আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
পলিথিন উৎপাদন বন্ধে ৩ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অভিযান

পলিথিন উৎপাদন বন্ধে ৩ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অভিযান

পলিথিন উৎপাদন বন্ধে ৩ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অভিযান: পরিবেশ সুরক্ষায় দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পলিথিন। একে নিয়ন্ত্রণে দেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। আসন্ন রোববার, ৩ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী শুরু হবে এই অভিযান, যেখানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস জানান, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য দেশের পরিবেশ রক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

পরিবেশের ওপর পলিথিনের প্রভাব

পলিথিন খুব ধীরগতিতে মাটিতে মিশে, যা মাটির উর্বরতা হ্রাস করে। এটি পানি ও বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করে, যা প্রাণী ও উদ্ভিদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পানির প্রবাহে পলিথিন জমে থাকার কারণে বাঁধ তৈরি হয়, যার ফলে অতিবৃষ্টি বা বন্যার সময় পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়।

পলিথিন উৎপাদন বন্ধে ৩ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অভিযান: পরিবেশ সুরক্ষায় দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

 

পলিথিনের ব্যবহারের ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা দেয়। পলিথিন থেকে নির্গত ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা এবং হরমোনজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে।

পলিথিন নিষিদ্ধকরণে সরকারের কার্যক্রম

বাংলাদেশ সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়, তবে এটি কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান উদ্যোগে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে পলিথিন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিশেষ মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার সদস্যরা নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাবেন। পলিথিন ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সাধারণ জনগণ ও দোকানিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

পলিথিনের বিকল্প এবং পরিবেশবান্ধব সমাধান

পলিথিন নিষিদ্ধ করতে হলে এর বিকল্প পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। নিচে কিছু বিকল্প উপায় উল্লেখ করা হলো:

  1. পাটের ব্যাগ: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  2. কাপড়ের ব্যাগ: পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের ব্যাগ সহজেই পাওয়া যায় এবং এটি বহন করতে সুবিধাজনক।
  3. বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং: বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং সামগ্রী সহজেই মাটির সাথে মিশে যায় এবং এতে পরিবেশ দূষণ কমে।

আরও জানুন- আগামী সোমবার ৪ নভেম্বর ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম

পলিথিন ব্যবহার বন্ধে শুধুমাত্র আইন প্রয়োগই নয়, বরং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করতে এবং বিকল্প পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির সমন্বয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।

স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে তারা পলিথিনের ব্যবহার এড়িয়ে চলে।

 

পলিথিন উৎপাদন বন্ধে ৩ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অভিযান: পরিবেশ সুরক্ষায় দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

সামাজিক মাধ্যমে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে নিয়মিত প্রচারণা চালানো যেতে পারে। বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে সচেতনতামূলক ভিডিও, তথ্যগ্রাফিক্স এবং নিবন্ধ পোস্ট করা যেতে পারে।

মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য নজরদারির ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিটি অভিযানের তথ্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়।

রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন এনজিও এবং পরিবেশ সুরক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যেতে পারে। এনজিওগুলো পলিথিন বন্ধে জনগণকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখতে পারে এবং বিকল্প পণ্যের ব্যবহার প্রচারে সহযোগিতা করতে পারে।

বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এখনও পলিথিন ব্যাগের ওপর নির্ভরশীল। সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে ব্যবসায়ীদের বিকল্প পণ্যে অভ্যস্ত করতে হবে। প্রয়োজনে সরকার আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারে, যাতে তারা বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার শুরু করতে পারেন।

শুধু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এ উদ্যোগ সফল করতে হলে নিয়মিত অভিযান, পরিবেশবান্ধব বিকল্প প্রচার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা চালানো জরুরি।

পরিবেশ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সরকার এবং জনগণ সম্মিলিতভাবে কাজ করলে একটি পলিথিনমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এই পদক্ষেপ শুধু পরিবেশ সুরক্ষায় নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web