আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
ঢাকার মিরপুর কচুক্ষেতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন

ঢাকার মিরপুর কচুক্ষেতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন

ঢাকার মিরপুর কচুক্ষেতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন
ঢাকার মিরপুর কচুক্ষেতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন

রাজধানী ঢাকার মিরপুর কচুক্ষেত এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন

রাজধানী ঢাকার মিরপুর কচুক্ষেত এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দাবিতে বিক্ষোভ ও উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। এতে দুজন শ্রমিক, আল আমিন ও রুমা বেগম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।


আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের গার্মেন্টস শ্রমিকরা বকেয়া বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ঢাকার মিরপুর এলাকায় অবস্থিত ডায়না গার্মেন্টস-এর শ্রমিকরাও তাদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য প্রাপ্তির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। তবে, কোনো সুরাহা না পাওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভে রাস্তায় নামেন।

ডায়না গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিভিন্ন দফায় দাবি জানিয়ে বকেয়া বেতন ও সুবিধাদি প্রদানের প্রতিশ্রুতি পেলেও তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকাল ১০টা নাগাদ কচুক্ষেত এলাকায় সমবেত হন। তখনই তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।


সংঘর্ষের বিবরণ ও আগুনের সূত্রপাত

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডায়না গার্মেন্টসের শ্রমিকরা মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেত সড়কে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন এবং রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

গাড়িতে হামলা

গাড়িতে হামলা

একটি প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনায় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে লাঠিচার্জ শুরু করে। এসময় শ্রমিকদের কিছু অংশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ির ওপর আক্রমণ চালায় এবং এক পর্যায়ে গাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন

সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিমা খানম বলেন, “কচুক্ষেত এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি এবং পুলিশের একটি লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাড়ির আগুন নেভাতে কাজ করছে।”


আহত ও গুলিবিদ্ধ শ্রমিকের বিবরণ

সংঘর্ষ চলাকালে আল আমিন ও রুমা বেগম নামে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে, এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। শ্রমিক নেতারা দাবি করছেন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শ্রমিকদের মতে, বকেয়া বেতন পরিশোধ না করায় এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি না রাখায় তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি, তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করায় শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

এই সংঘর্ষ ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থান নেয় এবং পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলে। যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়।

এক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে এক বহিরাগত ব্যক্তি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে উসকানিমূলক ভূমিকা পালন করেন, যার প্রভাবেই শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। বহিরাগত ওই ব্যক্তির মাধ্যমে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করছে যে, এই ব্যক্তি আসলে কারা এবং তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল।


শ্রমিকদের দাবিদাওয়া ও বকেয়া বেতনের পটভূমি

ডায়না গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বেতন, কাজের পরিবেশের মানোন্নয়ন, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে। এসব দাবির মধ্যে সময়মতো বেতন পরিশোধ, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি, এবং কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অন্যতম।

তবে, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকদের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা চললেও কার্যকর কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। ফলে শ্রমিকদের একাংশ তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। শ্রমিকরা দাবি করেন, প্রায় সময় তাদের বেতন প্রদানে বিলম্ব হওয়ার কারণে জীবনযাপনে চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বকেয়া বেতন না পাওয়ার সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।


স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা ও সংঘর্ষের ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মিরপুর কচুক্ষেত এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং সাধারণ জনগণ নিরাপত্তার জন্য দ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে শুরু করেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন যে, এই ধরনের সংঘর্ষ এবং বিশৃঙ্খলার ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং তাদের চলাফেরায় ভীতি কাজ করছে।

আরো পড়ুন- আশুলিয়ার ৪৬ লাশ পোড়ানোর ‘মাস্টারমাইন্ড’ ওসি সায়েদ গ্রেপ্তার


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক উদ্যোগ

এই ঘটনার পর পরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুর এলাকার মূল সড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা সদস্যরাও ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করছেন। এদিকে, প্রশাসন কৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে যাতে করে পুনরায় কোনো সংঘর্ষ বা উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়।


পূর্ববর্তী আন্দোলন ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংকট

বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রায়শই বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে, বেতন-ভাতা এবং কর্মপরিবেশের উন্নয়ন নিয়ে শ্রমিকরা প্রায়ই বিক্ষোভে অংশ নেন। তবে, সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান স্থায়ী হয় না।

শ্রমিকদের অভিযোগ, গার্মেন্টস মালিকপক্ষের কাছ থেকে বারংবার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায় কিন্তু তা সময়মতো কার্যকর করা হয় না। এমনকি অনেক সময় মালিকরা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে নানা অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন, যা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এই সংঘর্ষ এবং গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা দেশের গার্মেন্টস শিল্পের চ্যালেঞ্জকে আরও সামনে নিয়ে এসেছে। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা প্রদান এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এই ধরনের সংঘর্ষ ও উত্তেজনা এড়ানো সম্ভব।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web