আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
দেশের ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন

দেশের ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন

দেশের ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন
দেশের ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন

দেশের ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন, পূর্বের নামের পরিবর্তে জেলার নামে পুনঃনামকরণ

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব কলেজে পূর্বে সংযুক্ত ব্যক্তিত্বদের নাম সরিয়ে জেলার নামকরণ যুক্ত করা হয়েছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারীর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়।

সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী

সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী

এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে, মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর এবং দিনাজপুর জেলার নাম সংবলিত মেডিকেল কলেজগুলোর নতুন নামকরণ কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার স্থানীয় পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষায় স্থানীয় গুরুত্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


নাম পরিবর্তনের বিবরণ

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, দেশের ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পুনঃনামকরণ করে জেলাভিত্তিক নামে রাখা হয়েছে। মেডিকেল কলেজগুলোর নতুন নামকরণ হয়েছে নিম্নরূপ:

  1. মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ –> মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ
  2. নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ –> নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ
  3. জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ –> জামালপুর মেডিকেল কলেজ
  4. টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ –> টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ
  5. ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ –> ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ
  6. দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ –> দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি এই পদক্ষেপটি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনা তৈরি করেছে এবং বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।


নাম পরিবর্তনের কারণ এবং প্রয়োজনীয়তা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, এই নাম পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হল মেডিকেল কলেজগুলোকে স্থানীয় অঞ্চলের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত করা। ব্যক্তিনাম পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিটি মেডিকেল কলেজকে জেলার নামে নতুন পরিচিতি দেওয়া হয়েছে, যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে এদের আরও সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়।

নামকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয়তার প্রভাব তুলে ধরে এক কর্মকর্তা জানান, এই পরিবর্তন স্বাস্থ্য শিক্ষায় স্থানীয় গুরুত্ব এবং আত্মপরিচিতি তৈরি করতে সহায়ক হবে। নতুন নামকরণের ফলে জনগণের মাঝে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি পাবে এবং জেলা ভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আরো পরিচিতি পাবে।


মেডিকেল কলেজের ইতিহাস এবং নতুন নামকরণের প্রভাব

১. মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ

মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে উল্লেখযোগ্য একটি পদক্ষেপ। কর্নেল মালেক, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের নামাঙ্কিত এই প্রতিষ্ঠানটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করতে দীর্ঘদিন ধরে অবদান রাখছে। নতুন নাম মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ জেলার প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে শিক্ষা প্রদানে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২. নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ

আব্দুল মালেক উকিলের নামে নামাঙ্কিত নোয়াখালীর এই মেডিকেল কলেজ স্বাস্থ্যখাতে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে আসছে। নতুন নামের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি এলাকাবাসীর কাছে আরও পরিচিত হয়ে উঠবে এবং নোয়াখালীর নিজস্ব একটি স্বকীয়তা গড়ে তুলতে পারবে।

৩. জামালপুর মেডিকেল কলেজ

জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে। শেখ হাসিনার নামাঙ্কিত এই মেডিকেল কলেজের পরিবর্তিত নাম নতুন উদ্যোগকে আরও সহজভাবে তুলে ধরবে বলে মনে করা হচ্ছে।

৪. টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ

টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ টাঙ্গাইলের জনসাধারণকে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা ও শিক্ষায় সুযোগ প্রদান করে আসছে। নতুন নামের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে এটি আরও যুক্ত থাকবে।

৫. ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ফরিদপুর জেলার স্বাস্থ্য শিক্ষায় অবদান রেখে আসছে। ব্যক্তিনামের পরিবর্তে ফরিদপুরের এই নতুন নামকরণ স্থানীয় পরিচিতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।

৬. দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ

দিনাজপুরের এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ দিনাজপুর অঞ্চলের চিকিৎসা শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এই নাম পরিবর্তন জেলার মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষার সাথে যুক্ত করতে সহায়ক হবে।


স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে নতুন উদ্যোগ এবং নাম পরিবর্তনের প্রভাব

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে এই ধরনের পদক্ষেপ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে অনেকে মনে করছেন। নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজ নিজ অঞ্চলের সাথে বিশেষ পরিচয় তৈরির সুযোগ পাবে। একইসঙ্গে এটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্র্যান্ডিং এবং ঐতিহ্যের সাথেও একটি সেতুবন্ধন রচনা করবে।

আরো পড়ুনঢাকার মিরপুর কচুক্ষেতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাম পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা নিজেদের এলাকা এবং প্রতিষ্ঠানকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে পারবে, যা স্বাস্থ্যখাতে নতুন উদ্যম ও সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।


নতুন নামকরণের প্রতিক্রিয়া এবং জনমত

এই নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং মেডিকেল পেশাজীবীরা এ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ মনে করছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া ঐতিহ্যের প্রতি অসংগতিপূর্ণ হতে পারে। অন্যদিকে, অনেকেই এই পদক্ষেপকে একটি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন যা স্থানীয় পরিচিতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মনে করেন, জেলাভিত্তিক নামকরণের মাধ্যমে এসব মেডিকেল কলেজের পরিচিতি ও গুরুত্ব আরও বাড়বে। তবে, কিছু শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেছেন যে, ব্যক্তিনামের সাথে মেডিকেল কলেজের দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য অটুট রাখা কি আরও উপযুক্ত হত কিনা।


আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ এবং উদাহরণ

বিশ্বের অনেক দেশে মেডিকেল কলেজের নাম স্থানীয় এলাকার নাম অনুযায়ী নামকরণ করা হয়, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বাড়াতে সহায়ক হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ স্থানীয় নাম অনুসারে পরিচিত হয়।

এই উদ্যোগ বাংলাদেশে স্থানীয় স্বকীয়তা, স্বেচ্ছাবৃত্তি, এবং স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কাজকে আরও সমর্থন জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি পর্যায় থেকে এই ধরনের উদ্যোগ একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন নামকরণের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট জেলার জনগণ এবং শিক্ষার্থীরা নিজেদের আরও সম্পৃক্ত অনুভব করবেন।

এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থানীয়তার প্রতি সরকারের অঙ্গীকার প্রকাশিত হয়েছে। জনসাধারণ এবং শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এই যে, এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় আরও উন্নতি সাধন করবে এবং ভবিষ্যতে একটি উন্নত, সুস্থ বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web