আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
বিএনপির সাত আইনজীবী আদালত অবমাননা থেকে মুক্তি: আপিল বিভাগের রায়

বিএনপির সাত আইনজীবী আদালত অবমাননা থেকে মুক্তি: আপিল বিভাগের রায়

বিএনপির সাত আইনজীবী আদালত অবমাননা থেকে মুক্তি: আপিল বিভাগের রায়
বিএনপির সাত আইনজীবী আদালত অবমাননা থেকে মুক্তি: আপিল বিভাগের রায়

বিএনপির সাত আইনজীবী আদালত অবমাননা থেকে মুক্তি: আপিল বিভাগের রায়

আজ রবিবার (৩ নভেম্বর), প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ বিএনপির সাতজন আইনজীবীকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। আদালতের এই রায়ে বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ বিচারিক প্রক্রিয়ার চাপ থেকে মুক্তি পেলেন। একই সঙ্গে আবেদনকারী পক্ষ আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা প্রদান করতে হবে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে।

আদালত অবমাননা থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত আইনজীবীরা

বিএনপির সাতজন আইনজীবী নেতা যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন:

  1. এ জে মোহাম্মদ আলী – জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল।
  2. ব্যারিস্টার কায়সার কামাল – জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব এবং বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক।
  3. অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি – বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য।
  4. অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া – সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
  5. ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল – সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক।
  6. অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান – সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক।
  7. অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল – জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক।

এই সাত শীর্ষ আইনজীবী আদালত অবমাননার মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। গত ১২ জুন আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে তাদের সংবাদ সম্মেলন এবং মিছিল আয়োজনের প্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। পরে আপিল বিভাগ তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়।

আদালতের রায়ের গুরুত্ব এবং বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিফলন

এই রায়ের মাধ্যমে আপিল বিভাগ বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক আচরণের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকার বার্তা প্রদান করেছে। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে করা আবেদনকারীর অনুপস্থিতির কারণে তাকে জরিমানা করা হয়েছে, যা বিতর্কিত বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতিফলন। আদালত অবমাননার মামলা হতে অব্যাহতি প্রদানের রায় দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা।

হাইকোর্ট

হাইকোর্ট

এদিকে আদালত কর্তৃক প্রয়োগ করা জরিমানার অর্থ প্রাপ্তি জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে প্রদান করতে বলা হয়েছে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন হলো একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান যা মানবকল্যাণে কাজ করে এবং এই ধরনের ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান আইন ও মানবাধিকারের প্রতি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত করে।

আদালত অবমাননার মামলার পটভূমি এবং বিএনপি আইনজীবী ফোরামের ভূমিকা

প্রসঙ্গত, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ফোরামের নেতারা গত ১২ জুন আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ আয়োজন করেন, যা আদালত অবমাননার অভিযোগে পড়ে। এই আয়োজনের প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং বিষয়টি আদালতে ওঠে। তবে পরে আপিল বিভাগ তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

বিএনপির আইনজীবী ফোরাম দাবি করে যে, বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য এই আয়োজন ছিল। তাদের মতে, কোনো বিচার বিভাগের কর্মকা- নিয়ে সুষ্ঠু এবং যুক্তিপূর্ণ আলোচনার সুযোগ রয়েছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এছাড়া তারা আদালতের প্রতি সর্বদা সম্মান বজায় রেখেই এই সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

আরো পড়ুন- দেশের সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফের ঘোষণা

এই মামলার গুরুত্ব এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

আদালত অবমাননার মামলাটি দেশের বিচার ব্যবস্থার কার্যক্রম এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা দেশের গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ এবং কোনো বিচার ব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ হতে পারে না। বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যে কোনো মতামত, সে যতই কঠোর হোক না কেন, সেটি দায়িত্বশীলভাবে তুলে ধরতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালত অবমাননার আইন ব্যবহারে অবশ্যই সংযম ও সঠিকতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, এর মাধ্যমে আইনজীবী, বিচারপতি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস বজায় রাখা যায়। আর এই মামলায় বিএনপির আইনজীবী নেতাদের প্রতি আপিল বিভাগের অব্যাহতি রায় বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও শক্তিশালী নীতিমালার প্রতিফলন।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের প্রতিক্রিয়া

এই রায়ের পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিএনপির আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ. জে. মোহাম্মদ আলী বলেন, “এই রায় বিচার বিভাগের ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের আস্থা আরও বাড়িয়েছে। এটি বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও সম্মানের বহিঃপ্রকাশ।” তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়ায় তারা ন্যায়বিচারের আশ্বাস পেয়েছেন এবং সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আগের মতোই অবিচল থাকবে।

আইনজীবীদের ভূমিকা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা

বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখে এবং সঠিক পথে থেকে মত প্রকাশ করা, গণতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য। আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থা এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এই প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিচার বিভাগ তার কার্যক্রমে স্বাভাবিক নীতিমালা অনুসরণ করে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া অবাধ ও স্বাধীন থাকে।

মামলা থেকে অব্যাহতির প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ পরিণতি

বিএনপির এই সাত আইনজীবীর অব্যাহতি বিচার বিভাগের প্রতি আস্থার প্রতিফলন এবং আইনজীবী সমাজের মধ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখার বার্তা প্রদান করেছে। এই রায় দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার এক প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা পুনরায় এড়াতে বিচার বিভাগের প্রতি দায়িত্বশীলতা এবং বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সুস্পষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ প্রয়োজন।

বিএনপির আইনজীবী নেতাদের আদালত অবমাননা মামলায় অব্যাহতি প্রদানের রায় দেশের বিচার ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার সংরক্ষণের এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। এই রায় থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার এবং বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web