আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। তবে এই সম্পর্কের মধ্যে মাঝে মাঝেই ঘটে যায় এমন কিছু ঘটনা, যা হৃদয়বিদারক ও নিন্দনীয়। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লালারচক সীমান্তে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা এমনই একটি বিপর্যয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় স্বর্ণা দাস নামে ১৬ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি কিশোরী।
গত রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর রাতে, শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্তে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়দের মতে, সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টার সময় বিএসএফের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কিশোরী স্বর্ণার।
স্বর্ণার মরদেহ বিএসএফ নিজেদের কাছে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়। ঘটনাটি সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
স্বর্ণা দাস, জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাস ও সঞ্জিতা রানী দাসের মেয়ে। তিনি স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
স্বর্ণার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল স্বাভাবিক, তবে তাদের চার সন্তানের মধ্যে একজন দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ত্রিপুরায় বসবাস করছেন। মা সঞ্জিতা, স্বর্ণার সঙ্গে ছেলেকে দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায়, সঞ্জিতা ও স্বর্ণা চোরাই পথে ভারত প্রবেশের চেষ্টা করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের একটি দম্পতিও। রাত ৯টার দিকে যখন তাঁরা ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছান, তখন বিএসএফ হঠাৎ করেই গুলি চালায়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান স্বর্ণা, আর আহত হন দম্পতিটি। ঘটনার পর সঞ্জিতা ও বাকিরা প্রাণ রক্ষা করে স্থানীয় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন।
বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের একটি দল খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় স্বর্ণার বাড়িতে যায়। এদিকে, স্থানীয় লালারচক গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয় নেন আহতরা।
জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে হঠাৎ তিনজন লোক সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকেন। দেখি, দুজন গুলিবিদ্ধ। তাঁদের ঘটনা শুনে দ্রুত বিজিবির সাথে যোগাযোগ করি এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠাই।’
বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের লালারচক বিওপির টহল কমান্ডার নায়েক ওবায়েদ জানান, কয়েকজন বাংলাদেশি চোরাই পথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং বিএসএফের গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁরা জানেন।
তবে এখনো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিহত কিশোরীর লাশ হস্তান্তর করেনি। কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষন রায় বলেন, ঘটনাটি তাঁদের জানানো হয়নি তবে তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যু কোনো নতুন ঘটনা নয়। এই ধরনের ঘটনা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে এই ধরনের ঘটনাগুলোর প্রতিকার নিয়ে। তবে প্রতিবারই সুনির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে সাময়িক আলোচনা ও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
সীমান্ত সুরক্ষা দুই দেশেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তবে এটি যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, সেই বিষয়েও উভয় পক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। সীমান্ত পারাপারের সময় কোন ব্যক্তির প্রাণহানি বা আহত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আন্তর্জাতিক আইন ও নৈতিক দায়িত্ব মেনে চলা প্রতিটি দেশের জন্য জরুরি।
Leave a Reply