আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২০ পূর্বাহ্ন
সাংহাই টাওয়ার চীনের সাংহাই শহরে অবস্থিত একটি আধুনিক স্থাপত্যের মাইলফলক। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম ভবন এবং সাংহাইয়ের কেন্দ্রস্থলে লুজিয়াজুই এলাকায় অবস্থিত। ৬৩২ মিটার (২,০৭৩ ফুট) উঁচু এই ভবনটি চীনের প্রযুক্তিগত ও স্থাপত্যগত দক্ষতার প্রতীক এবং একে আধুনিক নগরায়নের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আমরা সাংহাই টাওয়ারের ইতিহাস, ডিজাইন, স্থাপত্যশৈলী এবং এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
সাংহাই টাওয়ার: একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
সাংহাই টাওয়ারের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে এবং এটি সম্পূর্ণভাবে শেষ হয় ২০১৫ সালে। এর নকশা তৈরি করেছে মার্কিন স্থাপত্য ফার্ম Gensler এবং এটি চীনের স্থাপত্য সংস্থা সাংহাই টাওয়ার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক নির্মিত। সাংহাই টাওয়ার সাংহাইয়ের আর্থিক জোনের অংশ, যা সাংহাই ও চীনের অর্থনৈতিক শক্তি এবং আধুনিক স্থাপত্যের সক্ষমতা প্রদর্শন করে।
এই ভবনটি সাংহাইয়ের পুডং এলাকায় অবস্থিত এবং এটি সাংহাইয়ের বিখ্যাত স্কাইলাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাংহাই টাওয়ার সাংহাইয়ের তিনটি বিখ্যাত আকাশচুম্বী ভবনের একটি, অন্য দুটি হলো জিন মাও টাওয়ার এবং সাংহাই ওয়ার্ল্ড ফিনান্সিয়াল সেন্টার।
সাংহাই টাওয়ারের ডিজাইন এবং স্থাপত্য শৈলী
সাংহাই টাওয়ারের ডিজাইন স্থপতিদের একটি কৌশলগত ভাবনার ফল। এটি শুধুমাত্র উচ্চতায় নয়, স্থাপত্য নকশায় এবং এর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায়ও অনন্য। এর বহির্ভাগ একটি প্যাঁচানো কাঠামোতে তৈরি, যা বাতাসের চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ভবনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্যাঁচানো নকশা বাতাসের চাপ প্রায় ২৪% কমাতে পারে, যা ভবনের উপর কার্যকরী প্রভাব ফেলে এবং শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে।
ভবনটি ১২৮টি তলা বিশিষ্ট, এবং প্রতিটি তলার গঠন আধুনিক স্থাপত্য শৈলী এবং টেকসই নীতিমালা অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। ভবনের নকশা শুধু সুন্দরই নয়, এটি পরিবেশ-বান্ধবও। সাংহাই টাওয়ারে ব্যবহৃত হয়েছে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য বেশ কিছু প্রযুক্তি, যার মধ্যে রয়েছে বৃষ্টি থেকে পানি সংরক্ষণ এবং শক্তি-সাশ্রয়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
সাংহাই টাওয়ারের আভ্যন্তরীণ স্থাপনা
ভবনের আভ্যন্তরীণ স্থাপনা অত্যন্ত আধুনিক এবং কার্যকরী। সাংহাই টাওয়ারে রয়েছে বাণিজ্যিক অফিস স্পেস, বিলাসবহুল হোটেল, রেস্তোরাঁ, খুচরা দোকান, এবং একটি অবজারভেশন ডেক, যা দর্শকদের সাংহাইয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ দেয়। ভবনের ভেতরের স্থাপত্য নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত, যাতে করে দর্শক এবং বাসিন্দাদের জন্য সর্বোচ্চ আরামদায়ক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা যায়।
অফিস স্পেস
সাংহাই টাওয়ারের বেশিরভাগ স্থান বাণিজ্যিক অফিসের জন্য নির্ধারিত। বিশ্বের অনেক বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এখানে তাদের অফিস স্থাপন করেছে। ভবনের উচ্চতর অংশে অবস্থিত এই অফিস স্পেসগুলি আধুনিক প্রযুক্তি এবং সুপরিসর পরিসরে সজ্জিত, যা কর্মক্ষেত্রে কার্যকারিতা বাড়ায়।
হোটেল এবং রেস্তোরাঁ
সাংহাই টাওয়ারের উচ্চতম অংশে অবস্থিত বিলাসবহুল হোটেলগুলি দর্শনার্থীদের জন্য আধুনিক এবং সান্ত্বনাদায়ক সেবা প্রদান করে। এছাড়াও, এখানে রয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের রেস্তোরাঁ, যেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়। এই রেস্তোরাঁগুলোতে বসে দর্শকরা সাংহাইয়ের অপূর্ব স্কাইলাইন উপভোগ করতে পারেন।
আরো জানুন- ইতিহাসে এই দিনে: ১ অক্টোবর
অবজারভেশন ডেক
