আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দুইজন অগ্রগামী বিজ্ঞানী, জন হোপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টন। তাদের গবেষণা মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) অন্যতম ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তির উন্নয়নকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিচ্ছে। সুইডিশ নোবেল একাডেমি ৩ অক্টোবর এই পুরস্কার ঘোষণা করে। এই যুগান্তকারী সাফল্যের স্বীকৃতিতে তারা নোবেল পুরস্কারের মর্যাদা অর্জন করেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা এই দুই বিজ্ঞানীর অসামান্য কাজ এবং তাদের গবেষণার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করবো।
জন হোপফিল্ড, যিনি বর্তমানে প্রিন্সটন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক, নিউরাল নেটওয়ার্ক ডিজাইনের ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। নিউরাল নেটওয়ার্ক এমন একটি কাঠামো যা মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনের মতো কাজ করতে পারে। এটি তথ্য সংগ্রহ এবং পুনর্গঠন করতে সক্ষম। হোপফিল্ড নিউরাল নেটওয়ার্কের একটি কাঠামো তৈরি করেছেন, যা মেমোরি বা স্মৃতি ধারণ করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়।
এই পদ্ধতি মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে অনুসরণ করে মেশিনে যুক্ত করেছে, যার ফলে মেশিনও অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে পারে। বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে এটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তার গবেষণা বর্তমান নিউরাল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে।
আরও জানুন-বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder)
অন্যদিকে, জিওফ্রে হিন্টন, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মেশিন লার্নিংয়ের অন্যতম পথিকৃৎ, নিউরাল নেটওয়ার্কের আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো উদ্ভাবন করেছেন। তার পদ্ধতি ডাটা থেকে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে সক্ষম। এই পদ্ধতি বিশাল পরিমাণ ডাটা থেকে নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করতে সহায়তা করে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
হিন্টনের এই গবেষণা বর্তমান মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিংয়ে (Deep Learning) অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি গভীর নিউরাল নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও নিখুঁতভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়েছে।
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কারের ঘোষণাটি বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। স্টকহোমে সুইডিশ নোবেল একাডেমির একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। জন হোপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টনের নাম যখন ঘোষণা করা হলো, তখন পুরো বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ে উদ্দীপনার ঢেউ বয়ে যায়।
নোবেলজয়ীরা প্রত্যেকে নোবেল মেডেল, সনদপত্র এবং ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা পুরস্কার হিসেবে পাবেন, যা প্রায় ১০ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ বাংলাদেশি টাকার সমান। এই পুরস্কারের অর্থ দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
নিউরাল নেটওয়ার্ক বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, রোবটিক্স এবং ডাটা বিশ্লেষণের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ডাটা বিশ্লেষণ করা যায় এবং ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, নিউরাল নেটওয়ার্কের সাহায্যে মেশিন এখন ছবি, ভিডিও এবং অডিও থেকে নির্দিষ্ট প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে সক্ষম, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন অটোমেটেড ড্রাইভিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তা, অত্যন্ত কার্যকর।
হোপফিল্ড নিউরাল নেটওয়ার্কের একটি বিশেষ কাঠামো উদ্ভাবন করেছেন, যা মেমোরি স্টোরেজ এবং ডাটা পুনর্গঠনের ক্ষমতা রাখে। এটি মেশিনের বুদ্ধিমত্তা উন্নত করতে এবং স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিউরাল নেটওয়ার্কের এই উদ্ভাবন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
হোপফিল্ডের এই নেটওয়ার্কটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি সঠিকভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেই তথ্য পুনর্গঠন করতে পারে। এর ফলে মেশিন ডাটা বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে সক্ষম হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত হয়।
জিওফ্রে হিন্টনের গবেষণা ডিপ লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ডিপ লার্নিং মূলত মেশিন লার্নিংয়ের এমন একটি শাখা, যেখানে নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মেশিন নিজে থেকে শিখতে পারে। এটি মূলত এক ধরনের কৃত্রিম নিউরন, যা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী অনুকরণ করে।
হিন্টনের গবেষণা নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন ডাটার বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে মেশিন এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, চিত্র বা ভাষার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যা মেশিনকে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
এই বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা এমন এক গবেষণায় অবদান রেখেছেন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। জন হোপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টনের গবেষণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তাদের গবেষণা মেশিন লার্নিং, রোবটিক্স, এবং ডিপ লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকা শক্তি হবে। নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং ডিপ লার্নিংয়ের পদ্ধতি বর্তমান প্রযুক্তি জগতে যেমন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তেমনি ভবিষ্যতেও এটি আরো বেশি উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে জন হোপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টনের অসামান্য গবেষণাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাদের গবেষণা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এখন প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অগাধ।
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জন হোপফিল্ড ও জিওফ্রে হিন্টনের গবেষণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি। নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং ডিপ লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তি যে ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাদের গবেষণা কেবল বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির অগ্রগতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
Leave a Reply