আজ বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র কারণে বাংলাদেশের ১৪টি উপকূলীয় জেলায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে অগ্রসর হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতেও অনুভূত হবে। ফলে, উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা প্রস্তুত রয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ এখনো বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং তা পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে মধ্যরাতে ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে, এর প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতেও বেশ তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এটি মূলত একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়, যার প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ইতোমধ্যে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে মূল উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির কারণে উপকূলীয় এলাকা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোতে ২-৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে, যা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি হতে পারে।
এই দুর্যোগের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাগুলোতে। এছাড়াও কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। ফলে, এই এলাকাগুলোর মানুষদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিশেষভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে সমুদ্রগামী নৌযান এবং মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সমুদ্রযাত্রা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র কারণে যে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসন থেকে স্থানীয় মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্য কার্যক্রম শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে, এই জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না, কারণ এটি ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের ওপর নির্ভর করছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় মিটিং করেছে। তাছাড়া, সিভিল ডিফেন্স, কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একই সাথে, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন– সিন্ডিকেট ভাঙতে ‘ন্যায্যমূল্যে’ সবজি বিক্রি- সাধারণ মানুষের স্বস্তি
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয়, তবে সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে, যেসব এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে, সেই এলাকার মানুষদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় নতুন কিছু নয়। এর আগেও ‘সিডর’, ‘আইলা’, ‘ফণী’ ইত্যাদি বড় ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। তবে, প্রতিবারই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ও তীব্র ঝড়ো হাওয়া অনেকসময় কৃষি, মৎস্য, এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে, এখনকার উন্নত আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থার কারণে মানুষ আগেভাগেই সতর্ক হয়ে থাকতে পারে এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ সরকার উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রায়শই দুর্যোগকালীন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা হয় এবং সেখানে খাবার, পানি এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। এই ধরনের দুর্যোগের সময়ে সাধারণ মানুষ যেন ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, সেই লক্ষ্যে প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র ক্ষেত্রেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্কভাবে কাজ করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আপডেট দিচ্ছে। এর পাশাপাশি, সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং জনগণকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ায় এখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য একটি জাতীয় প্রস্তুতি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এই পরিস্থিতিতে, ‘দানা’ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাস এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় মানুষ আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলার এই প্রক্রিয়ায় সবাইকে সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
Leave a Reply