আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন
দেশের সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফের ঘোষণা
আজ, রবিবার (৩ নভেম্বর), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নবনির্বাচিত মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ জানিয়েছেন, দেশের সব সিটি করপোরেশনে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে।
উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ বলেন, “দেশের সব সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। নতুন মেয়রের সময়সীমা আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে, এবং তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।” এই ঘোষণা সিটি করপোরেশনগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একজন পূর্ণাঙ্গ প্রশাসকের নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গতি আসবে এবং নাগরিক সুবিধাগুলো আরও সুসংগঠিত ও নিয়মিতভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে করপোরেশনগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের নতুন মেয়রের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আরিফ বলেন, “যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, সেই বিপ্লবের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে নতুন মেয়রকে। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণে তাকে সচেষ্ট থাকতে হবে।” উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন যে, চট্টগ্রামকে একটি গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা সফল হবে এবং এতে নগরবাসী আরও সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব নগর জীবনযাপন করতে পারবে।
চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক, সবুজ, ও পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবেশ সুরক্ষা এবং পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, বায়ু দূষণ হ্রাস, সবুজায়ন, এবং যানজট কমানো ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনকে সক্রিয় থাকতে হবে।
আরো পড়ুন- ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষ: জেলেদের চোখে নতুন স্বপ্ন
দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর প্রশাসকরা মূলত নগর ব্যবস্থাপনায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নগরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসকের ভূমিকা অপরিসীম। পূর্ণাঙ্গ প্রশাসকের দায়িত্বে থাকলে সিটি করপোরেশনগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা আসবে এবং নাগরিক সেবা আরও সহজলভ্য ও ত্বরান্বিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক শক্তিকে আরও কার্যকর করে তুলবে। ফলে উন্নয়ন কাজগুলোর যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এবং নাগরিক সেবা উন্নয়নে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
এ সময় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ বলেন, “ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।” তিনি বলেন, “নগরবাসীকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।”
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যেমন, পানির পাত্রে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া, মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রতিদিনের জীবনে সচেতনতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে করপোরেশন কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করছে।
সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগে দেশের নগর ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উন্নতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, প্রশাসকরা নগরীর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তার দ্রুত সমাধানে ভূমিকা রাখেন। পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগের ফলে নগরীর প্রত্যেকটি কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হবে এবং জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
পাশাপাশি প্রশাসকরা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবেন, যা নগরের বিভিন্ন অবকাঠামো এবং নাগরিক সুবিধা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। জলাবদ্ধতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক সমস্যা এবং পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যাগুলো আরও কার্যকরভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে।
নগরীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রশাসকের যথাযথ নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা ছোট-বড় ব্যবসা, শিল্প, বাজার ইত্যাদির উন্নয়নে তারা কাজ করবেন। প্রশাসকরা নগরীর ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও সুশৃঙ্খল রাখতে সচেষ্ট থাকবেন।
সামাজিকভাবে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবকাঠামো এবং সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর তদারকি এবং পরিচালনায় প্রশাসকরা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং সামজিকভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নগরীর সার্বিক পরিকল্পনায় প্রশাসকের গুরুত্ব অপরিসীম।
সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, স্মার্ট সিটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সেন্সর এবং ক্যামেরা স্থাপন, নাগরিক তথ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অটোমেশনের ব্যবহার প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সাহায্যে সিটি করপোরেশনগুলোকে আরও আধুনিক করা সম্ভব হবে।
প্রশাসকরা এসব প্রযুক্তিগত উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনায় সমন্বয় সাধন করবেন এবং উন্নয়নের ধারা বজায় রাখবেন। সরকারি এবং বেসরকারি অংশীদারিত্বে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে আরও সুসংগঠিত ও দ্রুত বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে।
সরকার ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে অংশীদারিত্ব নগর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে এই অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় হবে। প্রশাসকের নেতৃত্বে সিটি করপোরেশনগুলো আরও সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারবে। সরকারের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনগুলোতে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি পাবে এবং নগরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজ হবে।
নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চালু রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে, পরিচ্ছন্নতা, সুষ্ঠু পানীয় ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষার উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা তৈরিতে সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রশাসকদের সক্রিয়তা এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করার মনোভাব নগরীর উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নতুন প্রশাসকরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিটি করপোরেশনগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে। সরকারের সহযোগিতায় নাগরিকদের সেবা উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় তাদের বিশেষ অবদান থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্ত নগর উন্নয়ন এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রশাসকরা নগরীর সার্বিক উন্নয়ন, নাগরিক সেবা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বজায় রেখে নাগরিকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ নগর জীবনযাপনের পরিবেশ তৈরি করতে সচেষ্ট থাকবেন।
Leave a Reply