আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
বিচারকাজ থেকে বিরত ১৫ বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পদক্ষেপ

বিচারকাজ থেকে বিরত ১৫ বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পদক্ষেপ

বিচারকাজ থেকে বিরত ১৫ বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পদক্ষেপ
বিচারকাজ থেকে বিরত ১৫ বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পদক্ষেপ

বিচারকাজ থেকে বিরত ১৫ বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পদক্ষেপ

সুপ্রিম কোর্টের ১৫ জন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই ঘটনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্ত ও সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর ওপর রিভিউ আবেদন নাকচ হওয়ায় বিচারকদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পরিচালনা করবে।

বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার প্রেক্ষাপট

১৬ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ‘ফ্যাসিস্ট সরকারে সহযোগী ও দলবাজ বিচারপতিদের’ পদত্যাগের দাবীতে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করলে ওই ১২ জন বিচারপতিকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে তাদের  বিচারিক বেঞ্চ কেড়ে নেন৷ ১২ জন হাইকোর্ট বিচারপতির বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার পেছনে মূল কারণ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা পেশাগত অসদাচরণ এবং দলবাজির অভিযোগ। বিচারপতিদের অপসারণ বা তাঁদের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। এর আগে তিন বিচারপতির বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং এবারে আরও ১২ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার ফলে তাদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়।আর তাই এই ১৫ বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

এর পেছনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই সংশোধনী বাতিল করে এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। পরে সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করলে, আপিল বিভাগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কী?

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার একটি স্বতন্ত্র সংস্থা, যা বিচারকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের অপসারণের সুপারিশ করে। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে এই কাউন্সিল কাজ করে। এর সদস্যরা প্রধান বিচারপতি এবং দুইজন আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি। কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে, এই কাউন্সিল তা তদন্ত করে এবং তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পাঠায়।

বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ধরন

১৫ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে মূলত দুটি প্রধান অভিযোগ উঠে এসেছে—দলবাজি এবং দুর্নীতি। দলবাজির অভিযোগটি মূলত বিচারিক স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ বিচারপতিরা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবের অধীনে কাজ করেন, তাহলে বিচার ব্যবস্থা অবাধ ও নিরপেক্ষ থাকার নিশ্চয়তা থাকে না। দুর্নীতির অভিযোগ বিচারকদের নৈতিক অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের মতে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘‘তাদের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচারণ বা আর্থিক বা মানসিক অসততার কোনো অভিযোগ থাকলে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে দিতে হবে। কাউন্সিল তদন্ত করে দেখবে তারা দোষী না নির্দোষ।’’

আরও জানুন –১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ লাখ ৫৩৩৮ জন

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের অতীতের পদক্ষেপ

এর আগেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কিছু বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাঁদের অপসারণের সুপারিশ করেছে। ২০০৩ সালে বিচারপতি সৈয়দ শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগের তদন্ত করে তাঁর অপসারণের সুপারিশ করা হয়। এরপরেও আরও দুটি ঘটনায় বিচারপতিরা তদন্ত শুরু হওয়ার আগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ও এর প্রভাব

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দেওয়ার জন্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল। এর ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেক বিশ্লেষক ও আইনজীবী। সর্বোচ্চ আদালত এই সংশোধনী বাতিল করে দেয় এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার রিভিউ আবেদন করেছিল, যা পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক চাপ

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি। যদি বিচারকরা রাজনৈতিক দলের প্রভাবে বা চাপের অধীনে কাজ করেন, তাহলে বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। এই ঘটনায় দলবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবি উঠলেও, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম এই প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদের মতে, বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আন্দোলনের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত নয়। বরং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে যথাযথ তদন্ত এবং প্রক্রিয়া মেনে অপসারণের সুপারিশ করতে হবে।

বিচারকদের ওপর জনগণের আস্থা

বিচারপতিদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ সাধারণ জনগণের মধ্যে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। জনগণ আশা করে বিচারকরা নৈতিক ও পেশাগতভাবে সৎ থাকবেন এবং তাঁদের রায়গুলো রাজনৈতিক বা আর্থিক প্রভাবমুক্ত থাকবে।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের এই তদন্ত প্রক্রিয়া জনগণের সেই বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করতে পারে। অভিযোগের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার হলে বিচার বিভাগের গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান বাড়বে।

ভবিষ্যতের করণীয়

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কয়েকটি মূল বিষয় সামনে এসেছে যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা জরুরি। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রমের দ্রুততা: বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেই অভিযোগের তদন্ত দ্রুততার সাথে করতে হবে, যাতে বিচারকদের কাজ স্থগিত না থাকে এবং বিচার ব্যবস্থা সচল থাকে।
  • অভিযুক্ত বিচারকদের প্রতি ন্যায়বিচার: অভিযুক্ত বিচারকদেরও ন্যায়বিচারের অধিকার রয়েছে। তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়।
  • বিচার বিভাগের গ্রহণযোগ্যতা: জনগণের আস্থা পুনর্বহাল করতে হবে, যাতে তারা জানে বিচার বিভাগের নৈতিকতা ও কার্যকারিতা নিয়ে কোনো আপস হবে না।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও পেশাগত মান বজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। হাইকোর্টের ১৫ জন বিচারপতির বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার ঘটনা দেশের বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের দ্রুত ও সঠিক তদন্ত বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web