সাংহাই টাওয়ারের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ হলো এর অবজারভেশন ডেক, যা ভবনের ১১৮তম তলায় অবস্থিত। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ অবজারভেশন ডেকগুলোর একটি, যেখানে থেকে দর্শনার্থীরা পুরো সাংহাই শহরের ৩৬০-ডিগ্রি ভিউ দেখতে পারেন। দিনের বিভিন্ন সময়ে এখানে দর্শকদের ভিড় জমে, বিশেষ করে সন্ধ্যায় যখন শহরের আলো ঝলমলে দৃশ্য চোখে পড়ে।
সাংহাই টাওয়ারের পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি
ভবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর টেকসই নকশা, যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য তৈরি। সাংহাই টাওয়ারের নকশায় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভবনটিকে শক্তি সাশ্রয়ী করে তোলে। যেমন:
১. ডবল-গ্লাস ফ্যাসাড:
ভবনের ডবল-গ্লাস কাঠামো তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে, যা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে। এটি ভবনের ভেতরে ঠাণ্ডা বা গরম আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, ফলে শক্তির ব্যবহার কম হয়।
২. বৃষ্টি থেকে পানি সংরক্ষণ:
ভবনটি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই পানি ভবনের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন বাগান পরিচর্যা এবং শৌচাগারে পানি সরবরাহ। এটি পানির অপচয় কমাতে সহায়তা করে এবং পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. বায়ুরোধী নকশা:
ভবনের প্যাঁচানো নকশা বাতাসের চাপ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে ভবনটি বাতাসের কারণে যে ধাক্কা খায় তা কম হয়। এটি শক্তি সাশ্রয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ ভবনের কাঠামো শক্তিশালী হওয়ায় কম শক্তি ব্যবহারে এটি স্থিতিশীল থাকে।
সাংহাই টাওয়ারের লিফট সিস্টেম
সাংহাই টাওয়ারে ব্যবহৃত লিফট সিস্টেম আধুনিক প্রযুক্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ভবনের ১২৮টি তলায় দ্রুত এবং সহজে যাতায়াত করার জন্য এখানে রয়েছে অত্যন্ত দ্রুতগামী লিফট। এই লিফটগুলো ঘণ্টায় ২০.৫ মিটার (৪৫.৯ মাইল) গতিতে চলে, যা এটিকে বিশ্বের দ্রুততম লিফটগুলোর একটি করে তুলেছে।
সাংহাই টাওয়ার: পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ
সাংহাই টাওয়ার শুধু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেট কর্মীদের জন্য নয়, এটি পর্যটকদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এই ভবন দেখতে আসেন এবং এর অবজারভেশন ডেক থেকে সাংহাইয়ের চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করেন। ভবনের ভেতরে থাকা আর্ট গ্যালারি, রেস্তোরাঁ, এবং শপিং মলগুলো পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করে।
টিকিট এবং সময়সূচি
সাংহাই টাওয়ারের অবজারভেশন ডেকে প্রবেশের জন্য টিকিট কিনতে হয়। টিকিটের মূল্য নির্ভর করে সময় এবং বয়সের উপর। সাধারণত সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে, তবে বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় এটি পরিবর্তন হতে পারে।
সাংহাই টাওয়ারের অবদান
সাংহাই টাওয়ার সাংহাই শহরের জন্য শুধু একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবে শহরের উন্নয়নে অবদান রাখছে। এই ভবনটি সাংহাইয়ের গর্ব এবং চীনের আধুনিক স্থাপত্য এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতা প্রদর্শন করে। এটি চীনের দ্রুত নগরায়নের প্রতীক এবং ভবিষ্যতের স্থাপত্য কৌশলের জন্য একটি উদাহরণ।
সাংহাই টাওয়ার একটি স্থাপত্যের চমৎকার উদাহরণ, যা শুধুমাত্র চীনের নয়, বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত আকাশচুম্বী ভবন হিসেবে পরিচিত। এর অত্যাধুনিক ডিজাইন, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি, এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সাংহাইকে একটি বিশ্বমানের শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। টাওয়ারটির প্রতিটি অংশে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং স্থাপত্যের নিখুঁত
Leave a Reply