আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন
নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এই অর্জনের পর শনিবার (২ নভেম্বর) তাদের সংবর্ধনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর যমুনায় তার বাসভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে নারী ফুটবলাররা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তী লক্ষ্যগুলো নিয়ে কথা বলেন।
এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগে বাংলাদেশ দলের ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার একটি বিশেষ অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের বাইরে খেলার অভিজ্ঞতা বাড়ানো জরুরি। এশিয়ার বাইরের শীর্ষ ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে খেলে আমাদের মেয়েরা নিজেদের দক্ষতাকে আরও শাণিত করতে পারবে। বিশেষ করে ইউরোপের সেরা দল বার্সেলোনার মতো শক্তিশালী ক্লাবের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলতে পারলে আমাদের দলের জন্য তা হবে অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।”
এই চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল সারা দেশের মানুষের মনে আশা ও অনুপ্রেরণা ছড়িয়েছে। সাফল্যের সোপানে উঠে দেশের সম্মান বহনকারী এই ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই সাফল্য অর্জন করতে আপনারা যে পরিশ্রম করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। গোটা জাতি আপনাদের এই অর্জনে গর্বিত। আপনাদের এই সাহসিকতা এবং দৃঢ়তা ভবিষ্যতে আমাদের নারী খেলোয়াড়দের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।”
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা এবং স্বপ্ন ভাগাভাগির মুহূর্তগুলো। নারী ফুটবলাররা তাদের জীবনের নানা সংগ্রাম এবং ফুটবল ক্যারিয়ারের ওঠাপড়া নিয়ে কথা বলেন।
শনিবার সকালে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নারী ফুটবল দলের সদস্যরা তাদের জীবনের সংগ্রাম, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেন।
সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরপরই, অধ্যাপক ড. ইউনূস নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আপনাদের এই অর্জন জাতির জন্য গর্বের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণার।” এরপর তিনি খেলোয়াড়দের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদের সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক প্রথমেই তাদের দীর্ঘ পরিশ্রম ও সাধনার গল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ফুটবলে আমাদের এই দীর্ঘ যাত্রা অত্যন্ত কঠিন হলেও আমরা কখনোই হার মানিনি। মাঠে আমাদের ঐক্য, দলগত পরিশ্রম এবং স্বপ্নপূরণের প্রচেষ্টা এই সাফল্যের মূল কারণ।”
দলের অন্যতম খেলোয়াড় তোহুরা খাতুন বলেন, “আমাদের জীবনে অনেক বাধা এসেছে, তবে আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। সাফল্যের এই মুহূর্তে আমরা জাতির সবার ভালোবাসা পেয়ে আরও বেশি অনুপ্রাণিত বোধ করছি।”
অধ্যাপক ইউনূস খেলোয়াড়দের সমস্যা মনোযোগ সহকারে শুনে বলেন, “আমি আপনাদের সংকট ও প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন। এগুলোর সমাধানে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করব।” এছাড়া তিনি দলকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিরা ফুটবলের প্রতি দেশের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, যিনি বাংলাদেশের খেলাধুলায় নারীদের অগ্রগতির জন্য সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন প্রকল্পের ওপর আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল দেশকে যে সম্মান এনে দিয়েছে, তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে।”
নারী ফুটবল দলের সাম্প্রতিক সাফল্য দেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফুটবল অনুশীলনের জন্য আধুনিক অবকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূসের মতো নেতৃবৃন্দের সহায়তায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে।
আরো জানুন …….. আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
Leave a Reply