ও পরামর্শ।
১. ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সূর্যের আলো থেকেই আমরা ভিটামিন ডি পাই, তবে অনেকেই বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না। এমন পরিস্থিতিতে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
কীভাবে খাবেন: ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত, কারণ এটি একটি ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিন, যা সঠিকভাবে শোষিত হতে ফ্যাটের প্রয়োজন হয়।
সময়: সাধারণত সকালের নাস্তার সঙ্গে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে, তবে দিনভর যে কোনও সময়ে এটি গ্রহণ করা যায়।
মাত্রা: ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসক ঠিক করবেন। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৬০০-৮০০ IU প্রয়োজন হয়, তবে ভিটামিন ডি-র ঘাটতির ক্ষেত্রে এর পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে।
২. ভিটামিন সি
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি একটি জল-দ্রবণীয় ভিটামিন, অর্থাৎ এটি শরীরে জমা থাকে না এবং অতিরিক্ত অংশ প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।
কীভাবে খাবেন: ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট সাধারণত খালি পেটে নেওয়া যায়, তবে এটি খাবারের সঙ্গেও গ্রহণ করা যেতে পারে।
সময়: দিনের যে কোনো সময় ভিটামিন সি গ্রহণ করা যায়, তবে সকালের দিকে নেওয়া ভালো।
মাত্রা: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত দৈনিক ৭৫-৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়। চিকিৎসক যদি সাপ্লিমেন্টের পরামর্শ দেন, তবে তার কথা মতোই সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
৩. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে রয়েছে বিভিন্ন বি-ভিটামিন, যা শরীরের এনার্জি উৎপাদন এবং মেটাবলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ভিটামিনগুলো মানসিক স্বাস্থ্য এবং হরমোনের সমতাও বজায় রাখতে সহায়তা করে।
কীভাবে খাবেন: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সাধারণত খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত।
সময়: সকালের নাস্তার সঙ্গে বা সকালের দিকে এটি গ্রহণ করা ভালো, কারণ এটি এনার্জি বাড়াতে সহায়তা করে।
মাত্রা: ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের প্রতিটি উপাদানের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রা ঠিক করতে হবে।
৪. ম্যাগনেসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে, যেমন পেশির কার্যক্রম, নার্ভের কার্যকারিতা, এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে ক্লান্তি, পেশীর সংকোচন, এবং অনিদ্রার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে খাবেন: ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা ভালো।
সময়: ঘুমানোর আগে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করলে এটি পেশী শিথিল করতে এবং ভালো ঘুম পেতে সহায়তা করে।
মাত্রা: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৩১০-৪২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হয়, তবে সঠিক মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত।
৫. ক্যালসিয়াম
ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য। এটি পেশীর সংকোচন এবং নার্ভ সিগনালিংয়েও ভূমিকা রাখে।
কীভাবে খাবেন: ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সাধারণত খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত, কারণ এটি খাবারের মাধ্যমে শোষিত হতে সহায়তা করে।
সময়: ক্যালসিয়ামকে বিভক্ত করে দিনে ২-৩ বার গ্রহণ করা ভালো, কারণ শরীর একবারে বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে না।
মাত্রা: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ১০০০-১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়।
অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ঝুঁকি
সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো অতিরিক্ত মাত্রা। অনেকেই মনে করেন, যত বেশি সাপ্লিমেন্ট নেবেন, ততই উপকার হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন:
ভিটামিন ডি অতিরিক্ত নিলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
ভিটামিন সি অতিরিক্ত নিলে ডায়রিয়া এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়াম বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সঠিক পরামর্শের গুরুত্ব
ভিটামিন এবং সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সাপ্লিমেন্ট এবং এর মাত্রা নির্ধারণ করবেন। সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে, অন্যথায় তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সাপ্লিমেন্ট ও ভিটামিন গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অত্যন্ত জরুরি। আপনি যা খাচ্ছেন, তা কেবলমাত্র স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, বরং এটি কীভাবে, কখন এবং কী পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সঠিকভাবে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ থাকবে, এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
Leave a Reply