আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
শিশুর পেটে ব্যথার সমস্যায় প্রায়ই ভুগতে পারে এবং এটি বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। পেট ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অনেক কারণের জন্য হতে পারে—সহজ বদহজম থেকে শুরু করে জটিল আন্ত্রিক রোগ পর্যন্ত। শিশুরা তাদের অস্বস্তি বা যন্ত্রণার কারণ স্পষ্টভাবে জানাতে পারে না, তাই বাবা-মায়ের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে তারা সচেতন থাকেন এবং সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।
পেট ব্যথার কারণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে শিশুর অস্বস্তি কমানো সহজ হতে পারে।
শিশুর পেটে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ:
বেশিরভাগ শিশুর পেটে ব্যথা সাধারণত গ্যাস বা বদহজমের কারণে ঘটে। শিশুরা যখন নতুন কোনো খাবার খায়, তখন তাদের শরীর তা হজম করতে কিছুটা অসুবিধা বোধ করতে পারে। এতে গ্যাস তৈরি হয়, যা পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া দ্রুত খাবার খাওয়া বা অতিরিক্ত খাওয়া থেকেও বদহজম হতে পারে। শিশুরা সাধারণত ফাস্টফুড, অতিরিক্ত মিষ্টি বা তেলযুক্ত খাবার খেলে এমন সমস্যা বাড়তে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য শিশুদের মধ্যে পেট ব্যথার অন্যতম সাধারণ কারণ। শিশুদের মধ্যে পর্যাপ্ত পানি বা ফাইবারযুক্ত খাবার না খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তারা যদি নিয়মিত টয়লেটে না যায়, বা কষ্ট পায়, তবে তাদের পেটে ব্যথা শুরু হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু ক্ষেত্রে শিশুর পেট ব্যথা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হতে পারে। যেমন, ‘গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস’ নামক ভাইরাল সংক্রমণটি শিশুদের মধ্যে একটি প্রচলিত সমস্যা। এই ধরনের সংক্রমণ পেট ব্যথার পাশাপাশি বমি, ডায়েরিয়া এবং জ্বরের মতো উপসর্গের কারণ হতে পারে।
কিছু শিশুরা বিভিন্ন খাবারের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যেমন—দুধের ল্যাকটোজ, গ্লুটেন বা অন্যান্য উপাদান। এটি তাদের পেটে ব্যথা, ফোলাভাব এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। শিশুরা যদি কোনো নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথায় ভোগে, তবে সেই খাবারটি বাদ দেওয়া দরকার।
আন্ত্রিক জটিলতা, যেমন—অ্যাপেন্ডিসাইটিস বা অন্ত্রের ব্লকেজ শিশুর দীর্ঘস্থায়ী পেট ব্যথার কারণ হতে পারে। এসব সমস্যায় শিশুরা সাধারণত প্রচণ্ড ব্যথার অভিযোগ করে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
শিশুরা কখনো কখনো মানসিক চাপের কারণে পেটে ব্যথা অনুভব করতে পারে। স্কুলের চাপ, পারিবারিক সমস্যা, বা নতুন কোনো পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থেকে এই ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় মানসিক চাপের ফলে শিশুরা খাওয়ার প্রতি অনীহা প্রদর্শন করে এবং পেটে অস্বস্তি বোধ করে।
আরো পড়ুন……. স্থূলতার কারণ, প্রভাব এবং এ থেকে মুক্তির উপায়
শিশুরা সবসময় তাদের ব্যথা বা অসুস্থতা প্রকাশ করতে পারে না। তাই বাবা-মাকে শিশুর আচরণ এবং শারীরিক লক্ষণগুলো মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শিশুরা যদি নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখায়, তাহলে পেট ব্যথার সমস্যাটি শনাক্ত করা যায়:
শিশুর পেটে ব্যথা হলে প্রথমেই তার ব্যথার প্রকৃতি এবং কারণ বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সাধারণ ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা কমানো যেতে পারে, কিন্তু গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে কিছু করণীয় পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো:
পানি হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং গ্যাস বা বদহজমের সমস্যার প্রতিকার করে। শিশুকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে, বিশেষত যদি সে পেট ব্যথার অভিযোগ করে।
পেট ব্যথার অন্যতম কারণ খাদ্যাভ্যাস। শিশুকে সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া উচিত, যেমন—ভাত, স্যুপ, সেদ্ধ শাকসবজি, কলা ইত্যাদি। অতিরিক্ত তেল বা মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
গ্যাসের কারণে পেট ব্যথা হলে পেটের উপর হালকাভাবে ঘষা বা গরম পানির ব্যাগ দিয়ে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এটি পেটের পেশিকে আরাম দেয় এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
যদি কোষ্ঠকাঠিন্য পেট ব্যথার কারণ হয়, তবে শিশুর খাবারের মধ্যে ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন—ফল, শাকসবজি এবং দানাশস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
যদি শিশুর পেট ব্যথা দীর্ঘমেয়াদী হয় বা তার সাথে অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন—উচ্চ তাপমাত্রা, বমি, বা রক্তক্ষরণ, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি বা অন্যান্য পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।
শিশুর ঘন ঘন পেটে ব্যথার সমস্যা প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদক্ষেপ হলো:
শিশুর খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার যোগ করা উচিত। ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে। পাশাপাশি, খাবার সময় শিশুকে ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে।
শিশুকে নিয়মিত খেলাধুলা বা শারীরিক কার্যকলাপে উৎসাহিত করা উচিত। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমায়।
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যও পেটের ব্যথার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। তাকে স্কুলের পড়া বা অন্যান্য সামাজিক দায়িত্বের বিষয়ে খুব বেশি চাপ না দিয়ে স্বাভাবিক থাকতে উৎসাহিত করা উচিত। বাবা-মায়ের সহমর্মিতা শিশুর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
শিশুর কোনো ধরনের অসুস্থতা বা সমস্যা দেখা দিলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। পেট ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরীক্ষা করতে হবে।
শিশুর পেটে ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর। যদি সাধারণ বদহজম বা গ্যাস থেকে সমস্যা হয়, তবে নিচের কিছু ঘরোয়া উপায় এবং ওষুধের সাহায্যে তা সমাধান করা যেতে পারে:
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেটে ব্যথার জন্য ওষুধ প্রয়োজন হয় না। তবে চিকিৎসক শিশুদের জন্য হালকা গ্যাস বা বদহজমের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। কোনো ওষুধ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর ঘন ঘন পেটে ব্যথা নিয়ে উদ্বেগিত হওয়া স্বাভাবিক, তবে এই সমস্যার প্রকৃতি এবং প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে এটি মোকাবিলা করা সহজ। পেট ব্যথার কারণগুলো সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর উপসর্গের সঙ্গে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Leave a Reply