আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা: লেবাননের হিজবুল্লাহর আক্রমণ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। শনিবার সকালে এই হামলা চালানো হয় বলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, তেল আবিবের উত্তরে সিজারিয়ায় অবস্থিত নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বাসভবনে ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই হামলার সময় নেতানিয়াহু এবং তার পরিবারের কোনো সদস্যই ওই বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন না, ফলে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ড্রোন হামলা ইসরায়েল-লেবানন সম্পর্কের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নেতানিয়াহুর বাসভবনকে লক্ষ্য করে এই আক্রমণের পর ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী লেবানন থেকে পরিচালিত আরও দুটি ড্রোন শনাক্ত করে তা ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, লেবাননের সীমানা থেকে আসা এই ড্রোনগুলো ভূপাতিত করার পর তেল আবিবের বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে, যার ফলে সাধারণ মানুষ দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়। এটি ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের সন্ত্রাসী হুমকির এক অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে ড্রোনের ব্যবহার করে হামলা করা হচ্ছে।
এই ড্রোন হামলার ঘটনাটি হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিক আক্রমণের একটি অংশ। এর আগে, লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী ইসরায়েলের হাইফায় অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালায়। সেই হামলায় অন্তত পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয় এবং আরও ৬৭ জন গুরুতর আহত হন।
হিজবুল্লাহর এই ধরনের ড্রোন হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ আরও বাড়িয়ে তুলছে। ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে এই সংঘর্ষ এখন ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যা দুই পক্ষের মধ্যে সামরিক উত্তেজনাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার বাসভবনে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই ধরনের হামলা আমাদের দুর্বল করবে না। আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি।”
অন্যদিকে, হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, এই হামলাটি ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি এবং লেবাননের ভেতরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবেই পরিচালিত হয়েছে।
আরো পড়ুন- ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে ইসরায়েলি চিকিৎসকের ময়নাতদন্তে নতুন তথ্য
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। আয়রন ডোম (Iron Dome) সিস্টেম এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্রোন শনাক্ত ও ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।
তবে, হিজবুল্লাহর এই ধরনের ড্রোন হামলা ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ড্রোনের মাধ্যমে ছোট কিন্তু ক্ষতিকর আক্রমণ চালানো যায় এবং তা চিহ্নিত করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
এই ড্রোন হামলার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধ করে আসছে এবং উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিক ড্রোন হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করার প্রচেষ্টা উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ আরও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে এই উত্তেজনা সামরিক এবং রাজনৈতিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় ধরনের সংকটের জন্ম দিতে পারে।
হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে। এর ফলে লেবানন এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা এবং সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রেক্ষাপটকে আরও দুর্বোধ্য করে তুলছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী হলেও হিজবুল্লাহর ড্রোন প্রযুক্তি এবং সামরিক কৌশল ইসরায়েলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
এই ধরনের সংঘর্ষ এবং ড্রোন হামলার মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযান হতে পারে, যা শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রভাব ফেলতে পারে।
সুত্র: আল-জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল
Leave a Reply